Mal River Tragedy: বিসর্জন দেখতে মাল নদীর চরে আলো, লোক আটকানোর ব্যবস্থা কোথায়!
মালবাজার সিভিল ডিফেন্সের আধিকারিক পল্লব বিকাশ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, মাত্র ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিল এই মাল নিরঞ্জন ঘাটে। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও ছিল না। বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ ব্যহত রয়েছে
![Mal River Tragedy: বিসর্জন দেখতে মাল নদীর চরে আলো, লোক আটকানোর ব্যবস্থা কোথায়! Mal River Tragedy: বিসর্জন দেখতে মাল নদীর চরে আলো, লোক আটকানোর ব্যবস্থা কোথায়!](https://bengali.cdn.zeenews.com/bengali/sites/default/files/2022/10/06/391833-1.png)
প্রদ্যুত্ দাস, অরূপ বসাক ও নারায়ণ সিংহ রায়: বুধবার দুর্গাপুজোর বিসর্জনের সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনায় এখনওপর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গতকালের হড়পা বানে এখনও নিখোঁজ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের খুঁজতে মাল নদীতে চলছে তল্লাশির কাজ। বেলা সাড়ে বারোটার পর মাল নদীতে তল্লাশির জন্য নামানো হয় এনডিআরএফের স্পিড বোট। আরও একটি স্পিড বোট নামানো হবে। প্রশ্ন উঠছে একটা স্পিড বোট নামাতে এতটা দেরী কেন? স্থানীয় সূত্রে খবর, সকাল থেকে এরকম কোনও তত্পরতা দেখা যায়নি। স্থানীয়দের আরও অভিযোগ জেসিপি দিয়ে মাটি খুঁড়ে মাল নদীতে একটি চর তৈরি করা হয়েছিল যাতে সেই চরে বাধা পেয়ে একদিকে অন্তত বেশি জল বইতে পারে এবং তাতে সহজেই বিসর্জন দেওয়া যায়। তাতেই জলের গতি বেড়ে যায়। প্রশাসনের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ, নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে বিসর্জন দেখার কথা। কিন্তু নদীর চরে কেন বাঁশের কাঠামো তৈরি করে লাইট লাগানো হয়েছিল? ওইসব লাইট লাগানোর ফলেই মানুষজন নদীগর্ভে নেমে যায়। অন্যদিকে মালবাজার প্রশাসনের দাবি, নিষেধ করা সত্বেও মানুষজন নদীতে নেমে যায়।
পড়ুন- বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা
বিজয়ার দিনে এমন মারাত্মক বিপর্যয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। প্রশ্ন উঠছে, এর আগেও মাল নদীতে হড়পা বান এসে একটি ট্রাককে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাহলে আগে থেকেই প্রশাসন সতর্ক হল না কেন? নিরঞ্জনের জন্য এত মানুষকে নদীতে নামতে দেওয়া হল কেন? কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হলেও কেন পর্যাপ্ত সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিল না। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার শুরু করতে ঘণ্টাখানেক লেগে গেল কীভাবে?
জলপাইগুড়ি জেলা পুলিস সুপার আজ এক সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন, মাল নদীর দুর্ঘটনায় মোট ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনায় সময়ে হাজারখানেক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। গত কুড়ি বছর ধরে মাল নদীর ওই জায়গায় বিসর্জন হচ্ছে। কখনও এমন দুর্ঘটনা ঘটেনি।
এলাকার মানুষজন আঙুল তুলছেন সিভিল ডিফেন্সের বিরুদ্ধেও। তাদের দাবি পর্যাপ্ত কর্মী ছিলেন না। এনিয়ে মালবাজার সিভিল ডিফেন্সের আধিকারিক পল্লব বিকাশ মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, মাত্র ৮ জন সিভিল ডিফেন্সের কর্মী ছিল এই মাল নিরঞ্জন ঘাটে। পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতিও ছিল না তাদের কাছে। বৃষ্টির কারণে উদ্ধার কাজ ব্যহত রয়েছে।
এখনওপর্যন্ত যাদের মৃত্যু হয়েছে
১) তপন অধিকারী ৭২, (২) উর্মি সাহা ১৩, (৩) রুমুর সাহা ৪২, (৪) আনস পন্ডিত ৮, (৫) বিভা দেবী ২৮, (৬) শুভাশিস রাহা ৬৩, (৭) সুস্মিতা পোদ্দার ২২, (৮) শোভনদ্বীপ অধিকারী ২০
উল্লেখ্য, সপ্তমী, অষ্টমী আকাশ পরিস্কার থাকলেও নবমী দিন শুরু হয় মালবাজার শহর-সহ আশেপাশের এলাকায় বৃষ্টি। দশমীতে আকাশ ছিল সাফ। বিকাল হতেই মালে প্রতিমা নিরঞ্জন ঘাটে বিসর্জন শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন বিঘ্ন হয়নি। এক এক করে আশেপাশের আইভিল, সোনগাছি, বাতাবাড়ি চাবাগান সহ মালবাজার শহরের কয়েকটি প্রতিমা নিবিঘ্নে বিসর্জন হয়। সন্ধ্যা নামতেই ভিড় বাড়ে। এক এক করে ঘাটে আস্তে শুরু করে শোভাযাত্রা সহ দেবী প্রতিমা। রাত ৮.৩০ নাগাদ আচমকা রুদ্ররূপ ধারণ করে মালনদী। পাহাড়ের উপর থেকে ধেয়ে আসে হড়পা বান। সেই বানের তোড়ে ভেঙে যায় প্রশাসনের তৈরি করা বালির বাধ। এতেই প্রতিমা ভাসাতে আসা কয়েকটি গাড়ি ও কয়েকশ মানুষ নদীর স্রোতের মুখে পড়ে যায়। ভেসে যায় বেশ কিছু মানুষ ও প্রতিমা নিরঞ্জনের ট্রাক। উদ্ধারকারী দল বেশ কিছু মানুষকে উদ্ধার করলেও ভেসে যায় অনেকে। বেশ কয়েকজনকে আনা হয় মাল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এ পর্যন্ত ৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৫-১৬ জন। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এদের বাড়ি মালবাজার শহর সহ আশেপাশের এলাকায়। মৃতের মধ্যে ৪ জন মহিলা, তিন জন পুরুষ এবং একজন শিশু রয়েছে।