এবার আসরে মোসাদ?
দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের গাড়িতে `স্টিকার বম্ব` বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে তেল আভিব থেকে উড়ে এসেছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক গোয়েন্দা দল। খবরে প্রকাশ, এই টিমে রয়েছেন ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা `মোসাদ`-এর কয়েকজন অফিসার। কিন্তু কী এই `মোসাদ`?
দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের গাড়িতে 'স্টিকার বম্ব' বিস্ফোরণ কাণ্ডের তদন্তে তেল আভিব থেকে উড়ে এসেছে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক গোয়েন্দা দল। খবরে প্রকাশ, এই টিমে রয়েছেন ইজরায়েলি গুপ্তচর সংস্থা 'মোসাদ'-এর কয়েকজন অফিসার। প্রত্যাশিতভাবেই এই খবরে ছড়িয়েছে প্রবল চাঞ্চল্য।
কিন্তু কী এই 'মোসাদ'? কী তাদের কাজ? কেনই বা 'মোসাদ'-এর নাম ঘিরে দুনিয়াজুড়ে এত বিতর্ক? দেখে নেওয়া যাক একনজরে।
মার্কিন 'সিআইএ' থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের 'কেজিবি'-- ব্রিটিশ 'এম আই সিক্সটিন' থেকে পাকিস্তানের 'আইএসআই'-- বিশ্বের নানা দেশের গুপ্তচর সংস্থাকে ঘিরেই সত্যি আর মিথ্যেকে নিয়ে গড়ে উঠেছে নানা মিথ। কিন্তু ইসরায়েলের 'মোসাদ'কে ঘিরে যে সব রহস্যজনক ও চাঞ্চল্যকর গল্প চালু আছে, তার কোনও তুলনাই নেই। আর তার প্রায় সবকটিরই মূল কথা এক-- এক বার তেল আভিবের এই ঘাতক বাহিনীর নজরে পড়লে বিশ্বের কোনও কোণেই লুকিয়ে নিস্তার পায় না সেই 'টার্গেট'।
হিটলারের নাত্সি বাহিনীর হাতে প্রায় ৬০ লক্ষ ইহুদির মৃত্যুর পর গোটা দুনিয়ার এই সম্প্রদায়ের একটি প্রভাবশালী অংশ নিজস্ব রাষ্ট্র গঠনের `স্বপ্নের কর্মসূচি`তে সামিল হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম ধর্মালম্বীদের কাছে `পবিত্রভূমি` বলে পরিচিত বৃহত্তর প্যালেস্টাইনকেই তারা বেছে নিয়েছিল নতুন এই বাসভূমি হিসেবে। কিন্তু আরব ভূখণ্ডে ঘেরা এই শিশুরাষ্ট্রকে রক্ষা করা মোটেই সহজসাধ্য ছিল না। আর সেই ঐতিহাসিক চাহিদা মেটাতেই রাষ্ট্র হিসেবে ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠার ১৯ মাসের মাথায়, ১৯৪৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডাভিড বেন গুরিয়ন `মোসাদ` প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কালে কালে যা পরিণত হয় এক কালান্তক মহীরুহে।
হিব্রু ভাষায় `মোসাদ` শব্দের অর্থ `প্রতিষ্ঠান`। আনুষ্ঠানিকভাবে ইজরায়েলের এই বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থার নাম "দ্য ইন্সিটিটিউট অফ ইনটেলিজেন্স অ্যান্ড স্পেশাল অপারেশনস`। ইজরায়েলে জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত আরও দু`টি গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থার নাম `শিন বেত` এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার নাম `আগাফ হা-মোদিন` (সংক্ষেপে `আমন`)৷ যদিও `মোসাদ`-এর তুলনায় তাদের খ্যাতি এবং কর্মপরিধি নেহাতই সামান্য।
চরম গোপনীয়তার ঘেরাটোপে থাকা `মোসাদ`-এর কীর্তিকলাপ সম্পর্কে নানা কল্পকাহিনি প্রচারিত থাকলেও এর কার্যপদ্ধতি সম্পর্কে প্রায় কিছুই জানা যায় না। এমনকী, এই সংস্থার সদর দফতরেরও কোনও ঠিকানা বা টেলিফোন নম্বর নেই। কোনও তথ্য নেই সংগঠনের কর্মী বা এজেন্টদের সংখ্যা সম্পর্কেও। ইজরায়েলের আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র সংস্থার প্রধানের নাম প্রকাশ করা যায়। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই পরিচালিত হয় `মোসাদ`-এর কার্যকলাপ। `মোসাদ`-এর ওয়েবসাইটে সামান্য সংগঠনের `লক্ষ্য` এবং `কার্য়কলাপ` সম্পর্কে সামান্য কিছু তথ্য রয়েছে। তবে, ‘মোসাদ`-এর হয়ে কাজ করতে ইচ্ছুকদের জন্য একটি `ফর্ম` রয়েছে ওয়েবসাইট`টিতে।
ইজরায়েলি সরকারের জন্য কৌশলগত, রাজনৈতিক ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করার মতো কাজের বাইরেও `মোসাদ`-এর কাজের পরিধি যথেষ্ট বিস্তৃত। বিশ্বখ্যাত (কিংবা কুখ্যাত)এই গুপ্তচর সংগঠনের ঘোষিত উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে ইজরায়েলের সীমানার বাইরে গোপনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করা, শত্রুভাবাপন্ন দেশগুলি যাতে বিশেষ ধরনের অস্ত্র তৈরি বা সংগ্রহ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা এবং দেশেবিদেশে ইজরায়েলি লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলার ষড়যন্ত্র আগাম প্রতিরোধের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা (অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সন্দেহভাজন ষড়যন্ত্রকারীদের খতম করে)।
গ্লোবালসিকিউরিটি.ওআরজি ওয়েবসাইটে প্রকশিত তথ্য অনুযায়ী, ইজরায়েলি সামরিক এবং অসামরিক গোয়েন্দা বিভাগের বাছাই করা অফিসারদের দ্বারা পরিচালিত `মোসাদ`-এর মোট ৮টি বিভাগ রয়েছে। এর মধ্যে ৫টি ডিপার্টমেন্ট কিছু তথ্য জানা যাচ্ছে:
১.কালেকশান ডিপার্টমেন্ট: এটি মোসাদ-এর সবচেয়ে বড় বিভাগ। বহির্বিশ্বে ডিপ্লোম্যাট, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক-সহ অন্যান্য ছদ্মবেশে কাজ করেন এই বিভাগের এজেন্টরা।
২.পলিটিক্যাল অ্যাকশন এবং লিয়াঁজো ডিপার্টম্যান্ট: এই গ্রুপের কাজ প্রতিটি বন্ধুভাবাপন্ন দেশের গোয়েন্দা ও গুপ্তচরসংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করা।
৩.স্পেশাল অপারেশান ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপকে গুপ্তহত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়।
৪.ল্যাপ ডিপার্টমেন্ট: এই গ্রুপ প্রতিপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের জন্য প্রচার চালায় ও শত্রু শিবিরে ভুল খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
৫.রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট: যাবতীয় গোয়েন্দা গবেষণা ও `কাউন্টার ইনটেলিজেন্স`-এর ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উত্কর্ষবৃদ্ধির নিরন্তর কাজ করে চলেন এই গ্রুপের গবেষকেরা।
সাম্প্রতিককালে দুবাইয়ে হামাস কমান্ডার মাহমুদ আল-মাবুর হত্যা বা তেহরানে তরুণ ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী মোস্তফা আহমাদি রওশনের খুনের পিছনে মোসাদ-কানেকশন ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। সোমবার অওরঙ্গজেব রোডের `স্টিকার বম্ব` নাশকতা কি অদূর ভবিষ্যতে কোনও `বিশেষ দায়িত্ব` তুলে দেবে `মোসাদ`-এর এলিট `হিট স্কোয়াড`-এর কাঁধে?