বিক্ষোভের মুখে মাথানত, অবশেষে ডিকে রবি মৃত্যু কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ কর্নাটক সরকারের
তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়ে আইএএস অফিসার ডিকে রবিকুমারের হত্যাকাণ্ডে অবশেষে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কর্নাটক সরকার। গত সপ্তাহে নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় এই আইএএস অফিসারের মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে পুলিস আত্মহত্যা বললেও মানতে চাননি রবির পরিবার। তাঁরা খুনের অভিযোগ এনেছিলেন।
বেঙ্গালুরু: তুমুল বিক্ষোভের মুখে পড়ে আইএএস অফিসার ডিকে রবিকুমারের হত্যাকাণ্ডে অবশেষে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কর্নাটক সরকার। গত সপ্তাহে নিজের বাড়িতেই ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় এই আইএএস অফিসারের মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে এই ঘটনাকে পুলিস আত্মহত্যা বললেও মানতে চাননি রবির পরিবার। তাঁরা খুনের অভিযোগ এনেছিলেন।
কংগ্রেস সুপ্রিমো নিজে রবির স্ত্রীকে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছেন। তার আগে রবির মা সোনিয়া গান্ধীকে একটি খোলা চিঠি লেখেন, যেটি একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট নিজে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার সঙ্গে কথা বলে তাঁকে এই তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন। রবিবার, হাইকোর্ট থেকে সরকারকে এই তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশে নিষেধ করা হয়। এই রিপোর্টে রবির মৃত্যুকে 'অস্বাভাবিক' বলা হয়েছিল।
রাজ্যজুড়ে দাবি উঠেছিল সিবিআই তদন্তের। আবেদন জানানো হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কাছেও। তিন দিন অচল সংসদ। তবুও আইএএস অফিসার ডিকে রবির মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তে নারাজ ছিল কর্ণাটক সরকার। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কে জে জর্জ জানিয়ে দেন সরকারের সিদ্ধান্তে কোনও পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আমরা যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার পরিবর্তন হবে না।"
অন্যদিকে, লোকসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান কর্ণাটক সরকার যদি সিবিআই তদন্ত চায় তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার অবিলম্বে সিবিআইকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেবে। কর্নাটকের সমস্ত আইএএস অফিসাররা একযোগে এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। সিবিআই তদন্ত চাইছেন তাঁরাও।
রবির মৃত্যুতে এবিভিপি-র প্রতিবাদ হিংসাত্মক রূপ ধারণ করে। বিক্ষোভকারীদের আয়ত্তে আনতে পুলিস লাঠি চার্জ করে। সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন কর্নাটকের বিজেপি বিধায়করাও। বালি মাফিয়াদের লাগাতার হুমকি, রাজনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছিলেন কোলার জেলার আইএএস অফিসার ডিকে রবি। সেই ৩৫ বছরের রবির মৃতদেহই তাঁর সরকারি বাসভবন থেকে সোমবার সন্ধেবেলা উদ্ধার হয়। পুলিসের দাবি, রবি নাকি আত্মহত্যা করেছেন। যদিও সেই দাবি অস্বীকার করেছে রবির পরিবার।
বর্তমানে কর্ণাটকের অ্যাডিশনাল কমিশনার অফ কমার্শিয়াল ট্যাক্সেস (এনফোর্সমেন্ট)-এর দায়িত্বে ছিলেন ডিকে রবি। পুলিস কমিশনার এম এন রেড্ডি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ''প্রাথমিক তদন্তে মনে হচ্ছে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যাই করেছেন রবি।''
২০০৯ ব্যাচের আইপিএস অফিসার রবির প্রথম পোস্টিংই ছিল কোলারে। সেখানে কমার্শিয়াল ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টের অ্যাডিশনাল কমিশনারের পদে ছিলেন তিনি। পরে ডেপুটি কমিশনারের পদে পদোন্নতি হয় তাঁর। রেড্ডি জানিয়েছেন ''যদিও সোমবার সন্ধেতে রবির পরিবার ওনার মৃত্যুসংবাদ আমাদের জানায়, কিন্তু বেলা ১১টার পর যে কোনও সময় তিনি সম্ভবত আত্মহত্যা করেছেন। ওই সময় থেকেই ওনার সঙ্গে আর ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।''
রবির মৃত্যু রহস্য সমাধানে বেঙ্গালুরু পুলিস তিন সদস্যের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশান টিম (সিট) গঠন করেছে। লাঞ্চ পর্যন্ত অফিসে পৌছাননি জানতে পেরে তাঁর স্ত্রী লাগাতার রবিকে ফোন করতে থাকেন। কিন্তু ফোনের উত্তর মেলেনি।সোমবার দুপুর বেলা নাগাদ রবির অফিসের কয়েকজন আধিকারিক ওনার স্ত্রীর সঙ্গে রবির আবাসনে যান। ভিতর থেকে কোনও সারা না পেয়ে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের দরজা খোলেন তাঁর স্ত্রী। ঘরের মধ্যে ফ্যানের সঙ্গে রবির ঝুলন্ত দেহ দেখে বাকরহিত হয়ে পড়েন প্রত্যেকেই।
রবির মৃতদেহের পাশে কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি। অ্যাপার্টমেন্টের সিসিটিভি ফুটেজ ও রবির মোবাইল রেকর্ড খতিয়ে দেখছে রবি।
কোলারের ডেপুটি কমিশনার থাকার সময় বালি মাফিয়াদের সঙ্গে তীব্র বিরোধ বাঁধে এই আইএএস অফিসারের। মাফিয়াদের অত্যাচারে অতিষ্ট সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমত 'মাসিয়া' হয়ে ওঠেন তিনি। তাঁর বদলির প্রতিবাদে জেলায় স্বতঃস্ফূর্ত বনধ ঢাকেন এলাকাবাসী।