পঞ্চায়েত মামলার শুনানি শেষ, শীঘ্রই রায় শোনাবে সুপ্রিম কোর্ট
প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও খানউইলকরের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় যে, এই মামলায় 'যত দ্রুত সম্ভব' রায়দান করা হবে।
![পঞ্চায়েত মামলার শুনানি শেষ, শীঘ্রই রায় শোনাবে সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত মামলার শুনানি শেষ, শীঘ্রই রায় শোনাবে সুপ্রিম কোর্ট](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2018/08/20/136291-panch.jpg)
নিজস্ব প্রতিবেদন: সুপ্রিম কোর্টে পঞ্চায়েত মামলার শুনানি শেষ হল সোমবার। এই মামলার সঙ্গে যুক্ত কোনও পক্ষের আদালতকে যদি এরপরও কিছু জানানোর থাকে, তাহলে তা ২২ অগস্টের মধ্যে হলফনামা আকারে জমা দিতে হবে। রাজ্যের তরফে সোমবার বলা হয়, বিপুল সংখ্যক গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে বোর্ড গঠন আটকে থাকায় এক সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে, ব্যাহত হচ্ছে উন্নয়নের কাজও। ফলে, আদালতের কাছে এই মামলায় দ্রুত অন্তর্বর্তী রায়ের আবেদন করে রাজ্য সরকারের আইনজীবী। এরপরই প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও খানউইলকরের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয় যে, এই মামলায় 'যত দ্রুত সম্ভব' রায়দান করা হবে।
এবার দেখে নিন, এদিন আদালতে ঠিক কেমন সওয়াল করলেন বিভিন্ন পক্ষের আইনজীবীরা-
বিকাশ সিং (রাজ্য সরকারের আইনজীবী) : এখনও পর্যন্ত বোর্ড গঠন করা যায়নি বলে অর্থ কমিশনের ২২ হাজার কোটি টাকার তহবিল পড়ে রয়েছে। সেই টাকা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এদিকে, সব গ্রাম পঞ্চায়েতের (পূর্ববর্তী বোর্ডের) মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। ফলে কোনটিই কাজ করছে না বর্তমানে। গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন করতে দেওয়া হোক।
পাটওয়ালিয়া (বিজেপি-র আইনজীবী) : পশ্চিমবঙ্গের সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোট একেবারেই অবাধ ও শান্তিপূর্ণ হয়নি। বরং নির্বাচনের এই আদর্শ লঙ্ঘিত হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। এমনকী কলকাতা হাইকোর্টও ভোটে হিংসার বিষয়টি মেনে নিয়েছে। এছাড়া, এই ব্যাপারটি সুপ্রিম কোর্টেরও নজরে এসেছে। শীর্ষ আদালত রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে বিষয়টি দেখতেও বলেছে।
প্রধান বিচারপতি : আমি আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি। আপনি বলতে চাইছেন, রাজ্যে নির্বাচনের অনুকূল বাতাবরণ ছিল না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা আসনগুলিতে মনোনয়ন দিয়েছিল কেবল একটিই রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। তাই গণতন্ত্রে যে বহুদলীয় ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে, সেটিই লঙ্ঘিত হয়েছে।
পাটওয়ালিয়া (বিজেপি-র আইনজীবী) : হুজুর, আপনার ক্ষমতা রয়েছে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার। (ভোটের সময়) রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ।
(...প্রথমার্ধ এখানেই শেষ হয়)
পাটওয়ালিয়া (বিজেপি-র আইনজীবী) : রাজ্য সাংবিধানিক সঙ্কটের কথা বলছে। কিন্তু, ২০১০ সালে রাজ্য সরকার পঞ্চায়েত আইনে ৩টি সংশোধন করে। এর একটির সৌজন্যে এখন গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রশাসক নিয়োগের বন্দোবস্ত রয়েছে এবং সম্প্রতি রাজ্য সরকার প্রশাসক নিয়োগও করেছে। এছাড়া, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মেয়াদ এখনও উত্তীর্ণ হয়নি, সেগুলি শেষ হবে যথাক্রমে ৬ ও ১৩ই সেপ্টেম্বর'১৮ পর্যন্ত।
শান্তিরঞ্জন দাস (ভোটারদের তরফ থেকে) : ভোটাররা কীভাবে হেনস্থার সম্মুখীন হয়েছেন, সে বিষয়টি দয়া করে দেখা হোক। আদালতের পুনর্নির্বাচনের রায় দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে।
বিজন ঘোষ (বিজেপি-র আইনজীবী) : (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমন 'জয়') সাধারণ মানুষকে ভোটে লড়ার ও ভোট দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। বিষয়টি সাংবিধানিক অধিকার হওয়ায়, এর প্রভাব দেশ জুড়ে পড়বে।
প্রধান বিচারপতি : ভোট দেওয়া এবং ভোটে লড়ার অধিকার বিধিবদ্ধ অধিকার, কখনও সাংবিধানিক অধিকার নয়।
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় : আদলত শুধু এদের আবেদনগুলি লক্ষ্য করুক। প্রথমত এরা নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকেই নস্যাত্ করতে চাইছে। দ্বিতীয়ত, নির্বাচন কমিশনারকে পদচ্যুত করতে চাওয়া হচ্ছে। কিন্তু, সেটা করতে গেলে তো, ইমপিচমেন্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, ই-মেল হোয়াটসঅ্যাপ-এর মাধ্যমে ই-মনোনয়নকে স্বীকৃত করতে চাওয়া হচ্ছে। অথচ, যাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় পেয়েছেন, তাঁদের কথা না শুনেই এই মামলায় সব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক প্রার্থীকে সংশ্লিষ্ট গ্রামের অধিবাসী হতে হবে। সেই নিয়মে কি কোনও বিচ্যুতি ঘটেছে? আরও পড়ুন- পঞ্চায়েত মামলায় সুপ্রিম ভর্তসনার মুখে রাজ্য নির্বাচন কমিশন
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ই-মেল বা হোয়াটস অ্যাপে মনোনয়ন জমার আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিআই(এম)। আদালত তা বৈধ বলে রায় দিয়েছিল। সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই শীর্ষ আদালতে যায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। ৯ মে সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। সে সময় ক্যাভিয়েট গঠন করে এই মামলাতে যুক্ত হয় বিজেপি-ও। কিন্তু, ই মনোয়নে হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু, ৩৪ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় 'জয়ী' প্রার্থীদের নাম গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে বাকি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সেই মামলারই শেষ শুনানি ছিল শীর্ষ আদালতে।