চিকচিক করে উঠল চোখ, আবেগপ্রবণ ইসরো প্রধানকে বুকে জড়িয়ে ধরে সান্ত্বনা মোদীর
আবেগে চোখের কোন যেন চিকচিক করে উঠল মোদীরও।
নিজস্ব প্রতিবেদন : বাধা এসেছে। তাই বলে থমকে যাবে না প্রচেষ্টা। গতকালের পর আজ আরও একবার ইসরোর কন্ট্রোল রুমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশে দাঁড়ালেন ইসরোর বিজ্ঞানীদের। ভাষণ শেষে বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময়ে তৈরি হল এক আবেগঘন মুহূর্ত। আবেগঘন ইসরো প্রধান ডঃ কে শিভানকে নিজের বুকে টেনে নিলেন মোদী। পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিলেন। আবেগে চোখের কোন যেন চিকচিক করে উঠল মোদীরও।
শনিবার সকালে ইসরোর ব্যাঙ্গালুরুর কন্ট্রোল রুমে তখন যেন থমথমে নিস্তব্ধতা। চন্দ্রযান-২-এর বিশাল কর্মযজ্ঞে এখান থেকেই সামিল হয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা। আজ সেখানেই চুপ করে দাঁড়িয়ে সকলে। পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী কাঁটায় কাঁটায় আটটায় ঢুকলেন প্রধানমন্ত্রী। কন্ট্রোল রুমের কাঁচের দরজা ঠেলে এগিয়ে এলেন। তাঁকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে এলেন ইসরোর কর্তারা।
#WATCH PM Narendra Modi hugged and consoled ISRO Chief K Sivan after he(Sivan) broke down. #Chandrayaan2 pic.twitter.com/R1d0C4LjAh
— ANI (@ANI) September 7, 2019
স্টেজে উঠে প্রথমেই, "ভারতমাতা কি জয়!" ডাক দিলেন মোদী। বিজ্ঞানীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আপনারা ভারত মাতার জন্য লড়েন, তাঁর জন্যই বাঁচেন। তাই দেশের মাথা উঁচু করতে নিজের পুরো জীবন দিয়ে দেন।" চন্দ্রযান-২ অভিযানের শেষ লগ্ন আশানুরূপ হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে সাহস জোগাতে বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়ালেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বললেন, "কাল আমি আপনাদের পরিস্থিতি বুঝতে পারছিলাম। তাই বেশিক্ষণ থাকিনি।" কিন্তু সকাল হতেই বিজ্ঞানীদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে আসেন তিনি। ভাষণের মাঝে পোডিয়াম চাপড়ে তিনি বলেন, "হয়ত আজ বাঁধা এসেছে। কিন্তু এতে আমাদের আত্মবিশ্বাস কমেনি। বরং বেড়েছে। আমরা থেমে যাচ্ছি না।" তিনি বলেন, "হয়তো একদিন সাহিত্যে বলা হবে, চাঁদের বুকেই ছুটে গিযেছে চন্দ্রযান।"
আরও পড়ুন: আবেগ লুকিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্নের ঘোষণা শিবনের; দেশ গর্বিত, কুর্নিশ নেটিজেনদের
এর পর দেশবাসীদের উদ্দেশ্যে মোদী বলেন, "সিস্টার্স অ্যান্ড ব্রাদার্স অফ ইন্ডিয়া, আজ আমরা সবাই একসঙ্গে জেগে ছিলাম। আমরা কাছাকাছি এসেছিলাম। আরও অনেক পথ যেতে হবে। আমরা গর্বিত ইসরোর বিজ্ঞানীদের নিয়ে।" আজকের ঘটনায় মনোবল না হারাতে অনুরোধ করেন তিনি। মোদী বলেন, "আরও অনেক সুযোগ আসবে সাফল্যের। 'দ্য বেস্ট ইজ ইয়েট টু কাম'। দেশবাসী আপনাদের সঙ্গে আছে।"
ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের পরিশ্রম ও দৃঢ়তার ভূয়সী প্রশংসা করলেন মোদী। তাঁদের আশ্বস্ত করে বললেন, "আপনারা সবসময়েই নিজেদের সেরাটা দিয়েছেন। ভবিষ্যতেও দেবেন। আপনারা মাখনে দাগ কাটেন না, পাথরে দাগ কাটেন। আপনারা যতটা সম্ভব কাছে গিয়েছেন। স্থির হোন। ভবিষ্যতের দিকে তাকান।"
ইসরোর বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের পরিবারেকেও শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানান মোদী। ভারতীয় সংস্কৃতি থেকে শিক্ষা নিতে বলেন মোদী। তিনি বলেন,"গত হাজার বছরে আমাদের অনেক বাঁধা এসেছে। কিন্তু আমরা থামিনি। আবার এগিয়ে গিয়েছি। সেই কারণেই আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের সভ্যতা।"
তিনি বলেন, "বিজ্ঞানে বিফলতা হয় না। প্রয়োগ আর প্রচেষ্টা হয়। প্রতিটি প্রচেষ্টা থেকে মেলে নতুন শিক্ষা। হয়তো আশানুরূপ হয়নি চন্দ্রযানের সফরের শেষ অংশ। কিন্তু নতুন কিছু শেখা গিয়েছে।"
বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করে তিনি বলেন, "আপনারাই প্রথম মঙ্গলগ্রহে প্রথম চেষ্টায় ভারতকে নিয়ে গিয়েছিলেন। চাঁদে জল থাকার মতো তথ্যও তুলে ধরেছেন। একটা বাঁধায় আপনাদের সাফল্যের উড়ান লক্ষ্যচ্যুত হবে না।" তিনি বলেন, "আমরা অমৃতের সন্তান। আমাদের অমরত্ব আছে। আমাদের কোনও বাঁধা নেই। লক্ষ্যে না পৌঁছনো পর্যন্ত আমরা থামব না।"
মোদীর ভাষণের মাঝে মাঝে হাততালিতে ভরে উঠছিল ইসরোর কন্ট্রোল রুম। ভাষণ শেষে পোডিয়াম থেকে নেমে বিজ্ঞানীদের দিকে এগিয়ে গেলেন মোদী। হাত বাড়িয়ে দিলেন বিজ্ঞানীদের দিকে। বিজ্ঞানীরাও একে একে হাত বাড়িয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। একে একে সকলকে অভিবাদন জানালেন তিনি। সকলের সঙ্গে করমর্দন করলেন। আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হল বেঙ্গালুরুর গুরুগম্ভীর কন্ট্রোল রুমে।
বের হওয়ার মুখে আবেগঘন মুখে মোদীর সঙ্গে কথা বলছিলেন ডঃ শিবন। শিবনকে নিজের বুকে টেনে নিলেন মোদী। পিঠ চাপড়ে সান্ত্বনা দিলেন। চশমা খুলে চোখ মুছতে দেখা গেল ইসরো প্রধানকে। চিকচিক করে উঠল যেন প্রধানমন্ত্রীর চোখও।