Rain in Bengal: জলের তলায় জমি! অকালবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ধান, আলু ও পিয়াঁজচাষে...

Rain in Bengal: পাকা ধানে মই! মাথায় হাত শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের কৃষকদের। এদিকে কালনায় ক্ষতির মুখে পিয়াঁজচাষিরা। বিপুল লোকসানের আতঙ্কে বিভিন্ন জেলার আলুচাষিরাও। শঙ্কায় সবজিচাষিরাও।

Updated By: Dec 7, 2023, 08:05 PM IST
Rain in Bengal: জলের তলায় জমি! অকালবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা ধান, আলু ও পিয়াঁজচাষে...

জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাংলার উপকূলবর্তী এলাকায় বুধবার রাত থেকেই শুরু হয়েছে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি, সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। আর আজ, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। মেঘলা আকাশে মাঝে মাঝে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি পড়ছে। কোথাও রীতিমতো জোরেই। মিগজাউমের জেরে লাগাতার বৃষ্টিতে জেলায় জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত আমন ধান, পিয়াঁজ ও আলু চাষ। এই সব চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা।

আরও পড়ুন: West Bengal Weather Update: এবার কয়েক ডিগ্রি কমবে রাতের তাপমাত্রা! ঝকঝকে রোদ আর কনকনে শীত কবে থেকে?

মাথায় হাত শস্যগোলা পূর্ব বর্ধমানের কৃষকদের।  সবে খরিফ মরশুমের ধান মাঠ থেকে তুলতে শুরু করেছিলেন কৃষকরা। আর তার মধ্যেই বাধ সাধল আবহাওয়া। মিগজাউমের প্রভাবে কৃষকদের মাথায় যেন বজ্রপাত। বুধবার রাত থেকে একটানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন  হয়েছে জমি। জমিতে কাটা ধান পড়ে আছে। কোথাও মাঠের ধান জলে ডুবে গিয়েছে। ধান কেটে বা আঁটি বেঁধে মাঠে ফেলে রেখেছিলেন। সেই ধান বৃষ্টির জলে কার্যত ডুবে রয়েছে। পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম, ভাতার, মঙ্গলকোট, খণ্ডঘোষ, রায়না, মেমারি, গলসি, জামালপুর-সহ জেলার  সর্বত্র একই ছবি। যাঁরা ধান খামারে আনার পর ঝাড়াই করার কাছ শুরু করেছিলেন তাঁরাও চোখের সামনেই দেখছেন কীভাবে তাঁদের ধান নষ্ট হচ্ছে!

শুধুমাত্র ধানের ক্ষেত্রেই নয়, আলুচাষেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এই অকালবৃষ্টিতে। যাঁরা সবে আলুবীজ পুঁতেছিলেন তাঁদের বীজ পচে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। যাঁরা বীজ বোনার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তাঁদের চাষের কাজ অনেক পিছিয়ে গেল। ফলে সব মিলিয়ে মিগজাউমের প্রভাবে জেলা জুড়ে ধান ও আলুচাষের বিশাল ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে কৃষকদের। আউশগ্রামের চাষি গদাধর ঘোষ জানান, জমির বেশির ভাগ ধানই মাঠে পড়ে। টানা বৃষ্টিতে কাটা ধান জমিতে ভাসছে। ধান নষ্ট হয়ে যাবে। ধানের দাম তেমন পাওয়া যাবে না। একই দাবি চাষি পরীক্ষিৎ ঘোষের। তিনি জানান, ধানের ক্ষতির পাশাপাশি আলুচাষেও ব্যাপক সমস্যা তৈরি হল। যাঁরা সপ্তাহদুয়েকের মধ্যে জমিতে আলুর বীজ বসিয়েছেন তাঁদের জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। সুতরাং আলুর বীজ পচে  যাওয়ার সম্ভবনা। 

তবে জেলার কৃষি উপ আধিকারিক নকুলচন্দ্র মাইতি জানান, এখনও পর্যন্ত যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না। ব্লক থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় মাঠ শুকিয়ে ছিল। সুতরাং এই বৃষ্টি থামলেই জল তাড়াতাড়ি মাঠ থেকে শুকিয়ে যাবে। এখনও পর্যন্ত ৮০ শতাংশ জমিতে ধান কাটা হয়ে গিয়েছে। এ বছর খরিফ মরশুমে ধানের জমির পরিমাণ ৩ লক্ষ ৭৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর। পাশাপাশি আলু বসানোর লক্ষ্যমাত্রা
রাখা হয়েছে ৭০ হাজার হেক্টর জমিতে।

একই ছবি হুগলি জেলাতেও। অকাল বৃষ্টিতে আলু চাষের জমি জলের তলায় সেখানে, ক্ষতির আশঙ্কায় হুগলির আলু চাষিদের। হুগলিতে এখন ভরা রবি মরসুম। এখন মাঠে মাঠে আলু চাষের সময়। হুগলি জেলায় এবার ৯১ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। তার পঞ্চাশ শতাংশ জমিতে আলু বসানো হয়েছে গিয়েছে। খরিফের ধান তুলে আলু বসানোর কাজ চলছে সিঙ্গুর, হরিপাল, পোলবা-দাদপুর, পান্ডুয়া, ধনিয়াখালি-সহ বিভিন্ন ব্লকে।
ডিসেম্বরে যখন ঠান্ডা পড়তে শুরু হয় মাটি শুকনো থাকে আকাশ রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে তখনই আলু চাষের উপযুক্ত সময়। কনকনে ঠান্ডায় গাছ বড় হয় আর মাটির তলায় আলু বাড়তে থাকে। এই সয়ম বৃষ্টি হলে আলু চাষে ক্ষতি হয়। মিগজাউমের প্রভাবে নিম্নচাপে গত কয়েকদিন ধরে মেঘলা আকাশ আর ঝিরঝিরে বৃষ্টি হয়েছে বিক্ষিপ্ত ভাবে। গতকাল সন্ধে থেকে শুরু হয় একটানা বৃষ্টি। আজও একই ভাবে কখনও ভারী কখনো মাঝারি বৃষ্টি চলছে জেলায়। আলুর জমিতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। পোলবায় দেখা গেল আলুর জমি থেকে আল কেটে জল বের করার চেষ্টা করছেন চাষিরা। 

অনেক চাষি এসময় ঋণ নিয়ে আলু চাষ করেন। আলু জমিতে দীর্ঘ সময় জল জমে থাকলে মাটির তলায় থাকা আলু পচে যায়। নতুন করে আবার আলু চাষ করতে খরচ হবে। এছাড়া জমি ভিজে থাকায় তাকে আবার আলু চাষের উপযুক্ত করতে সময় লাগবে। ফলে আলু চাষ পিছিয়ে যাবে। চাষ পিছিয়ে গেলে ফলন মার খাবে। তাই আশঙ্কায় চাষিরা।
হুগলি জেলা কৃষি উপ অধিকর্তা প্রিয়লাল মৃধা জানিয়েছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭.০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ বৃষ্টি আরও কিছুটা হবে। বৃষ্টি না থামলে ক্ষতি হবে। থেমে গেলে জমি থেকে জল বেরিয়ে যাবে। তখন হয়তো অতটা ক্ষতি হবে না। তাই এখনই ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করা যাবে না। বৃষ্টি থামলে দেখতে হবে।

এদিকে অকালবৃষ্টিতে পিয়াঁজ ও আলুচাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা কালনাতেও। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় কয়েক বছর পরপর চাষে ধাক্কা খেয়ে ঠিক মতো সামলাতে না সামলাতে এবার অসময়ে নিম্নচাপের বৃষ্টির জেরে সদ্য বপন করা পিয়াঁজ ও আলুর বীজ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে কালনাজুড়ে। অকাল বর্ষণে চোখের সামনে ফসলের ক্ষতি দেখে কপালে ভাঁজ পড়েছে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও বড় চাষিদের। বুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি বৃহস্পতিবার পর্যন্ত থামেনি। কিন্তু ভারী বৃষ্টির জেরে এর মধ্যে যা ঘটবে, তাতে আলু-পিয়াঁজ কৃষকদের কপালে এমনিতেই চিন্তার ভাঁজ অনেকটাই চওড়া হবে। চরম ঝুঁকি নিয়ে আলু ও পিয়াঁজ চাষ করেছেন কালনার কৃষকরা। পূর্ব বর্ধমান জেলার কৃষিপ্রধান মহকুমাগুলির মধ্যে কালনা অন্যতম। সেই ফসলের অন্যতম--আলু, পিয়াঁজ, ধান ও বিভিন্ন সবজি। সদ্য লাগানো আলু ও পিয়াঁজের জমি বৃষ্টিতে একেবারে ডুবে গিয়েছে। তাই ক্ষতির সম্ভাবনা প্রবল।

আরও পড়ুন: Rain in Bengal: বাঁকুড়া-পুরুলিয়া জুড়ে ডুবল ধান ও আলু! অকাল বৃষ্টিতে মাথায় হাত চাষিদের...

কাটোয়া মহকুমা জুড়েও হয়েছে বিপুল বৃষ্টি। গতকাল সন্ধে থেকে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল থেকেও চলছে টানা বৃষ্টি। সকাল থেকেই মেঘলা আকাশ। কখনো টিপটিপ করে কখনও জোরে বৃষ্টি। ব্যাহত জনজীবন। ব্যাহত কৃষিও।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

.