মৃত্যুর আড়াই মাস পরে শেষকৃত্য শিনজো আবের! জানেন কেন?
৮ জুলাই সকালে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলার পর আবেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি মারা যান। ঘটনার সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নারা শহরে নির্বাচনের জন্য ভাষণ দিচ্ছিলেন। নারা শহরের ইয়ামাতোসাইদাইজি স্টেশনের কাছে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে জাপানের প্রাক্তন নৌবাহিনীর কর্মী আবেকে পেছন থেকে গুলি করেন।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মঙ্গলবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে অংশ নিতে বিশ্বের ২১৭টি দেশের প্রতিনিধিরা টোকিও পৌঁছেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও টোকিও পৌঁছে আবেকে শেষ বিদায় জানান। এটি বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বলে জানা গিয়েছে। ৮ জুলাই শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। অভিযুক্তকে ঘটনাস্থলেই গ্রেফতার করা হয়। এই অবস্থায়, সকলেই ভাবছেনন যে, যখন ৮ জুলাই মৃত্যু হয়েছে আবের, তখন তার শেষকৃত্য কেন আড়াই মাস পরে হচ্ছে? জাপানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া প্রক্রিয়াই বা কেমন?
শিনজোর প্রতি শ্রদ্ধা
আসলে, ৮ জুলাই, শিনজো আবেকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর ১৫ জুলাই বৌদ্ধ রীতি অনুযায়ী পরিবার তাকে দাহ করে। আজ যে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়েছে তা প্রতীকী। শ্রদ্ধা হিসেবে সেখানে আবের ছাই রাখা হয়। বিশ্বের ২১৭ দেশের প্রতিনিধিরা আবেকে শেষ বিদায় জানানোর জন্য এসেছেন। এই সময়ে, মানুষ আবে সম্পর্কে তাদের পুরানো স্মৃতি সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। এর জন্য জাপানে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভালো বন্ধু ছিলেন।
বৌদ্ধ ঐতিহ্য
জাপানের অধিকাংশ মানুষ বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুযায়ী মৃতদেহ দাহ করে। এই প্রথা অনুযায়ী, মৃত্যুর পর স্বজনরা মৃত ব্যক্তির ঠোঁটে জল লাগান। যাকে বলা হয় শেষ সময়ের জল। মৃত্যুর পরের দিন 'জাগো'-র একটি ঐতিহ্য রয়েছে। যেখানে পরিচিতরা মৃতদেহের শেষবার দেখার জন্য একত্রিত হন। এই সময়, স্মৃতিচারন করা হয়। পুরুষরা কালো স্যুট, সাদা শার্ট এবং কালো টাই পরে আসেন। একই সময় কালো পোশাক পরে আসেন মহিলারা। অনেক সময় কালো অথবা রুপালি রঙের খামে মৃতের স্বজনদের টাকাও দিয়ে থাকে মানুষ। বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুযায়ী মন্ত্রও পাঠ করা হয়।
হিন্দু ধর্মের মতো
এরপর হিন্দু ধর্মের মতোই মৃতদেহ আগুনে তুলে দেওয়া হয়। কফিনটি ধীরে ধীরে বৈদ্যুতিক শ্মশানের একটি চেম্বারে ঢোকানো হয়। এই সময় পরিবারের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকেন। কফিন চেম্বারে ঢোকানো হলে স্বজনরা বাড়ি ফিরে যান। দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর স্বজনদের আবার ডেকে মৃতের দেহাবশেষ তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। স্বজনরা চপস্টিক দিয়ে হাড় সংগ্রহ করে কলশে রাখেন। প্রথমে পায়ের হাড় এবং পরে মাথা রাখা হয় কলশে। হিন্দু প্রথা অনুযায়ী মৃত ব্যক্তির ছাই নদীতে বিসর্জন করা হয়। একই সময়ে, জাপানে একটি ভিন্ন ঐতিহ্য আছে। সেখানকার মানুষ পারিবারিক কবরে কলসে রাখা দেহাবশেষ কবর দেয়। অনেকে দেহাবশেষ সরাসরি কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে যায়, আবার অনেকে কয়েক দিনের জন্য তাদের বাড়িতে রাখে।
পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
ফুলদানিতে রাখা ছাই
জাপানে ছাই ফুলদানিতে রাখার প্রথাও রয়েছে। এর জন্য একটি সমাধি আকৃতির আলমারি তৈরি করা হয়। ছোট কবরের আকারের আলমারি তৈরি করা হয় যেখানে মানুষ ছাই রাখে। বিভিন্ন সময়ে পরিবারের সদস্যরাও এখানে এসে শ্রদ্ধা জানান।
৮ জুলাই সকালে জাপানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হামলার পর আবেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তিনি মারা যান। ঘটনার সময় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নারা শহরে নির্বাচনের জন্য ভাষণ দিচ্ছিলেন। নারা শহরের ইয়ামাতোসাইদাইজি স্টেশনের কাছে সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে জাপানের প্রাক্তন নৌবাহিনীর কর্মী আবেকে পেছন থেকে গুলি করেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর পিঠে গুলি করা হয়। তিন ঘণ্টা হাসপাতালে চিকিৎসা করা হলেও তাঁর প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়নি। অভিযুক্তের নাম তেতসুয়া ইয়ামাগামি। তার বয়স ৪১ বছর। তিনি নাড়া শহরের বাসিন্দা বলে জানা যায়।