গুড সামারিটন!

দৃশ্য-১: ২রা এপ্রিল, এস এস কে এম হাসপাতাল সংলগ্ন হরিশ মুখার্জি রোড। ২৮ বছর পর বিশ্বজয় করেছে ধোনির ভারত। গোটা শহর নেমে এসেছে পথে।

Updated By: Oct 13, 2011, 09:14 PM IST

দৃশ্য-১: ২রা এপ্রিল, এস এস কে এম হাসপাতাল সংলগ্ন হরিশ মুখার্জি রোড। ২৮ বছর পর বিশ্বজয় করেছে ধোনির ভারত। গোটা শহর নেমে এসেছে পথে। রাস্তাজুড়ে চলছে সেলিব্রেশন। সার সার দাঁড়িয়ে মধ্যবিত্তের সস্তা বাহন থেকে বিলাসবহুল ইউএসভি। কিন্তু এই 'ম্যান-মেড' যানজটে বিরক্তি নেই কারও। টিম ইন্ডিয়ার নামে উঠছে জয়ধ্বনি। ভুভুজেলার দেশীয় সংস্করণে জোরালো ফুঁ এফোঁড়-ওফোঁড় করছে মধ্যরাতের বাতাস।

দৃশ্য-২: ৭ই অক্টোবর, চিত্তরঞ্জন ক্যান্সার হাসপাতাল লাগোয়া আশুতোষ মুখার্জি রোড। ক্যালেন্ডারের হিসাবে একাদশী হলেও শারোদত্‍সব তখনো পুরদমে। বিসর্জনমুখী প্রতিমা নিয়ে একের পর এক শোভাযাত্রা চলেছে ঘাটের পথে। জায়গায় জায়গায় থেকে চলছে তুমুল নাচগান। সঙ্গত দিতে তো রয়েইছে ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা এমনকী ব্যান্ডপার্টিও।

বিশ্বকাপ জয় বা শারোদত্‍সব। থোড় বড়ি খাড়া রোজনামচার মতো নিখাদ আনন্দ-উচ্ছ্বাসের দরজা খুলে দেয় আমাদের সামনে। মূল্যবৃদ্ধির চোখরাঙানি, সংসারে টানাটানি, কর্মক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা, পড়শির সঙ্গে সব বিবাদ সরিয়ে রেখে আমরা, আমআদমি উদ্বেল হই। আত্মহারা হয়ে মিশে যাই উত্‍সবের প্রবাহে। উত্‍সবমুখর অচেনা মুখের মাঝে খুঁজে নেই আত্মীয়তা। পথে নামা উচ্ছল জনতা যে আমারই স্বজন। হরিপদ কেরানি থেকে কর্পোরেট কর্তার এ এক আজব বেরাদরি। আর প্রশ্নটা জাগে এখানেই। ঠিক পাঁচিলের ওপারে যে জগত্‍ তার কথা কি মনে রাখছি আমরা? হাসপাতালের শয্যায় যাঁর শরীরের ক্রমশ অবনতি হচ্ছে আর তাঁর ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হতে থাকা লাবডুবে কান পেতে আশা-নিরাশায় দুলছেন যে পরিজনরা, তাঁরাও কি আমার স্বজন নয়?

মাত্র একটা আটফুট দেওয়ালের ব্যবধান কী করে ভুলিয়ে দেয় সেই বাস্তবতা? না, উত্‍সব বন্ধ রেখে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়ে উদ্বেগ-উত্‍কণ্ঠা ভাগ করে নিতে হবে এমন দায় আমাদের নেই। কিন্তু জীবন মৃত্যুর ওই সন্ধিক্ষণে যে নৈঃশব্দটুকু তাঁদের একান্ত প্রয়োজন তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্বও কি নেই? বিনা আমন্ত্রণে সহনাগরিকের উচ্ছ্বাসের শরিক হতে পারি যে আমি, আরেক সহনাগরিকের বিপদে সেই আমিই উদাসীন থাকি কী ভাবে? আমরা তো ভাবতে ভালবাসি, আমার শহর আলাদা! আমার শহর মানবিক! কিন্তু এই শহরেরই মৃত্যুপথযাত্রী সহনাগরিক আর তাঁদের উত্‍কণ্ঠিত অসহায় পরিজনদের বেমালুম ভুলে তাঁদেরই নাকের ডগায় উদ্দাম, চিত্‍কৃত 'ঝিংকাচিকা' কি আতসকাচের নিচে ফেলে না আমাদের মানবিকতা, বিবেচনাবোধকেই?

মৌপিয়া নন্দী

Tags:
.