সুখ নেইকো মনে
হলুদ বনে নিশ্চয়ই নাকছাবি হারিয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু জানা গেল, তবু আমাদের ভারতীয়দের সুখ নেইকো মনে। গোটা পৃথিবী জুড়ে টুইটারজগত্ যাঁদের বিচরণভূমি, তাঁদের টুইটের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয়রা অনেকটাই কম সুখী। অন্তত টুইটে সেই মনটাই ফুটে উঠেছে। একটু থমকে গেলাম খবরটা পড়ে। তেমন খুশি নই কেন আমরা?
হলুদ বনে নিশ্চয়ই নাকছাবি হারিয়ে যাচ্ছে না, কিন্তু জানা গেল, তবু আমাদের ভারতীয়দের সুখ নেইকো মনে। গোটা পৃথিবী জুড়ে টুইটারজগত্ যাঁদের বিচরণভূমি, তাঁদের টুইটের ওপর
সমীক্ষা চালিয়ে দেখা যাচ্ছে, ভারতীয়রা অনেকটাই কম সুখী। অন্তত টুইটে সেই মনটাই ফুটে উঠেছে। একটু থমকে গেলাম খবরটা পড়ে। তেমন খুশি নই কেন আমরা?
আনন্দ কিসে হয়? এই যে এখন আকাশ-বাতাস জুড়ে পুজো পুজো ভাব, ভোরে শিউলির গন্ধে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের আনাগোনা, শপিং মলে হাতিবাগানে গড়িয়াহাটে ব্যাগভর্তি পুজোর
বাজার করা সুখী সুখী মুখ, তবু বলব আনন্দের কমতির অবকাশ আছে?
নেই কি? এই যে পুজো পুজো বলছি, বন্যার জল সবে সরেছে যে পরিবারের দাওয়া থেকে, তাঁর কাছেও কি একই সুখে দাঁড়িয়ে আছে শরত্ সকাল? মেয়ের গায়ে নতুন জামাটা তুলে
দিতে পারলেন না দারিদ্রপীড়িত যে অসহায় বাবা-মা, তাঁরা আনন্দে আছেন তো? এ বেলা আধপেটা খাবারটা পরিবারের পাঁচজনে ভাগ করে নেওয়ার মুহূর্তে ও বেলার খাবারটা হবে কী
ভাবে, এই ভাবনায় যাঁদের কেটে যায় একটার পর একটা ঋতু, তাঁদের সুখী বলব কি? এক অন্ধকার থেকে আর এক অন্ধকারের যাত্রায় ঘুম ভাঙে যে ভোরের, সেই ভোরকে শিউলিগন্ধী
বলব?
যদি না বলতে পারি, তবে আমি সুখী হই কেমন করে? এই দেশের, এই বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘরে ঘরে আমারই স্বজন, যাঁদের কাছে পুজোর কোনও গন্ধ নেই, ইদের দিনে একটু ভাল
খাবার সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারেন না যাঁরা, তাঁদের কান্নার চোখ দেখেছি আমি। তারপরেও আমি সুখী থাকব? আমাকে বলা হবে সুখী থাকো? অসহায় বোধ করি। হাতের উপর
হাত রাখতে চাই, সে কাজটাও সহজ নয়। তার পরেও আনন্দ-আহ্লাদ নিশ্চয়ই করি, যথেষ্টই করি, তবু বলি, খচখচ থেকে যায় কোথাও।
হে আমার স্বজন, তোমার দুঃখ ভাগ করে নিতে চাই। কিছুই পারি না। তবু জেনো, নিরানন্দ তোমার দিন-রাত আমাকে সুখী থাকতে দেয় না। তোমাকে ভুলতে পারলে আমি অসীম
আনন্দে গা ভাসাতে পারতাম। কিন্তু তোমাকে ভোলা সম্ভব নয়। তাহলে তো আমি ভুলে যাই নিজেকেই। আমি এক ভারতীয়, টুইটার জগতে গিয়ে সুখী মুখ দেখাবো কেমন করে?
পাখির শিসে সুখের সুর কি মানায় এই সময়ে?
তবু, এখানেই শেষ হতে দেব না আমরা এই সময়কে। আসুন ভাল থাকি, অন্তত থাকার চেষ্টা করি আমরা। সবাই মিলে বাঁচি একসঙ্গে। এই লক্ষ্যটাকে সামনে রেখেই, পুজো ভাল কাটান।
অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়