অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী
অনিরুদ্ধ চক্রবর্তী ''আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১-এ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি!''
এ বিষয়ে মনে রাখা ভাল যে, মোমো বলতে এই অধম স্টিমড মোমোই বোঝে। আর তার মধ্যেও ভেজিটেবল মোমো দেখলে বলে ‘সাইডে বোসো’। মৌলবাদের অভিযোগ উঠতে বাধ্য। সে টুকু রিস্ক নিয়েও বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, মাংসের পুর ছাড়া মোমো হল মিছিল বাদ দিয়ে কলকাতা বা হ্যামলেটকে বাদ দিয়ে ডেনমার্কের রাজপুত্র; আর তেলেভাজা-রোল-প্রিয় বাঙালির হাতে পড়ে সেদ্ধ মোমোর ডালডা-লাঞ্ছিত চেহারা মেনে নেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
বৃহত্ জীবনের কাজের কথাও বলছি না, রোজকার জীবনের ছোট খাটো অভ্যাসেও আমরা দায়সারা, শৃঙ্খলাহীন।
বিদ্রোহী সেনাদের হাতে ধরা পড়ার পরেও কীভাবে মৃত্যু হল মুয়াম্মর গদ্দাফির? এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইন কী মানা হয়নি? ইতিমধ্যেই এ নিয়ে অস্বস্তিতে ন্যাটো কর্তারা।
দৃশ্য-১: ২রা এপ্রিল, এস এস কে এম হাসপাতাল সংলগ্ন হরিশ মুখার্জি রোড। ২৮ বছর পর বিশ্বজয় করেছে ধোনির ভারত। গোটা শহর নেমে এসেছে পথে।
মধ্য-প্রাচ্যের শোয়ারমা বা মেক্সিকোর কসিডিয়ার মতো রুটিতে মাংস পুরে, চিজ বা হুমস দিয়ে বেক করে খাবার চল ছিল অনেক আগে থেকেই। কিন্তু আমার চিরপরিচিত রোলের সঙ্গে এই খাবারের গুরুত্বপূর্ণ তফাতটা হয়ে গেল স্বাদে।
অবিরাম বৃষ্টি। চরাচর ঝেঁপে আসা বৃষ্টির ধারাপাতে আশ্রয় খোঁজে সবাই। শুধু উল্লাসে মাতে এক দামাল কিশোর। আনখশির ধারাস্নানে সিক্ত হয়ে বৃষ্টির আলপনা-আঁকা দরাজ উঠোনে সে ভাসায় কাগজের ডিঙা। চলকে ওঠে জল। বৃষ্টিকণায়-কণায় ভাসতে থাকে রামধনু-স্বপ্নেরা।
দশমীর সকালে কম্পিউটার খুলেই গুগলের হোম পেজে লেখাটা দেখা গেল: স্টিভ জোবস, ১৯৫৫-২০১১। জোবস বলেছিলেন, মৃত্যু সম্ভবত জীবনের শ্রেষ্ঠ উদ্ভাবন। একজন উদ্ভাবক তথা শিল্পপতির পক্ষে এটাই বিরল সম্মানের যে তাঁর মৃ্ত্যুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক শ্রদ্ধা জানালেন। কিন্তু তার চেয়ে আমাদের কাছে বেশি উল্লেখযোগ্য মনে হয়েছে গুগল, মাইক্রোসফট, এমনকি অ্যাপলের সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বী সামসুং যেভাবে স্টিভ জোবসকে বিদায়ী প্রণাম জানিয়েছে সেটা।
জীবন শাশ্বত, আঁধারও। তবু, আঁধার একমাত্র সত্য নয়। জীবন আছে বলেই তো আঁধারের এমন মহিমা!
যেমন চ্যাপলিন। তাঁর নির্মাণের আপাত হাসি হুল্লোড়ের নিচ দিয়ে তির তির বয়ে চলে চোখের জল। ঠিক তেমনই একটি কবিতা তার আপাত অন্ধকার চিত্রকল্পের নিচ দিয়ে বয়ে চলা স্বপ্ন পৃথিবীর ইশারায় আমাকে এই উত্সবের দিনগুলিতে আক্রান্ত করে।এই আক্রমণ গত প্রায় বিশ বছর ধরেই আমার এক অর্জন। সদ্য শুরু হয়েছে আমাদের ওয়েবযাত্রা। এই মওকায় আমার ওই আক্রান্ত ইন্দ্রিয়টিকে চাইছি ভাগ করে নিতে।
এসে গেল আরও একটা পুজো। সেজে উঠছে প্রতিটি মণ্ডপ। পাড়ায় পাড়ায় ব্যস্ততা। নিদ্রাহীন কুমোরটুলি। আবারও একটা পুজোয় মেতে উঠতে তৈরি হচ্ছে বাঙালি। কিন্তু সত্যিই কি আমরা ততটা মেতে উঠতে পারি? লাগামহীন আনন্দে ভাসিয়ে দিতে পারি নিজেকে? প্রশ্নটা এই জন্য যে আমরা কি এই চার-পাঁচটা দিনকে বাকি দিনগুলি থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারি ? আমাদের প্রত্যেকের জীবনই তো গতকালের সঙ্গে আজ, আজকের সঙ্গে আগামিকাল অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
মার্কেট বললে, এমনকী বাংলায় বাজার বললেও অনেকেই এখন বোঝেন এবং বোঝাতে চান বিশেষ একটা বাজার: শেয়ার বাজার। শেয়ার বাজারে মাত্র দুই-আড়াই শতাংশ ভারতীয় সরাসরি কারবার করেন। শেয়ারের দামের ওঠাপড়ার ঝুঁকি যাঁরা নিতে চান না, তাঁদেরও অনেকে কিন্তু এখন বাধ্য হচ্ছেন কিছুটা সেই অনিশ্চয়তার দায় বহন করতে। নানা ধরনের সঞ্চয়ের একাংশ এখন শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হয়। এমনকী, সর্বসাধারণের জন্য ভারত সরকারের যে পেনশন প্রকল্প (এন পি এস) আছে, তাতেও সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সঞ্চয় ইকুইটি বা শেয়ারে রাখার সংস্থান আছে। শেয়ার বাজারে উত্থান-পতন দুইই আছে। পতনটা কষ্টকর। বিশেষ করে পেনশনভোগীদের জন্য।
হলুদ বনে নিশ্চয়ই নাকছাবি হারিয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু জানা গেল, তবু আমাদের ভারতীয়দের সুখ নেইকো মনে। গোটা পৃথিবী জুড়ে টুইটারজগত্ যাঁদের বিচরণভূমি, তাঁদের টুইটের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয়রা অনেকটাই কম সুখী। অন্তত টুইটে সেই মনটাই ফুটে উঠেছে। একটু থমকে গেলাম খবরটা পড়ে। তেমন খুশি নই কেন আমরা?
চালু হয়ে গেল চব্বিশ ঘণ্টার ওয়েবসাইট। এখন খবরের জন্য শুধু আর টিভির পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না আমাদের। খবর পৌঁছে গেল একেবারে হাতের কাছে। মাউসের একটা ক্লিকে খুলে যাবে দেশদুনিয়ার খবরের দিগন্ত।
কথাটার মধ্যে বাস্তবতা যেমন আছে, বিস্তৃতিও আছে তেমনটাই।
শিউলিগন্ধ টের পাবার আগেই কাগজ-কালির গন্ধে বাতাস ম-ম। বাঙালির সাহিত্য চর্চার এটাই বোধহয় আদর্শ সময়! শারদ সাহিত্যের বাজারকে এই সময় কেউ কেউ আদর্শ হিন্দু হোটেল হিসেবেও বলতে পারেন।