পুলিস-জনতা বিদ্রোহের মুখে ইস্তফা মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টের

সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ও বিদ্রোহী পুলিস বাহিনীর চাপের মুখে মঙ্গলবার দুপুরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মহম্মদ নাশিদ। এর পর বিকেলে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট ‘পিপলস মজলিসে’ আয়োজিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেন নয়া প্রেসিডেন্ট ড. মোহামেদ ওয়াহিদ।

Updated By: Feb 7, 2012, 04:53 PM IST

প্রায় আড়াই দশক আগে কতকটা একই ধরনের সশস্ত্র প্রতিরোধের মুখে পড়ে গদি হারাতে বসেছিলেন তাঁর পূর্বসূরী মামুন আব্দুল গায়ুম। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ঝটিকা প্রত্যাঘাতে সে যাত্রায় মালদ্বীপের তত্‍কালীন প্রেসিডেন্টের গদি রক্ষা পেয়েছিল। মহম্মদ নাশিদের ভাগ্য অবশ্য তেমন সুপ্রসন্ন হল না। সরকার বিরোধী বিক্ষোভ ও বিদ্রোহী পুলিস বাহিনীর চাপের মুখে মঙ্গলবার ইস্তফা দিতে বাধ্য হলেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে সে দেশের সামরিক বাহিনী (মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স বা এনএনডিএফ)-র মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার আহমেদ সিয়াম জানান, সাময়িক ভাবে ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ ওয়াহিদ হাসান প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন।
এর পর বিকেলে মালদ্বীপের পার্লামেন্ট ‘পিপলস মজলিসে’ আয়োজিত শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিক ভাবে দায়িত্ব নেন নয়া প্রেসিডেন্ট ড. মোহামেদ ওয়াহিদ। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আহমেদ ফয়েজ হোসেন তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান। পিপলস মজলিসের বর্তমান স্পিকার আবদুল্লাহ শহীদ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার ও আমলারা উপস্থিত ছিলেন এই শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে।
২০০৮ সালে মালদ্বীপের প্রথম সবর্জনীন গণতান্ত্রিক নির্বাচনে মামুন আব্দুল গায়ুমকে পরাস্ত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মানবাধিকারকর্মী এবং পরিবেশবাদী আন্দোলনের নেতা মহম্মদ নাশিদ। কিন্তু বিগত চার বছরে বারে বারেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক অনুগামীদের কড়া চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে।সম্প্রতি মালদ্বীপের ফৌজদারী আদালতের প্রধান আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। প্রেসিডেন্ট নাশিদের নির্দেশে মোহাম্মদকে গ্রেফতার করে ২০০৯ সালে গঠিত সামরিক বাহিনীর এলিট `স্পেশ্যাল ফোর্স`।

ভাইস প্রেসিডেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বিচারবিভাগীয় কমিশন এমনকী রাষ্ট্রসঙ্ঘের তরফে আবদুল্লাহ মোহাম্মদকে মুক্তি দেওয়ার আবেদন জানান হলেও তাতে কর্ণপাত করেননি একদা মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মী মহম্মদ নাশিদ। আর প্রেসিডেন্টের এই স্বেচ্ছাচারী কার্যকলাপের প্রতিবাদে মাথাচাড়া দেয় জনবিক্ষোভ। টানা কয়েক সপ্তাহ রাজধানী মালেতে প্রতিরক্ষা ভবনের সামনে চলে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট গায়ুমের অনুগামী এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ড. হাসান সইদের দল ধিভেহি কওমি পার্টির সমর্থকদের প্রতিবাদ কর্মসূচী। সোমবার রাতে রিপাবলিক স্কোয়্যারে নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।
মঙ্গলবার সশস্ত্র পুলিস বাহিনীকে ওই বিক্ষোভরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার নির্দেশ দেয় সরকার। কিন্তু প্রেসিডেন্টের ফরমান অগ্রাহ্য করে কয়েক`শ পুলিস বিক্ষোভকারীদের সঙ্গেই প্রতিবাদে অংশ নেয়। এর পর বিদ্রোহী পুলিসকর্মীরা জাতীয় রেডিও ও টেলিভিশন স্টেশনের দখল নিয়ে দেশবাসীকে প্রেসিডেন্ট নাশিদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার আহবান জানায়।

নাশিদ-সমর্থক স্পেশ্যাল ফোর্স তাঁর পাশে দাঁড়ালেও অনিবার্য গৃহযুদ্ধ ও রক্তপাত এড়াতে তাঁকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ দেয় র‌্যাপিড রিঅ্যাকশন ফোর্স, কোস্ট গার্ড, স্পেশ্যাল প্রোটেকশন গ্রুপ, মেরিটাইম কোর-এর মতো এমএনডিএফ-এর অন্তর্গত অন্যান্য বাহিনীগুলির কম্যান্ডাররা। শেষ পর্যন্ত সেই পরামর্শ মেনে রিপাবলিক স্কোয়্যারের অনতিদূরের প্রতিরক্ষা সদর কার্যালয়ে বসেই পদত্যাগের কথা ঘোষণা করেন নাশিদ। এর পর তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যায় সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপের তত্‍কালীন প্রেসিডেন্ট মামুন আব্দুল গায়ুমের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের ষড়যন্ত্র করেছিলেন সে দেশের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্তা। আর এই কাজে শ্রীলঙ্কার এলটিটিই বিরোধী তামিল জঙ্গি সংগঠন `পিপলস লিবারেশন অর্গানাইজেশন অফ তামিল ইলম (প্লট)`-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট গায়ুমের বার্তা পেয়ে দ্রুত মালে`তে উড়ে গিয়ে ভারতীয় ফৌজের প্যারাট্রুপার ইউনিটের কুশলী কম্যান্ডোরা অভ্যুত্থানের ছক বানচাল করে দেয়।

.