টিম আন্নাকে খোলা চ্যালেঞ্জ প্রধানমন্ত্রীর, ভিন্নমত হেগড়েও
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে `দুর্নীতিগ্রস্ত` মন্ত্রীদের তালিকায় রাখার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টিম আন্না থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে। অন্যদিকে মঙ্গলবার মায়ানমার থেকে দেশে ফেরার পথে নিজের বিমানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জানান, তাঁর বিরুদ্ধে টিম আন্নার তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন।
মতান্তর চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। এবার তা একেবারে প্রকাশ্যে এসে গেল। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে `দুর্নীতিগ্রস্ত` মন্ত্রীদের তালিকায় রাখার সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে টিম আন্না থেকে দূরত্ব তৈরি করলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সন্তোষ হেগড়ে। অন্যদিকে মঙ্গলবার মায়ানমার থেকে দেশে ফেরার পথে নিজের বিমানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং জানান, তাঁর বিরুদ্ধে টিম আন্নার তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ হলে রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নেবেন।
সাম্প্রতিককালে কর্নাটকের লোকাযুক্ত পদে থাকাকালীন বি এস ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে অবৈধ আকরিক লোহা উত্তোলন এবং জমি কেলঙ্কারির প্রামাণ্য অভিযোগ সামনে এনেছিলেন সন্তোষ হেগড়ে। পরিণামে মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল শিকারিপুরার লিঙ্গায়েত নেতাকে। গত শনিবার টিম আন্নার তরফে যে ভাবে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই মনমোহন সিং-প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ ১৫ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে তাতে যারপরনাই অসন্তুষ্ট সন্তোষ হেগড়ে। সেই সঙ্গে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাত্কারে এই প্রাক্তন বিচারপতির অভিযোগ, তাঁকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখেই প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি জানান, অরবিন্দ কেজরিওয়াল-প্রশান্ত ভূষণ-কিরণ বেদীরা। টিম আন্নার অভিযোগের সঙ্গে সহমত প্রকাশ না করলেও বিচারপতি হেগড়ে মনে করেন নিজেকে কলঙ্কমুক্ত প্রমাণ করার জন্য পুরো ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করানো উচিত ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দার।
২০০৬-০৯ কয়লামন্ত্রকের দায়িত্ব ছিল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং`য়ের হাতে। সিএজি রিপোর্ট তুলে ধরে সে সময় কয়লা ব্লকগুলির উত্তোলনের বরাতে অনিয়মের অভিযোগ এনে গত ২৬ মে ৭ রেসকোর্স রোডের বাসিন্দার বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানান আন্না-অনুগামীরা। আজ মায়ানমার থেকে ফেরার পথে প্রধানমন্ত্রী টিম আন্নার অভিযোগ নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন টিম আন্নার ওই মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক। প্রকৃত তথ্য যাচাই না করেই তাঁর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তাত্পর্যপূর্ণভাবে নিজের অনুগামীদের এই অভিযোগের বিরোধিতা করেছেন আন্না হাজারে নিজেও।
প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি টিম আন্নার তরফে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরমের বিরুদ্ধে, প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পদে থাকার সময় নিয়ম বহির্ভূত স্পেকট্রাম বণ্টনে মদত দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়। প্রথম ইউপিএ সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জমানায় ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য `স্করপিয়ন` ডুবোজাহাজ কেনার বরাত দেওয়ার সময় বিধি বহির্ভূতভাবে ৪ শতাংশ কমিশন দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়ে প্রশান্ত ভূষণদের দাবি, এ ব্যাপারে প্রামাণ্য নথিপত্র রয়েছে তাঁদের কাছে। যদিও টিম আন্নার এই দাবি মানতে চাননি প্রবীণ আইনজ্ঞ সন্তোষ হেগড়ে। টিম আন্নার নিশানায় থাকা অন্যান্য মন্ত্রীদের মধ্যে রয়েছেন, শরদ পাওয়ার(কৃষি), বিলাসরাও দেশমুখ(বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি), এস এম কৃষ্ণ(বিদেশ), কমলনাথ(নগরোন্নয়ন), প্রফুল পটেল(ভারী শিল্প), কপিল সিবাল(তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলি যোগাযোগ), সলমন খুরশিদ(আইন), জি কে ভাসন (জাহাজ), ফারুক আবদুল্লা (পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি), এম কে আলাগিরি (সার ও রসায়ন), সুশীলকুমার শিন্ডে(বিদ্যুত্) এবং বীরভদ্র সিং(ছোট ও ক্ষুদ্র শিল্প)। এদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই নানা দুর্নীতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে বলে টিম আন্নার দাবি।