পরিচয় 'মাদ্রাসা শিক্ষক', মিলল না আশ্রয়, চোখের জল বাঁধ মানল না
শিক্ষকদের অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মুসলিম বলেই তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদন- মাদ্রাসা হাই স্কুলের শিক্ষক। তাই তাঁদের গেস্ট হাউসে থাকতে দেওয়া হল না। গেস্ট হাউস কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মুসলিম শিক্ষক বলে আশেপাশের লোকজন আপত্তি জানিয়েছে। অসহিষ্ণুতার এই ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষকর অবাক ও একইসঙ্গে অপমানিত। পেশাগত কাজে মালদা থেকে ১০ জন মাদ্রাসা হাই স্কুলের শিক্ষক আসেন বিকাশ ভবনে। ভোরবেলা কলকাতায় চলে আসেন তাঁরা। বিশ্রাম নেওয়ার জন্য সল্টলেকের ডি এল থার্টি নাইন বাড়ির গেস্ট হাউসের তিনটি ঘর আগে থেকে বুকিং করেছিলেন তাঁরা। তা সত্ত্বেও সেই গেস্ট হাউসের ঘর থেকে তাঁদের বের করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
শিক্ষকদের অভিযোগ, মাদ্রাসার শিক্ষক এবং মুসলিম বলেই তাঁদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পূর্ব বিধান নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ১২০০ টাকা করে তিনটি রুম বুক করা ছিল সল্টলেকের ডি এল থার্টি নাইন বাড়িটির গেস্ট হাউসে। সেখানে সকালে ১০ জন স্কুল শিক্ষক এসে পৌঁছন মালদহ থেকে। রেজিস্টরের সই হওয়ার পর ঘর দেখাতে যাবার আগে তাঁদের বলা হয় এখানে জায়গা নেই। তাঁদের পাঠিয়ে দেয়া হয় সি এল 164 বাড়ির গেস্ট হাউস-এ। সেখানে ঘন্টা তিনেক বসিয়ে রাখার পর তাঁদেরকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ডি এল থার্টি নাইন এর এক কর্মী দেবু পইড়া বলেছেন, "আমাদের এখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। যা ঘটেছে সব সিএল 164 গেস্ট হাউসে।" সি এল 164 গেস্ট হাউসের কর্মকর্তা তন্ময় মুখার্জি বলেন, "আমার এখানে কোনো ঘটনা ঘটেনি। অন্য গেষ্ট হাউস পাঠিয়েছিল তিন ঘন্টা রাখার জন্য। তাঁদেরকে আমরা যে ঘরে সাময়িক ভাবে রাখি সেই ঘর আগে থেকে বুকিং করা ছিল। তাই দশটার সময় তাঁদেরকে চলে যেতে বলি। এর মধ্যে কোন ধর্মীয় বিষয় বা অন্য কিছুই নেই।"
জি ২৪ ঘন্টার ক্যামেরা বিকাশ ভবনের সামনে পৌঁছতেই দেখা যায় রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রায় ১০ জন স্কুল শিক্ষক। যার মধ্যে আটজনই প্রধান শিক্ষক। মালদহের কৃষ্ণপুর মাদ্রাসা শিক্ষা কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক সাদেক আলির অবসরের আর মাত্র এক বছর বাকি। চোখের জল মুছে তিনি বললেন, "শিক্ষক জীবনে এমন ঘটনার সম্মুখীন হইনি। কল্পনাতেও আসেনি যে এই দিন দেখতে হবে। আমার স্কুলের ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষক এবং কর্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের।"
মালদহের শ্রীরামপুর মাদ্রাসা শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলি বললেন, "আজকে যেভাবে অপমানিত হয়েছি তাতে অন্তরে আঘাত লেগেছে। একজন শিক্ষক হিসেবে এভাবে এই ঘটনা রাজ্যে ঘটতে পারে বলে ভাবনায় ছিল না।"
ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ থেকে পুলিসে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ দুটি গেষ্ট হাউসে পৌঁছে তথ্য সংগ্রহ করে।