Municipal Election 2022: জেলায় জেলায় দলের চূড়ান্ত প্রার্থীতালিকা, তারপরও থামছে না তৃণমূল কর্মীদের অসন্তোষ
প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় টায়ার জ্বালিয়ে আজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন কোচবিহার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা
নিজস্ব প্রতিবেদন: কোথাও প্রার্থী পছন্দ হয়নি, কোথাও অন্য দল থেকে আসা লোকজনকে প্রার্থী করার অভিযোগ। গতকাল রাজ্যের পুরভোটের প্রার্থীতালিকা প্রকাশ হওয়ার পর থেকে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। কোথাও রাস্তা অবরোধ করে, কোথাও রাস্তার টায়ার জ্বালিয়ে, কোথাওবা নেতার বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। তবে আজ ফরিহাদ হাকিম সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, সুব্রত বক্সীর সাক্ষর করা প্রার্থীতালিকাই চূড়ান্ত। তার পরও চলছে বিক্ষোভ।
বর্ধমান
প্রার্থী বদলের দাবিতে তৃণমূলের বিক্ষোভ অব্যহত বর্ধমানে। শনিবার রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে বর্ধমান রাজবাড়ির সামনে পথ অবরোধে সামিল হল তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। বর্ধমান শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে গতকাল রাতেও বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা। আজ আবার বিক্ষোভে সামিল হল তারা। তাদের অভিযোগ, প্রাক্তন কাউন্সিলার শাহাবুদ্দিন খান এলাকায় কোন উন্নয়ন করেনি এবং বিভিন্ন দুর্নীতির সাথে যুক্ত। তাদের আরও অভিযোগ এলাকার এক তৃণমূল কর্মীকে খুনে শাহাবুদ্দিন খান পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল। এমনকি নাম ঘোষণা হবার পর থেকেই শাহাবুদ্দিন খানকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে তাদের অভিযোগ। গতকাল সন্ধ্যায় শাহাবুদ্দিন খানের নাম ঘোষণা হওয়া মাত্রই ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা। প্রার্থী বদল না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই আন্দোলন চলবে বলে জানান আন্দোলনরত তৃণমূল কর্মীরা। শুধু ১৯ নম্বর ওয়ার্ড নয়, পাশাপাশি ৩ ও ৭, নম্বর ওয়ার্ডেও বিক্ষোভ চলে।
প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ ছড়াল বর্ধমান পুরসভার ৭ নং ওয়ার্ডে। এখানে দলের নেত্রী মিঠু সিংহের নাম প্রার্থী তালিকায় ঘোষিত হয়েছে। তারপর থেকেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে দলীয় কর্মীদের একাংশের মধ্যে।আজ দুপুরে শহরের পার্কাস রোডের একদিকে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখায় বিক্ষুব্ধ শাসকদলের কর্মীরা। এলাকার দলের কর্মী সোমশুভ্র রায় জানান; এই এলাকার মধ্যেই পুরসভা। ভৌগোলিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই এলাকায় দলের এক নেত্রীকে প্রার্থী করা হয়েছে। উনি ২২ নং এ থাকেন। তাকে বদলে স্থানীয় কাউকে দেওয়া হোক।
শহরজুড়ে বিক্ষোভ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস জানান ; এটা অভিমান। একে বিক্ষোভ বলা যাবে না। আর দলই প্রার্থী ঠিক করেছে। সেটা দলের সিদ্ধান্ত। সবাইকে তা মেনে নিতে হবে।
বসিরহাট
প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় তা বদলের দাবিতে তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোবে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বসিরহাট পৌর এলাকা। দলীয় পতাকা নিয়ে বসিরহাট ও বিধায়কের কার্যালয়ের সামনে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান সমর্থকরা।
পাঁচ নং ওয়ার্ডে প্রাক্তন পুর প্রধান তপন সরকার এবার টিকিট না পাওয়ায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা রাস্তায় মিছিল করে বসিরহাট পুরসভার সামনে রাস্তা অবরোধ করে। প্রাক্তন পুর প্রধান তপন সরকারকে পুনরায় প্রার্থী করার দাবি তুলে বিধায়কের কার্যালয়ে গণসাক্ষর করা স্মারকলিপি জমা দেয় তৃণমূল কর্মী সামর্থকরা । শেষ পর্যন্ত পুলিসের হস্তক্ষেপে অবরোধ-বিক্ষোভ ওঠে।
কালনা
শনিবার সকালেই কালনার ১৩ নম্বর ওয়াডের প্রার্থী মঞ্জু হালদারকে পছন্দ নয়। টায়ার জ্বালিয়ে ক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূলের একাংশ। এ বিষয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, প্রার্থী তালিকা বেরনোর পর অনেক জায়গায় ক্ষোভ দেখা গেছে। কর্মীদের আমি বলব সংযত থাকতে, যদি প্রার্থী পছন্দ না হয়ে থাকে তাহলে দলের নেতৃত্বকে জানান। পাশাপাশি তিনি আরও সংযোজন, অনেকেই ভোটের আগে দু নৌকাতে পা দিয়েছিলেন। সেই সমস্ত মানুষ যদি প্রার্থী হয়ে যান তাহলে এটা হওয়া স্বাভাবিক।
ঝাড়গ্রাম
ঝাড়গ্রামের প্রার্থী তালিকা নিয়ে চরম বিভ্রান্তি। টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে প্রতিবাদ করলেন তৃণমূল কর্মীরা। সারা রাজ্যের মতো ঝাড়গ্রামের প্রথম তালিকা নিয়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পাড়ায় পাড়ায় পোষ্টার পড়া শুরু হয়। এর পরই শোনা যায় দ্বিতীয় লিষ্ট পাঠানো হয় জেলা সভাপতিদের কাছে। তাতে অবশ্যই সুব্রত বক্সি এবং পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর সই থাকবে বলে জানানো হয়। অথচ রাজ্যের বাকি জেলার সংসধিত লিষ্টে দুজনার সই থাকলেও ঝাড়গ্রামের লিষ্টে শুধু পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সই। অথচ ফিরহাদ হাকিম আজ জানান, সুব্রত বক্সীর সই যে লিষ্টে থাকবে সেটাই চুড়ান্ত। ফলে এই লিষ্ট নিয়েও দেখা দিয়েছে চরম বিভ্রান্তি। লিস্টে বেশ কয়েকজনের নামনিয়ে চরম অসন্তোষ মানুষের মধ্যে। দলের কর্মীরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভ শুরু করেছে। সাধারন মানুষের বক্তব্য এই লিষ্ট আগে থেকেই ঘুরছিল। ফলে দ্বিতীয় লিষ্টকে ঘিরেও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
বাদুড়িয়া
বহিরাগত প্রার্থী বাতিলের দাবিতে বাদুড়িয়া মাটিয়া রোডে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। বাদুড়িয়া ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সফিয়া সুলতানাকে, জাহানারা বিবিকে চাই এমনটাই দাবি তুলে ঘন্টাখানেক রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, বহিরাগত প্রার্থী বাদ দিয়ে ৬নং ওয়ার্ডেরই বাসিন্দাকে প্রার্থী করতে হবে। রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে গলায় প্লাকার্ড ঝুলিয়ে তৃণমূল দলীয় পতাকা হাতে নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বিক্ষোভ দেখায় দলের কর্মীরা। পুলিসের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে।
আরও পড়ুন-সঙ্কটজনক লতা মঙ্গেশকর, রাখা হল ভেন্টিলেশনে
কোচবিহার
প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় টায়ার জ্বালিয়ে আজ বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন কোচবিহার পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা । ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীরা একত্রিত হয়ে পার্টি অফিসের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান।তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে তপন আচার্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে । তবে তাকে মানতে নারাজ দলের কর্মীরা ।
নদিয়া
প্রার্থী বদলের দাবিতে আবারও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ তৃণমূলের একাংশের। শান্তিপুরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রাজীব সাহার নাম প্রকাশ হতেই ক্ষোভ উগরে দিলেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। শনিবার রাস্তা অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। তাদের দাবি ১০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার গোবিন্দ ঘোষকেই প্রার্থী করতে হবে, না হলে তারা দফায় দফায় বিক্ষোভ করবেন। তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব যদি প্রার্থী বদল না করে তাহলে আবারও বিক্ষোভের পথ বেছে নেওয়া হবে।
জলপাইগুড়ি
প্রার্থীপদ নিয়ে চরম বিক্ষোভ জলপাইগুড়িতে। শনিবার জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কার্যালয়ের গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ। তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের দাবি, সদ্য সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগদান করা প্রমোদ মন্ডলকে তৃণমূলের প্রার্থী পদ থেকে সরাতে হবে। এই মর্মে আজ জলপাইগুড়ি তৃণমূলের জেলা সভাপতিকে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। জলপাইগুড়ি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মলয় ওরফে শেখর ব্যানার্জিকে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী চাই। শেখর ব্যানার্জি অনুগামীরা আজ জলপাইগুড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
মাল
আসন্ন মাল পুরসভা নির্বাচনের ১৫ টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রার্থী তালিকা নিয়ে এবং প্রার্থীর নাম নিয়ে ব্যাপক জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল রাতে ২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী পুলিন গোলদারের বিরুদ্ধে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। আজ সকালে ফের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর নাম নিয়ে জটিলতার পর মালবাজার ক্যালটেক্স মোড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাদের বক্তব্য, প্রথম তালিকায় ১১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে শুভঙ্কর দে'র নাম ছিল। কিন্তু রাতে অন্য একটি তালিকাতে দেখা যায় সেই জায়গায় অজয় লোহারের নাম আছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা অজয় লোহারকে প্রার্থী হিসেবে মানতে নারাজ বাসিন্দারা। তাদের বক্তব্য, শুভঙ্কর দে তাদের ওয়ার্ডের প্রার্থী। তাকে প্রার্থী না করলে তারা ভোট বয়কট করবে। এই মুহূর্ত পর্যন্ত রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ চলছে। প্রচুর যানবাহন আটকে পড়েছে।
কোচবিহার
তৃণমূলের প্রার্থীতালিকা নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত কোচবিহারে। কোচবিহারের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গুঞ্জবাড়ি মোরে তৃণমূলের প্রার্থী চন্দনা মহন্তর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। উল্লেখ্য যে চন্দনা মহন্ত কিছুদিন আগেই ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করেন। শনিবার এলাকার সাধারণ মানুষ এবং তৃণমূল কর্মীরা প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিতে গুঞ্জবাড়ি এলাকায় টায়ার বিক্ষোভ দেখান।
মেমারি
শুক্রবার মেমারি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে কৃষ্ণপদ বিশ্বাসের নাম ঘোষণা হয়। তারপরই শনিবার সকালে বিক্ষোভ দেখায় ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীদের একাংশ। পাশাপাশি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নাগরিকবৃন্দের ব্যানারে প্রার্থীপদ মানছি না বলে পোস্টার দেওয়া হয়। ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি বহিরাগত প্রার্থী তারা চান না। অবিলম্বে প্রার্থীপদ পরিবর্তন করে ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী করতে হবে।
অন্যদিকে জেলার গুসকরা পৌরসভা এলাকাতেই প্রার্থী বদলের দাবিতে সকাল থেকেই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীদের একাংশের দাবী ৩,৫,৯ ও ১৬ ওয়ার্ডের প্রার্থী পরিবর্তন করতে হবে। সকাল থেকেই সেই দাবিতে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।