বাঙালির রোম্যান্টিসিজমের ইতি, বিদায় মহানায়িকা
সালটা ১৯৫২। সকলের অজান্তেই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়। ধনী ব্যবসায়ী আদিনাথ সেনের পুত্রবধূ রমা পা রেখেছিলেন অভিনয়ের জগতে। চলচ্চিত্রের পর্দায় তাঁর নাম সুচিত্রা। প্রথম ছবি শেষ কোথায় মুক্তি পায়নি। পরের বছরই মুক্তি পায় নির্মল দাসের ছবি সাড়ে চুয়াত্তর। বাঙালির হৃদয়ে পাকাপাকি ভাবে স্থান বিদায় মহানায়িকা
সালটা ১৯৫২। সকলের অজান্তেই বাংলা সিনেমার ইতিহাসে শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়। ধনী ব্যবসায়ী আদিনাথ সেনের পুত্রবধূ রমা পা রেখেছিলেন অভিনয়ের জগতে।
চলচ্চিত্রের পর্দায় তাঁর নাম সুচিত্রা। প্রথম ছবি শেষ কোথায় মুক্তি পায়নি। পরের বছরই মুক্তি পায় নির্মল দাসের ছবি সাড়ে চুয়াত্তর। বাঙালির হৃদয়ে পাকাপাকি ভাবে স্থান বিদায় মহানায়িকা
করে নিলেন সুচিত্রা। সাড়ে চুয়াত্তরেই শুরু হল আরেক অধ্যায়। এই ছবিতেই প্রথম জুটি বাঁধেন উত্তম-সুচিত্রা। বাকিটা ইতিহাস। সোনার অক্ষরে যা লেখা রয়েছে বাঙালির মনের মণিকোঠায়।
দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার সঙ্গে এসেছে ক্ষুধা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্বের মতো হাজারো সমস্যা। দেশভাগ পরবর্তী উদ্বাস্তু সময়ে জর্জরিত বাঙালি কোথায় যেন শান্তি খুঁজছিল। বাঙালি জীবনের সেই হারিয়ে যাওয়া সুরই সেলুলয়েডে নতুন করে বেঁধেছিলেন সুচিত্রা-উত্তম। পাশের বাড়ির ছেলে উত্তমের সঙ্গে স্বপ্নসুন্দরী সুচিত্রার ভালবাসার গল্পে বাঙালি খুঁজে পেয়েছিল অপরূপ এক জাদুকাঠি। অগ্নিপরীক্ষা, শাপমোচন, সবার উপরে, সাগরিকা, সেলুলয়েডের পর্দায় শুরু হয়ে গিয়েছিল বাঙালির স্বপ্নের উড়ান।
১৯৫৭। সুচিত্রা এলেন রমার ভূমিকায়। বিপরীতে উত্তম কুমার। ছবির নাম হারানো সুর। চিকিত্সক রামর সঙ্গে উত্তমের প্রেম বাঙালি জীবনে তৈরি করল এক নতুন মাইলস্টোন। এরপরই পথে হল দেরি, রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত, সূর্যতোড়ন, ইন্দ্রানী, বিপাশা। ম্যাটিনি আইডল উত্তম-সুচিত্রার সঙ্গে রূপকথার জগতে তখন বাঙালির অবাধ যাতায়াত। বদলে গেল ভালবাসার সংজ্ঞা। সপ্তপদীর রিনা ব্রাউন আর কৃষ্ণেন্দুর ভালবাসা বদলে দিল বাঙালির সমস্ত সাবেকি হিসেবনিকেশ। সৌজন্যে সেই উত্তম-সুচিত্রা।
তবে উত্তম ছাড়াও সুচিত্রা ছিলেন। সেখানেই জয় অভিনেত্রী সুচিত্রার। সেই ১৯৫৫ সালে হিন্দি ছবি দেবদাসে পারোর ভূমিকায় সুচিত্রা পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলেন দীলিপ কুমারের সঙ্গে। ঠিক চার বছর পর দীপ জ্বেলে যাই ছবিতে নার্স রাধার ভূমিকায় সকলের মন ভরিয়ে দিয়েছিলেন সুচিত্রা। প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মানও সুচিত্রার জীবনে এসেছিল উত্তমকে ছাড়াই। সাত পাকে বাঁধা ছবির জন্য ১৯৬৩ সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা অভিনেত্রীর শিরোপা পান সুচিত্রা সেন। এই বছরই বোধহয় অভিনেত্রী সুচিত্রার সেরা বছর। এই বছরই তৈরি হয় উত্তর ফাল্গুনী। পান্নাবাই আর সুপর্নার দ্বৈত চরিত্রে সুচিত্রা। ইন্দিরা গান্ধীর আদলে তৈরি আরতী দেবীর চরিত্রে গুলজারের প্রথম পছন্দ ছিল সুচিত্রা সেন। কথা রেখেছিলেন তিনি। তৈরি হয়েছিল আঁধি।
সুচিত্রা সেন তাঁর ২৫ বছরের অভিনেত্রী জীবনে কাজ করেছেন পঁয়ষট্টিরও বেশি ছবিতে। পেয়েছেন অসংখ্য সম্মান। সুচিত্রা সেন। বাঙালির সেরা স্বপ্ন। যে স্বপ্নের প্রতিটি ছত্রে ছড়িয়ে রয়েছে কিছু না পাওয়া বাঙালির সব পাওয়ার স্বাদ। যে স্বপ্নের প্রতিটি ছত্রে রয়েছে সাদা কালো জীবনের রঙিন হয়ে ওঠার কাহিনি। স্বপ্নে লুকিয়ে রয়েছে হাজার বছর পথ হেঁটে বনলতা সেনকে হঠাত্ খুঁজে পাওয়ার আনন্দ।