বয়স বিতর্ক: শীর্ষ আদালতের হস্তক্ষেপে সম্মানজনক নিষ্পত্তি
রাজপুত রেজিমেন্টের কুশলী প্যারা-কম্যান্ডো অফিসার হিসেবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে চমকপ্রদ জয়ের নজির রেখেছেন তিনি। নিজের বয়স বিতর্ক ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আইনি দ্বৈরথে নেমে কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডেই সম্মানজনক বোঝাপড়ার পথে হাঁটতে হল জেনারেল বিজয় কুমার সিং'কে।
রাজপুত রেজিমেন্টের কুশলী প্যারা-কম্যান্ডো অফিসার হিসেবে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনে চমকপ্রদ জয়ের নজির রেখেছেন তিনি। নিজের বয়স বিতর্ক ঘিরে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আইনি দ্বৈরথে নেমে কিন্তু দ্বিতীয় রাউন্ডেই সম্মানজনক বোঝাপড়ার পথে হাঁটতে হল জেনারেল বিজয় কুমার সিং'কে। সুপ্রিম কোর্টের 'পরামর্শে' এদিন মামলা প্রত্যাহার করলেন ভারতীয় সেনাপ্রধান।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানির সময় বিচারপতি আর এম লোঢা ও এইচ এল গোখেল'কে নিয়ে গঠিত সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ পুরো বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় কেন্দ্রকে। এদিন শীর্ষ আদালতের সেই পরামর্শ মেনেই সেনাপ্রধান ভি কে সিংয়ের বয়স-বিতর্ক নিয়ে পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেয় মনমোহন সরকার। আর সরকারের অবস্থান পরিবর্তনের পরই শীর্ষ আদালত কার্যত সেনাপ্রধানের 'বয়স কমানোর' দাবির যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তোলে। দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, জেনারেল সিংয়ের প্রকৃত জন্মতারিখ কী, সেটা বিচার্য বিযয় নয়। সরকারি দস্তাবেজে তাঁর নথিভুক্ত বয়স সংক্রান্ত তথ্য সঠিক কি না, তা খতিয়ে দেখাই আদালতের কাজ।
এর আগে শনিবার শীর্ষ আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহনবতী জানান গত ৩০ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জেনারেল ভি কে সিংয়ের বয়স সংক্রান্ত যে নির্দেশিকা জারি করা হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। অর্থাত্, ১৯৫০ সালের ১০ মে নয়, জেনারেল সিংয়ের জন্ম ১৯৫১ সালের ১০ মে বলেই কার্যত মেনে নেওয়ারই ইঙ্গিত দেয় কেন্দ্র। সরকারের এই 'অবস্থান' সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরই অবিলম্বে সেনাপ্রধানকে মামললা প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে বিচারপতি আর এম লোঢা ও বিচারপতি এইচ এল গোখেলের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, আবেদন প্রত্যাহার না করা হলে এ বিষয়ে রায় ঘোষণা করবে সুপ্রিম কোর্ট।
ইউপিএসসি-র পরীক্ষার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সেনাপ্রধানের জন্মতারিখ ১৯৫০ সালের ১০ মে। ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমির তথ্য এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের হিসেবও সে কথাই বলছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী সেনাপ্রধানের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরে। অর্থাত্ ২০১২ সালেই তাঁকে অবসর গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু জেনারেল ভি কে সিংহের দাবি, তাঁর জন্ম ১৯৫১ সালের ১০ মে। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের সমর্থনে রয়েছে, তাঁর ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষার সংশাপত্র। কিন্তু ইউপিএসসি এবং সেনাবাহিনীর নথিতে কেন সেনাপ্রধানের বয়স হিসেবে ১৯৫০ সালের ১০ মে উল্লিখিত হয়েছে, তা নিয়ে এদিন সরাসরি প্রশ্ন তোলে দুই বিচারপতির বেঞ্চ। সেই সঙ্গেই বুঝিয়ে দেয়, 'চিফ অফ আর্মি স্টাফ'-এর সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন আধিকারিকের কাছ থেকে সরকারের সিদ্ধান্তকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানানোর পদক্ষেপ আদৌ কাম্য নয়।
ভি কে সিংহের জন্ম ১৯৫০ সালেই হয়েছে বলে ২০১১ সালের ২১ জুলাই একটি নির্দেশ জারি করে সরকার। তার পরে নিয়মমাফিক প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে অভিযোগ জানান জেনারেল সিংহ। কিন্তু গত ৩০ ডিসেম্বর সেই আবেদন বাতিল করে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কাছে অভিযোগ জানিয়ে ফল না মেলায় সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন জেনারেল ভি কে সিং। গত ৩ ফেব্রুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানির দিন সেনাপ্রধানের আবেদন বাতিল করার প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তোলে বিচারপতি আর এম লোঢা ও এইচ এল গোখেলের বেঞ্চ। এর পরই আজ ৩০ ডিসেম্বরের নির্দেশিকা বাতিল করার কথা শীর্ষ আদালতকে জানায় কেন্দ্র। সরকারের এই সুর নরমের পর সেনাবাহিনীর ঐতিহ্য, সুনাম ও পেশাদারিত্ব রক্ষার জন্য দু'পক্ষেরই সম্মান রেখে সমস্যার নিষ্পত্তি করেছে শীর্ষ আদালত।