Jagannath Mandi: হাত অকেজো, পা দিয়ে লিখেই মাধ্যমিকে সফল দরিদ্র আদিবাসী জগন্নাথ...
Jagannath Mandi Of Bardhaman: সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে এবার জগন্নাথই একমাত্র ছাত্র যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। এমন এক ছাত্রের পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য সদাসতর্ক ছিল পরীক্ষাকেন্দ্র মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পরীক্ষকরাও। আর তার পর তো ইতিহাস।
পার্থ চৌধুরী: পা দিয়ে পরীক্ষার খাতায় লিখে মাধ্যমিকে সফল ভাবে উত্তীর্ণ হল দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের ছাত্র জগন্নাথ। জন্মের সময় থেকেই দু'টি হাত থেকেও নেই তার। খর্ব দুটি হাতে নেই তালু, নেই আঙুলও। তাতে কী!শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর জগন্নাথ মাণ্ডি পা দিয়ে লিখেই এ বছরে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। পাস করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল সে। সেটাই হয়েছে। জগন্নাথ ২৫৮ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। বিশেষ ভাবে সক্ষম দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের এক ছাত্রের এই সাফল্যকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-সহ এলাকার মানুষজন।
আরও পড়ুন: Malbazar: পুকুরপাড়ে ১১ ফুট দীর্ঘ ইন্ডিয়ান রক পাইথন! ওদিকে রাতের অন্ধকারে ঘুরছে প্যাঙ্গোলিন...
জগন্নাথ মাণ্ডির বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার সিমলা গ্রামের আদিবাসী পাড়ায়। শৈশব খুব একটা সুখের ছিল না। ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মেছে জেনেও ছোটবেলাতেই তাকে ছেড়ে চলে যান মা। তবে মা ছেড়ে চলে গেলেও বাবা, ঠাকুমা এবং পিসি ও দাদার স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়নি জগন্নাথ। তাঁরাই তাকে ভর্তি করেন গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তখন থেকেই পা দিয়ে লেখা রপ্ত করতে শুরু করে জগন্নাথ। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে জগন্নাথ পা দিয়ে লেখায় ক্রমশ সাবলীল হয়ে ওঠে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ সম্পূর্ণ হলে পরিবারের লোকজন জগন্নাথকে ভর্তি করে মেমারির নুদিপুর ভূপেন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরে। সেখান থেকেই এবার জগন্নাথ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সবথেকে বড় কথা, সিমলা আদিবাসী পাড়া থেকে এবার জগন্নাথই একমাত্র ছাত্র যে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। এমন এক ছাত্রের পরীক্ষা দিতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেজন্য সদাসতর্ক পরীক্ষাকেন্দ্র মেমারির বাগিলা পূর্ণচন্দ্র স্মৃতি বিদ্যামন্দিরের পরীক্ষকরা।
আরও পড়ুন: Jalpaiguri: রূপকথার জার্নি! ফুটপাতের জুতোর দোকান থেকে মাধ্যমিকে ৬৪৯...
জগন্নাথ বলে, 'প্রতিদিন যখনই সময় পেতাম পড়তে বসতাম। অন্য ছাত্রদের মতো একাধিক বিষয়ে প্রাইভেট টিউটর নেওয়ার সামর্থ্য আমার ছিল না। মাত্র একজন প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল।' তবে স্কুলের শিক্ষকরাই তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেছেন। কষ্ট করে হলেও আগামী দিনেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চায় জগন্নাথ। জগন্নাথের পিসি জানান-- জগন্নাথ লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়াক, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হোক, মানুষের মতো মানুষ হোক-- এটাই আমরা চাই! তবে জানা গিয়েছে, পিসি নন, লেখাপড়া শেখার ব্যাপারে ছোট বয়স থেকে ওর ঠাকুমাই ওকে বেশি অনুপ্রাণিত করেছেন। সেই প্রেরণায় শত কষ্টের মধ্যেও জগন্নাথ লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছে, চালিয়ে যাচ্ছে।
পায়ে চামচ ধরে স্কুলে মিড ডে মিল খায় জগন্নাথ। ভালো ফুটবল খেলে। পাশাপাশি পায়ে করে খুব ভালো ছবিও আঁকে। পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ দেখে স্কুলে ক্লাস করার জন্য স্কুলের তরফে বিশেষ বেঞ্চের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয়েছিল। স্কুলে সহপাঠীরা সবসময় জগন্নাথের পাশে থাকে। বেশিরভাগ দিন সহপাঠীরাই তাদের সাইকেলে জগন্নথকে চাপিয়ে স্কুলে আসত। প্রধান শিক্ষক এও জানান,পায়ে করে লিখে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য জগন্নাথ যাতে অতিরিক্ত সময় পায় সেজন্য পর্ষদে আবেদন জানানো হয়েছিল। পর্ষদ তা অনুমোদনও করেছিল। আর এখন সকলেই খুশি, আনন্দিত, উল্লসিত।