পঞ্চাশ কথা
তিনকড়ি চক্রবর্ত্তী
পঞ্চাশ হবে না-
অফিসের ক্যান্টিনে খাবার পর একশ টাকার নোট হরি'দার দিকে এগিয়ে দিতেই, চন্দ্রানীকে করুণ স্বরে ক্যান্টিনের সর্বেসর্বা শ্রী হরির উক্তি ষোল হয়েছে, একশ টাকা না দিদি, পঞ্চাশ একটাও নেই, পঞ্চাশ হবে না। তার থেকে এই আপনাকে আমি চার টাকা দিচ্ছি, আপনি আমাকে কুড়ি টাকা দিয়ে দিন। চন্দ্রানী বরাবরই নিচু স্বরে কথা বলে, আজও তার ব্যাতিক্রম হল না হরিদা আমার কাছে কুড়ি টাকা থাকলে কি তোমায় বলতে হত, ঠিক আছে আমি টাকাটা খুচরো করে তোমায় দিয়ে দিচ্ছি।
একশ টাকার নোট ও হরির দেওয়া দু'টাকার দুটো কয়েন নিয়ে সোজা চলে আসল অফিসের ক্যাশিয়ার গোঁফওয়ালা রাশভারি জগদীশ তলাপাত্রের কাছে। জগদীশকে বলা মাত্রই উত্তর আসে চন্দ্রা তুমি পাঁচটা একশ চাও এখনই দিয়ে দিতে পারি, কিন্তু দুটো পঞ্চাশ আমার পক্ষে সম্ভব নয়, বলেই গোঁফে হাত বোলাতে লাগলেন। ফিরে এসে নিজের কাজে বসল চন্দ্রানী। অফিসে আসা থেকেই আজ কাজে মন বসছিল না ওর, কারণ আজ ওর মায়ের মৃত্যুদিন, বাবাকে ওর মনে নেই, মা হলেন ওর সব, সেই মা চলে গেলেন আজকের দিনে গত বছর। মৃত্যুর সময় প্রতিমা দেবীর বয়স হয়েছিল পঞ্চাশ বছর।
কাজের প্রয়োজনেই জোর করে কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল বাবা-মা হারা একমাত্র কন্যা, বেসরকারি কোম্পানির অস্থায়ী কর্মী চন্দ্রানী পুরোকায়স্থ। অফিস থেকে বেরিয়ে বাসে করে শিয়ালদহ ষ্টেশনে এসে শোনে আটটা পঞ্চাশের নৈহাটি লোকাল আজকের মতো বাতিল করা হয়েছে। অগত্যা পরবর্তী ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের লেডিস কম্পার্টমেন্টে তাকে উঠতে হবে। এত ভিড়ের ভেতরেও জনৈক এক মহিলা তার মোবাইলে পঞ্চাশ সালের আগে পিছে হারিয়ে যাওয়া প্রাণ খোলা গান চালিয়ে বসেছেন। সেই গান শুনতে শুনতে ন'টা পঞ্চাশ মিনিটে সোদপুর ষ্টেশনে গাড়ি থেকে আধ পঞ্চাশি চন্দ্রানী নেমে অটো স্ট্যান্ডে এসে দ্যাখে একটিই অটো, তাও ছেড়ে দিচ্ছে। এই স্ট্যান্ডের একটাই সমস্যা, না ভুল বললাম দু'টো সমস্যা- এক নম্বর যখন যাত্রী থাকে তখন গাড়ি থাকে না, দু নাম্বার যখন গাড়ি থাকে তখন যাত্রী থাকে না। চন্দ্রা বললো- দাদা আমি যাবো, চালকের উত্তর তাহলে উঠে বসুন। চন্দ্রা উঠে বসতেই সম্মিলনীগামী অটো চলতে শুরু করল। কিছুদুর যাবার পর চালকের ডান ওবং বাম পাশেও লোক বসল।
কবিরাজ মোড় আসবার আগেই চন্দ্রা চালকের উদ্দেশ্যে বললো, দাদা কবিরাজ মোড় বাঁধবেন, গাড়ি থামবার পর পয়সা দিতে গিয়ে চন্দ্রা দেখে তার কাছে দু'টাকার দুটো কয়েন। কিন্তু অটো ভাড়া চার টাকা পঞ্চাশ পয়সা, চার টাকা হাতে দিতেই চালকের প্রশ্ন-আর পঞ্চাশ পয়সা? নিচু স্বরে চন্দ্রার উক্তি নেই, গাড়ির ভেতর থেকে জনৈকের উক্তি চলো ভাই আমি দিয়ে দেবো। চন্দ্রা কিছু বলার আগেই অটো চলে গেল। চলে যাওয়ার পর চন্দ্রার মনে একটাই প্রশ্ন কে দিল পঞ্চাশ?