গুড়িয়া মৃত্যু রহস্যে তদন্তভার নিল সিআইডি, ডেথ সার্টিফিকেটে সইয়ের অভিযোগ অস্বীকার কাঞ্চনের

গুড়িয়া কাণ্ডে তদন্তের দায়িত্ব নিল সিআইডি। তদন্তে নেমে এবার এক চিকিত্সককে আটক করেছে পুলিস। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে আটক করা হয়েছে চিকিত্সক কাঞ্চন মণ্ডলকে। হুগলি জেলা পুলিস তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেরায় গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেটে সইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাঞ্চন। তার দাবি, গুড়িয়াকে সে চিনত না। ডেথ সার্টিফিকেটে তার সই জাল করা হয়েছে।

Updated By: Jul 15, 2012, 03:45 PM IST

গুড়িয়া কাণ্ডে তদন্তের দায়িত্ব নিল সিআইডি। শনিবার বিকেলে গুড়াপ থানায় পৌঁছে গিয়েছিল নির্দেশিকা। তাতে উল্লেখ করা হয়, থানা যেন গুড়িয়া কাণ্ডের কেস ডায়ারি এবং অন্যান্য রেকর্ড সিআইডির হাতে তুলে দেয়। রবিবার সিআইডির সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল গুড়াপ থানায় যান। দলের নেতৃত্বে ছিলেন হেড এএইচটিইউ সেল শর্বাণী ভট্টাচার্য। সিআইডির নির্দেশে খেজুরদহের হোমে মাটি খুঁড়ে তল্লাসি চালানো হয়। কাজে লাগানো হয় স্নিফার ডগ। যদিও তল্লাসিতে কিছু মেলেনি। তদন্তে নেমে এবার এক চিকিত্সককে আটক করেছে পুলিস। বাঁকুড়ার পাত্রসায়র থেকে আটক করা হয়েছে চিকিত্সক কাঞ্চন মণ্ডলকে। হুগলি জেলা পুলিস তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেরায় গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেটে সইয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছে কাঞ্চন। তার দাবি, গুড়িয়াকে সে চিনত না। ডেথ সার্টিফিকেটে তার সই জাল করা হয়েছে।
কাঞ্চন মণ্ডল এই দাবি করলেও তাঁর বয়ানে অসঙ্গতি রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিস। পুলিসের বক্তব্য,  শুধু গুড়িয়া নয়। ঝর্না সামন্তের ডেথ সার্টিফিকেটেও কাঞ্চন মণ্ডলের সই রয়েছে। কাঞ্চনের দাবি, তিনি ১৯৮৩ সালে আরজি কর থেকে ডাক্তারি পাস করেন। কিন্তু গুড়িয়া ও ঝর্নার ডেথ সার্টিফিকেটে তাঁর যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে, তা আলাদা। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিস। অসঙ্গতি রয়েছে জামালপুরের ঘটনাতেও। গত ৬ মে ঝর্না সামন্তর দেহ পুঁততে গিয়ে পুলিসের হাতে ধরা পড়েন হোমের লোকজন। পুলিস হোমের তিনজনকে থানায় নিয়ে যায়। ঝর্নার দেহের ময়নাতদন্ত করানো হয় ময়নাতদন্ত রিপোর্ট জানানো হয়, হৃদরোগে ঝর্নার মৃত্যু হয়েছে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে। এরপর পুলিস হোমের লোকেদের হাতে দেহ তুলে দেয়। কিন্তু, অভিযোগ, জামালপুর থানা এই গোটা ঘটনা নথিভুক্ত করেনি। গুড়িয়া কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত শ্যামল ঘোষ এখনও ফেরার। তার সন্ধানে হুগলির ভবানীপুর গ্রামের বাড়িতে তল্লাসি চালাচ্ছে পুলিস। শ্যামল পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়ে দিদির বাড়িতে রয়েছে খবর পেয়ে সেখানেও হানা দেয় পুলিস। কিন্তু পুলিস পৌঁছনোর আগেই পালিয়ে যায় শ্যামল। 
শ্যামলের গুড়াপ থানা এলাকার ভবানীপুর গ্রামে। সেখানে পুলিস মাঝেমাঝেই বাড়ি গিয়ে খবর নিচ্ছে। শনিবার পুলিসের কাছে খবর আসে, শ্যামল ওর দিদির বাড়িতে রয়েছে। দিদির বাড়ি পাণ্ডুয়া থানার সিমলাগড়। সিমলাগড়ে পুলিস হানা দেয়। পুলিসের দাবি, মোবাইলের টাওয়ারের লোকেট করেই তারা জানতে পারে শ্যামল দিদির বাড়ি। পুলিস পৌঁছনোর আগেই পালিয়ে যায়। দিদিকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস। গড়িয়া কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে হোমের সেক্রেটানি উদয় চাঁদ কুমার, গাড়ির চালক সানি, রঞ্জিত, হোমের কলের মিস্ত্রি সন্দীপ দাস, ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি শেখ নাজিমুদ্দিন, দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমের কোষাধ্যক্ষ অসীম মাইতি এবং হোমের দুই সদস্য জলধর সাধু খাঁ ও প্রভাস রঞ্জন ঘোষ। এদের মধ্যে ৩ জন আপাতত পুলিসি হেফাজতে রয়েছে।
গুড়িয়ার দেহের ময়নাতদন্তে মাথায় আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। ভিসেরা পরীক্ষার জন্য শরীরের যকৃত, ফুসফুস ও জরায়ুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শুক্রবার গুড়াপ থানার পুলিসের উপস্থিতিতেই এনআরএস হাসপাতালে গুড়িয়ার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। ইতিমধ্যেই গুড়িয়া মৃত্যু রহস্যে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ প্যাটেলের ডিভিশন বেঞ্চ ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট তলব করেছে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে। হাইকোর্টে ইতিমধ্যেই গুড়িয়ার মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন বাসবী রায়চৌধুরী নামের এক আইনজীবী। নিরপেক্ষ তদন্তের পাশাপাশি এ বিষয়ে পুলিসের ভূমিকা কী ছিল তার খোঁজ করা এবং যে চিকিত্সক গুড়িয়ার ডেথ সার্টিফিকেট দিয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধেও তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। সেইসঙ্গেই, রাজ্যে এরকম হোম কটি রয়েছে, সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তাদের লাইসেন্স আছে কি না, তার নজরদারিতে সরকারের কী ভূমিকা তা জানতে চাওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

 

.