লিটল বয় – ফ্যাট ম্যানের মানব নিধনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ইয়ামাগুচি

কর্মসূত্রে তিন মাসের জন্য নাগাসাকি থেকে হিরোশিমায় এসেছিলেন সুতোমু ইয়ামাগুচি। সে সময় ইয়ামাগুচি ৩০ বছরের তরুণ। জাপানের খ্যাতনামা সংস্থা মিত্সুবিশি-তে কাজ করার সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। সে ভাবেই কয়েক দিনের জন্য হিরোশিমায় এসেছিলেন।

Updated By: Aug 6, 2018, 05:05 PM IST
লিটল বয় – ফ্যাট ম্যানের মানব নিধনের একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ইয়ামাগুচি

নিজস্ব প্রতিবেদন: কর্মসূত্রে তিন মাসের জন্য নাগাসাকি থেকে হিরোশিমায় এসেছিলেন সুতোমু ইয়ামাগুচি। সে সময় ইয়ামাগুচি ৩০ বছরের তরুণ। জাপানের খ্যাতনামা সংস্থা মিত্সুবিশি-তে কাজ করার সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয় তাঁকে। সে ভাবেই কয়েক দিনের জন্য হিরোশিমায় এসেছিলেন।

আরও পড়ুন- ওবামার মতো ট্রাম্পও কি উপস্থিত থাকবেন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে!

এমনিতে ১৯৪৫ সালের ৬ অগাস্টের সকাল আর পাঁচটা দিনের মতোই ছিল ঝলমলে। দিনের আলোর জোর বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হচ্ছিল জনজীবনও। দুই বন্ধু আকিরা এবং সাতো-কে নিয়ে এ দিন অফিসের পথে রওনা দেন ইয়ামাগুচি। মাঝপথেই হঠাত্ মনে পড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস (স্ট্যাম্প) নিয়ে বেরতে ভুলে গিয়েছেন তিনি। ফলে, ফের বাড়ির দিকে হাঁটা দেন। ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল ৮.১৫। হঠাতই বিকট সাইরেনে আকাশের দিকে চোখ গেল ইয়ামাগুচির। দেখতে পেলেন, বিমান থেকে কিছু একটা ছুড়ে ফেলা হচ্ছে নীচে। তবে কষ্টকল্পনাতেও তিনি ভাবতে পারেননি, ওটা আমেরিকার বোমারু বিমান এনোলা গে এবং যেটি নীচে ফেলা হল সেটি একটা পরমাণু বোমা। সারা বিশ্বে পরবর্তীকালে যে যে বোমা পরিচিত হল-‘লিটল বয়’ নামে। ইয়মাগুচি বলছেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিরোশিমা জাপানের বাণিজ্যক কেন্দ্র ছিল। আমার ওই সময় মনে হয়েছিল, এটি জাপানেরই বিমান।” পুরোটা হয়ত ভেবে উঠতে পারেননি ইয়ামাগুচি। সে সময় বোমা পড়ার স্থল থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। ঝোড়ো হাওয়ায় মুহূর্তের মধ্যে ছিটকে পড়েন ইয়ামাগুচি। অন্ধকার হয়ে আসে সবকিছু। শরীরের অনেকটা ঝলসে যায়। ইয়ামাগুচির কথায়, বেশ কিছু ক্ষণ মাটিতেই পড়েছিলেন তিনি।

হুঁশ ফিরতেই দুই বন্ধুর খোঁজ শুরু করেন ইয়ামাগুচি। বরাত জোরে তাঁরাও সেদিন বেঁচে গিয়েছিলেন। সেনার ক্যাম্পেই রাত কাটান তিন বন্ধু। তবে, ইয়ামাগুচি সিদ্ধান্ত নেন সকাল হলেই নিজের শহরে ফিরে যাবেন। সেই অনুযায়ী, পরের দিনই বাড়ি চলে আসেন। সেখানেই চিকিতসা করান ইয়ামাগুচি।

আরও পড়ুন- ‘খুবই ভালো ছেলে, ওর মগজধোলাই করা হয়েছিল’, ওসামা সম্পর্কে মন্তব্য মা আলিয়ার

দু’দিন পর ৯ অগাস্ট অফিসে যোগ দেন তিনি। হাত-পা, মুখে ব্যান্ডেজ করে অফিস আসেন। সেখানে হিমোশিমার ভয়াবহতার গল্প বলতে থাকেন সহকর্মীদের। কিন্তু, তখন কে ভেবেছিল যে তাঁর গল্পের পুনরাবৃত্তি হবে নিজের শহরেই। নাগাসাকিতে সকাল ১১ টা নাগাদ মার্কিন বোমারু বিমান বকস্কার ফেলল ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের পরমাণু বোমাটি। এ দিনও গ্রাউন্ড জিরো থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্বে ছিলেন ইয়ামাগুচি। ফের প্রত্যক্ষ করলেন ‘নরনিধন’। এ দিন হয়ত তাঁর বিশেষ ক্ষতি হয়নি। কিন্তু ক্ষতবিক্ষত হয়েছিল তাঁর হৃদয়।

আরও পড়ুন- ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসছে বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোন, অল্পের জন্য বাঁচলেন ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি

পরবর্তীকালে হিরোশিমা এবং নাগাসাকি বোমা নিক্ষেপের একমাত্র জীবন্ত প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে  সুতোমু ইয়ামাগুচিকে চিহ্নিত করে জাপান সরকার। পরমাণু বোমার বিকিরন তাঁকে হয়ত বেশি কাবু করতে পারেনি কিন্তু একটি কানে শ্রবণক্ষমতা হারিয়ে ছিলেন তিনি। ৯৩ বছর বয়সে ২০১০ সালে ৪ জানুয়ারি মৃত্যু হয় ইয়ামাগুচির। এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেছিলেন, “দুই শহরের যে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমি বহন করে চলেছি, তা আমার মৃত্যুর পরও আগামী প্রজন্ম বহন করে নিয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস, এই অভিজ্ঞতা তাদেরও শিহরিত করবে।”

.