আয়লান একা নয়, রোজ মরছে শয়ে শয়ে সিরিয়ান শিশু

তুরস্কের সমুদ্র তীরে মুখ থুবড়ে পরে থাকা ছোট্ট নিথর দেহ কাঁপিয়ে দিয়েছে মানবসভ্যতার ভিতটাই। এত দিন পর্যন্ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দীর্ণ, বাস্তু হারা মানুষদের কথা যারা দেখেও নিজের সুখী গৃহকোণের আড়ালে এড়িয়ে গেছেন, আজ তাদের ঘুণ ধরা মনন-মস্তিষ্কেরো ঝড় তুলেছে ওই একটা দেহ। এই এত্ত বড় পৃথিবীতে বড়রা সীমান্ত নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে কেউই এক ফালি ছাদের জোগান দিতে পারেনি ৩ বছরের আয়লান কুর্দিকে। বদলে দিয়েছে কবরের অন্ধকার। 

Updated By: Sep 5, 2015, 06:26 PM IST
আয়লান একা নয়, রোজ মরছে শয়ে শয়ে সিরিয়ান শিশু

ওয়েব ডেস্ক: তুরস্কের সমুদ্র তীরে মুখ থুবড়ে পরে থাকা ছোট্ট নিথর দেহ কাঁপিয়ে দিয়েছে মানবসভ্যতার ভিতটাই। এত দিন পর্যন্ত সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে দীর্ণ, বাস্তু হারা মানুষদের কথা যারা দেখেও নিজের সুখী গৃহকোণের আড়ালে এড়িয়ে গেছেন, আজ তাদের ঘুণ ধরা মনন-মস্তিষ্কেরো ঝড় তুলেছে ওই একটা দেহ। এই এত্ত বড় পৃথিবীতে বড়রা সীমান্ত নিয়ে এতই ব্যস্ত ছিলেন যে কেউই এক ফালি ছাদের জোগান দিতে পারেনি ৩ বছরের আয়লান কুর্দিকে। বদলে দিয়েছে কবরের অন্ধকার। 

আয়লান তার জীবন দিয়ে বোধহয় একরাশ লজ্জা দিয়ে গেল মানবিকতার ভণ্ড দম্ভকে। হয়ত কিছুক্ষণের জন্যও হুঁশ ফিরল সভ্য সমাজের। হয়ত আপাত আশ্রয় খুঁজে পেলেন অন্তত হাজার খানেক উদ্বাস্তু মানুষ। আরামের কোলবালিশ জাপ্টে ধরে ঘুমাতে থাকা পৃথিবীর সচেতনতা কিছু সময়ের জন্য হলেও জেগে উঠল। কিন্তু আয়লানের মৃত্যু কি একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা? বাস্তব কিন্তু বলছে অন্য কথা। যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ার রোজ মরছে শিশুরা। রোজ অন্ধকারের গহ্বরে তলিয়ে যাচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম।

২০১১ সালে আভ্যন্তরীণ অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকে সরকারি হিসেব বলছে সে দেশে প্রাণ হারিয়ে অন্তত ২৩২ জন ৩ বছর বয়সী শিশু। সম্ভবত বাস্তবে এই সংখ্যাটা আরও অনেক অনেক বেশি। 

যে গ্রুপটি এই তথ্যানুসন্ধানে নিযুক্ত তাদের দাবি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মৃত শিশুদের বয়স জানা যায় না। ফলে বয়স ভিত্তিক রেকর্ড রাখা অসম্ভব হয়ে পরে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশুদের মৃত্যর রেকর্ডই রাখা হয় না। ফলে আসলে কত শিশু মারা গেছে এখনও পর্যন্ত সে বিষয়ে কিছুই যথাযথ জানা জায়নি।

শিশুদের মৃত্যুর কারণ একটু খতিয়ে দেখলে হাড় হিম হয়ে যায়। ভয়ানক নৃশংসতার ছবি প্রকট হয়। অর্ধেক শিশু মারা গেছে কামানের গোলায়। গুলিতে বা বোমারু বিমানের হামলা প্রাণ কেড়েছে অনেক জনের। অনেককে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। 

নথি অনুযায়ী ২০১১ সালের পর থেকে ১ বছরেরও কম বয়সী ২৬৫ জন শিশু মারা গেছে সিরিয়ায়। ১ বছরের ১৮৪জন, দু বছর বয়সের ১৫৭, ৪ বছর বয়সের ২০২ জন, ৫ বছর বয়সের ২৪৪জন, ছ'বছর বয়সের ১৮৯ জন, ৭ বছরের ১৮০, ৮ বছর বয়সের ১৮৩ ও ৯ বছর বয়সের ১৫২ জন। (বেশির ভাগ মৃত্যুই নথিভুক্ত নয়। তাই এই পরিসংখ্যান একটি খণ্ডিত চিত্র মাত্র।) 

বস্তুত ২০১১ সালের পর সে দেশে সামগ্রিক ভাবে মৃত্যুর হিসাব করা দিনদিন অসম্ভব হয়ে উঠছে। এখনও ২ লক্ষ ২০ হাজার মানুষের মৃত্যুর হিসেব পাওয়া গেছে। বলাই বাহুল্য আসল সংখ্যাটা এর থেকে ঢের বেশি।

একটা ছোট্ট বোটে চেপে ঠেসাঠেসি করে কেনই বা আয়লানের বাবা সপরিবারে নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ছিলেন এই পরিসংখ্যন থেকে তার কিছুটা আভাস পাওয়া যায় হয়ত। দেশের মধ্যে প্রত্যেক মুহূর্ত তাঁদের কাটাতে হয় প্রাণহাতে করে। সব সময়ই মনে হয় এই বুঝি আকাশ থেকে এসে পড়বে উড়ন্ত এক গোলা। তারপর এক লহমায় সব শেষ। সেই আতঙ্ক থেকেই ঘাড়ে উদ্বাস্তু তকমা নিয়ে দেশ ছেড়ে অন্য দেশের সীমান্ত টপকাতে বাধ্য হচ্ছেন সিরিয়ার লাখ লাখ মানুষ। কাঁটাতারের বেড়া টপকাতে পারছেন না বেশির ভাগই। অনিশ্চিত নৌকো চড়ছেন বটে, কিন্তু অনেকের ভাগ্যই হয়ত আয়লানের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়ে যাচ্ছে, যার খোঁজ কেউ রাখছে না, কেউ হয়ত কোনদিনও রাখত না...

.