Jagaddhatri Puja: বিশ্বাস, এখানে দেবীকে পুজো করলেন স্বয়ং দেবীই! কোথায় ঘটল এমন আশ্চর্য অলৌকিক?
Jagaddhatri Puja in Joyrambati: নৈবেদ্যদানে অসমর্থ শ্যামাসুন্দরী অত্যন্ত মর্মাহত। সেই রাতেই তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন এবং দেবীর স্বপ্নাদেশে মা কালীর জন্য তুলে রাখা চালেই জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেন।
সৌমিত্র সেন: জগদ্ধাত্রী পুজো বাঙালি হিন্দু সমাজের বিশিষ্ট উৎসব হলেও তা দুর্গা বা কালীপুজোর মতো হয় না, হতও না। এই পুজোর প্রচলন অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে। আঠারো শতকে নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায় তাঁর রাজধানী কৃষ্ণনগরে এই পুজোর প্রচলন করেন। এবং এই পুজোকেই বাংলার প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজো বলে ধরা হয়। পরে নানা জেলায় ও জনপদে এ পুজোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
কালে কালে জগদ্ধাত্রীপুজো বিখ্যাত হয় বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটীতেও। রামকৃষ্ণের সহধর্মিণী সারদাদেবীর জন্মভিটে এই জয়রামবাটী। সেখানে এখন মাতৃমন্দির। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের কার্যক্ষেত্র। এখানে দুর্গা ও কালীপুজো হয়। তবে এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজো অতি প্রসিদ্ধ বলে মনে করা হয়। বস্তুত, এখানকার জগদ্ধাত্রী পুজোই বেশি ঐতিহ্যপূর্ণ বলে মনে করেন ভক্তদল। কেননা, এখানে বরাবর জদদ্ধাত্রী পুজোর সময়ে উপস্থিত থাকতেন মা সারদা, যাঁকে ভক্তেরা দেবীরূপেই দেখেন। ফলে, তাঁরা মনে করেন, জয়রামবাটীর জগদ্ধাত্রীপুজো যেন দেবীর হাতে দেবীর পুজো!
আরও পড়ুন: Jagaddhatri Puja: জগদ্ধাত্রীমূর্তির ব্যাখ্যা জানেন? কেন দেবীর পদতলে হস্তী এবং এর উপরে সিংহ?
এখন মাতৃমন্দিরে তথা সারদাদেবীর পৈতৃক ভিটেতে এ পুজোর আয়োজন করে রামকৃষ্ণ মিশন। কিন্তু আদতে এ পুজো শুরু রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠার বহু বহু আগে। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে (১২৮৪ বঙ্গাব্দ) সারদাদেবীর পিতৃগৃহে সারদার মা শ্যামাসুন্দরী দেবীর হাতে। কিংবদন্তি, প্রতিবছর শ্যামাসুন্দরী দেবী প্রতিবেশী নব মুখুয্যের বাড়ির কালীপুজো উপলক্ষে নৈবেদ্যের চাল পাঠাতেন। ওই বছর কোনও বিবাদের কারণে নব মুখুজ্যে শ্যামাসুন্দরীর পাঠানো চাল নিতে অস্বীকার করেন। এদিকে নৈবেদ্যদানে অসমর্থ হয়ে শ্যামাসুন্দরী দেবী অত্যন্ত মর্মাহত হন। সেই রাতেই তিনি দেবী জগদ্ধাত্রীকে স্বপ্নে দেখেন এবং দেবীর স্বপ্নাদেশে মা কালীর জন্য তুলে রাখা ওই চালেই জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করেন।
আরও পড়ুন: Jagaddhatri Puja: বাংলায় কার হাতে এবং কোথায় প্রথম শুরু হল জগদ্ধাত্রী পুজো?
এখানে শুক্লা নবমীতে মূল পুজো। প্রথম বছর বিসর্জনের দিন পড়েছিল বৃহস্পতিবার। সারদাদেবী লক্ষ্মীবারে বিসর্জনে আপত্তি করেছিলেন। পরদিন সংক্রান্তি ও তার পরদিন পয়লা থাকায় ওই দুই দিনও বিসর্জন দেওয়া গেল না। শেষ পর্যন্ত বিসর্জন হল চতুর্থ দিনে। প্রথম পূজার ঐতিহ্য অনুযায়ী আজও শুক্লা নবমীতেই মূল পুজো শুরু। দুদিন প্রতিমা রেখে হয় বিশেষ পুজো। এখানে জগদ্ধাত্রী প্রতিমার পাশে জয়া-বিজয়া ও নারদ মুনির মূর্তি থাকে। নবমীতে ষোড়শোপচারে পুজো, তিন বার চণ্ডীপাঠ, মাতৃমন্দিরে দরিদ্রনারায়ণ সেবা। দশমীর দিন দশোপচারে পুজো। এদিন সন্ধ্যারতির পর যাত্রাগানের আসর বসে। একাদশীর দিনেও দশোপচারে পুজো। পরে বিসর্জনকৃত্য সম্পন্ন হয়। ধুনুচিনৃত্য, কর্পূরারতি, কনকাঞ্জলি প্রভৃতি অনুষ্ঠিত হয়। শেষে বাদ্যঘণ্টা ও শোভাযাত্রা-সহকারে মায়ের দিঘিতেই প্রতিমা নিরঞ্জন। পুজো উপলক্ষে আশ্রমপ্রাঙ্গণে মেলা বসে।
কথিত আছে, পরের বছর সারদা দেবী জগদ্ধাত্রী পুজো বন্ধ করে দিতে চাইলে দেবী জগদ্ধাত্রী স্বপ্নাদেশে তাঁকে পুজো বন্ধ করা থেকে নিরস্ত করেন। এরপর প্রথম চার বছর পুজো হয়েছিল শ্যামাসুন্দরী দেবীর নামে; দ্বিতীয় চার বছর সারদাদেবীর নামে, তৃতীয় চার বছর তাঁর কাকা নীলমাধব মুখোপাধ্যায়ের নামে। বারো বছর পরে সারদাদেবী আবার পুজো বন্ধ করবার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শোনা যায়, সেবারও জগদ্ধাত্রীর স্বপ্নাদেশে শেষ পর্যন্ত তিনি নিরস্ত হন। জীবদ্দশায় প্রতি বছরই জগদ্ধাত্রী পূজায় উপস্থিত থাকতেন সারদা দেবী। ১৯১৯ সালে তিনি এই পুজোয় শেষবার উপস্থিত ছিলেন। পরের বছরই তিনি প্রয়াত হন।