সরকারি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ উপাচার্যরা, কীভাবে রক্ষিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার? উঠছে প্রশ্ন

সরকারি অনুষ্ঠানে উপাচার্যরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কে কত বেশি প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে পারেন তার প্রতিযোগিতা! উপাচার্যরাই তো তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপের রাস্তা খুলে দিচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, এঁদের চেয়ারে রেখে  বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বজায় রাখা কি আদৌ সম্ভব? 

Updated By: Sep 5, 2015, 10:52 PM IST

ব্যুরো: সরকারি অনুষ্ঠানে উপাচার্যরা মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কে কত বেশি প্রশংসায় ভরিয়ে দিতে পারেন তার প্রতিযোগিতা! উপাচার্যরাই তো তা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে সরকারি হস্তক্ষেপের রাস্তা খুলে দিচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, এঁদের চেয়ারে রেখে  বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বজায় রাখা কি আদৌ সম্ভব? 

সুগত মারজিত সরাসরি বলেছেন আমি সরকারের লোক ক্ষমতায় এলে রাজনীতির হাত থেকে শিক্ষাঙ্গনের মুক্তি। বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলের ইশতাহারে ছিল এই প্রতিশ্রুতি। 

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যের কথাতেই স্পষ্ট, প্রতিশ্রুতির গঙ্গাযাত্রা। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার বস্তুটা যে সরকারের কাছে নেহাতই বায়বীয় একটা ব্যাপার, তা তো শিক্ষামন্ত্রীই বুঝিয়ে দিয়েছেন! কোনও রাখঢাক না করে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সরকার যখন টাকা দেয় তখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারি হস্তক্ষেপ হবেই। 

এতএব সরকার বাহাদুর কী চাইছে তা বুঝতে ভুল করছেন না উপাচার্যরাও। তাই তো শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে সুগত মারজিত, অনুরাধা লোহিয়ারা মুখ্যমন্ত্রীর বন্দনা গানে মুখর!

বাম আমলে শিক্ষায় অনিলায়নের অভিযোগ উঠেছে বারবার। তখন নাকি আলিমুদ্দিনের ইচ্ছে না হলে কেউ ভিসির চেয়ারে বসতে পারতেন না। 

আর এই আমলে? 
 
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্বর্তী উপাচার্য থাকার সময় অভিজিত চক্রবর্তী সটান গিয়ে হাজির হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে।  

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আগের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস শিক্ষক নিগ্রহের রিপোর্ট প্রথমেই জমা দেন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে। আচার্য রাজ্যপালের কাছে নয়। 

প্রশাসনিক বৈঠকে যাওয়াই হোক বা মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে নতমস্তকে অনুদান গ্রহণ।  প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়ার বিরুদ্ধে নিজের পদের অমার্যাদার অভিযোগ উঠেছে বারবার। 

রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা-গুলি চললেও পরের দিন নিজের প্রতিষ্ঠান ছেড়ে সরকারি শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে হাজির উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি। গণ্ডগোলের রিপোর্ট তিনিও পাঠিয়েছেন বিকাশ ভবনে!

আগে চলত রাজানুগ্রহে। এখন টাকা দেয় সরকার। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সব দেশে এ ভাবেই চলে। কিন্তু, দুনিয়ার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলে যেগুলি বিবেচিত তাদের স্বাধিকারে নাক গলায় না সে দেশের সরকার। আর সে জন্যই বোধহয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়কে বারবার আক্ষেপ করতে হয়, কেন বিশ্বের প্রথম দুশোটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ দেশের জায়গা নেই। আর পশ্চিমবঙ্গ তো দুর অস্ত! আছে আরও একটা প্রশ্ন।

সরকারের কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকারের কোনও মূল্য নেই। উপাচার্যরাও কি সরকারকে সন্তুষ্ট করার রাস্তায় না গিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বাধিকার নিয়ে আদৌ ভাবছেন?  

ওঁরা ছাত্রছাত্রীদের মেরুদণ্ড সোজা রেখে চলার কথা বলেন। শিক্ষক দিবসের সরকারি অনুষ্ঠানে কর্তাভজা উপাচার্যদের দেখে ছাত্রছাত্রীরা প্রশ্ন তুলছে, আপনাদের মেরুদণ্ড কোথায় স্যার?    

.