Turkey-Syria Earthquakes: ভয়ংকর ভূমিকম্পের জেরে স্থানচ্যুত হয়েছে গোটা তুরস্ক দেশটিই! কোন দিকে কতটা সরেছে জানেন?
Turkey-Syria Earthquakes: ভূমিকম্পের ফলে আনাতোলিয়া চ্যুতি এবং আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে থাকা প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যুতিরেখাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুরস্ক তার আগের অবস্থান থেকে ১০ ফুট দূরে সরে গিয়েছে! ইটালির এক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞের দাবি, টেকটোনিক প্লেটগুলির নড়াচড়ার কারণে তুরস্ক প্রায় ২০ ফুট সরে গিয়েছে!
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: সিরিয়া-তুরস্কের ভয়াবহ ভূমিকম্প নিয়ে আগেই জানা গিয়েছিল ভূমিকম্পের কারণ ছিল আনাতোলিয়া চ্যুতি। এবার জানা গেল, ভূমিকম্পের ফলে ওই আনাতোলিয়া চ্যুতি এবং আরবীয় টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে থাকা প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যুতিরেখাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, এর ফলে তুরস্ক তার আগের অবস্থান থেকে ১০ ফুট দূরে সরে গিয়েছে! অন্তত এমনই দাবি করেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। ইটালির এক ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ আবার দাবি করেছেন, টেকটোনিক প্লেটগুলির নড়াচড়ার কারণে ১০ ফুট নয়, তুরস্ক প্রায় ২০ ফুট সরে গিয়েছে!
কোন দিকে সরে গিয়েছে তুরস্ক?
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, তুরস্ক পশ্চিম দিকে সরে গিয়েছে।
ভূবিজ্ঞানীরা বলছেন, ভূমিকম্পের যেরকম তীব্রতা ছিল তাতে প্লেটের অবস্থান বদলের সম্ভাবনা স্বাভাবিকই। মোটামুটি ৬.৫ থেকে ৬.৯ তীব্রতার ভূমিকম্পের ফলে ১ মিটারের মতো প্লেটগুলি সরে যায়। তবে এর থেকে বড় মাপের কোনও কম্পনে ১০-১৫ মিটার পর্যন্তও সরে যেতে পারে প্লেটগুলি। তাঁদের মতে, টেকটনিক প্লেটগুলি যেখানে একে অপরের সঙ্গে মেশে সেই চ্যুতিরেখায় কোনও সংঘর্ষের ফলে বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়।
তুরস্ক দেশটির বেশির ভাগটাই রয়েছে আনাতোলিয়া প্লেটের উপর। এর উত্তরে রয়েছে ইউরেশীয় প্লেট, দক্ষিণে আফ্রিকা প্লেট, পূর্বে আরবীয় প্লেট। ভূমিকম্পের ফলে দু’টি বড় চ্যুতিরেখা সৃষ্টি হয়েছে-- একটি পূর্ব আনাতোলিয়া, অন্যটি উত্তর আনাতোলিয়া। এ দু’টি চ্যুতিরেখা অত্যন্ত কম্পনপ্রবণ। আরবীয় প্লেট যখন উত্তর দিকে ইউরেশীয় প্লেটের দিকে সরে, তখন আনাতোলিয়া প্লেটের উপর চাপ বাড়ে এবং সেটি পশ্চিমে সরতে থাকে।
আরও পড়ুন: Ukraine: যুদ্ধের আবহে লাইব্রেরি থেকে ১ কোটি ৯০ লক্ষ বই সরিয়ে নিল ইউক্রেন! কেন জানেন?
এমনিতেই তুরস্ক বিশ্বের অন্যতম সক্রিয় ভূমিকম্প অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে। ১৯৯৯ সালে ৭.৪ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল এই এলাকা। এই ভূমিকম্প কয়েক দশকের মধ্যে তুরস্কে সব চেয়ে মারাত্মক আঘাত হানা এক ভূমিকম্প হিসেবে স্বীকৃত। সেই ভূমিকম্পে ইস্তাম্বুলে প্রায় ১,০০০-সহ ১৭,০০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘকাল ধরে সতর্ক করেছেন, মাত্র একটি বড় ভূমিকম্পই ইস্তাম্বুলকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারে। অথচ যথোচিত নিরাপত্তা-সতর্কতা ছাড়াই এখানে নির্মাণকাজের অনুমতি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এলাজিগে একটি ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এই ঘটনায় ৪০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেই বছরই অক্টোবরে, এজিয়ান সাগরে ৭.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এতে ১১৪ জন নিহত এবং ১,০০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছিলেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, ভারত-সহ প্রায় সমস্ত দেশ তুরস্ক-সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কের আদানা শহরে পৌঁছেছে ভারতের পাঠানো প্রথম দফার ত্রাণ। সঙ্গে পৌঁছেছে ভারতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর উদ্ধারকারী দল, বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর, চিকিৎসা সামগ্রী, ড্রিলিং মেশিন ইত্যাদি। সিরিয়াতেও গিয়েছে ভারতের ত্রাণসাহায্য। তুরস্কের দক্ষিণ প্রান্তে সিরিয়া সীমান্তের কাছে ঘটা পরপর তিনটি ভূমিকম্প কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে এই অঞ্চলকে। ৭.৮, ৭.৬ এবং ৬.০-- রিখটারে স্কেলে কম্পনের তীব্রতা ছিল এই রকমই। আজ, বুধবার সকালেও ফের কেঁপেছিল মাটি। রিখটার স্কেলে তার তীব্রতা ছিল ৫.৬। এ ছাড়াও আরও বেশ কিছু ছোটবড় ভূমিকম্প পরবর্তী কম্পন অনুভূত হয়েছে এই অঞ্চলে।