ঠান্ডা মাথায় ছক কষে খুনের আগে রেকি! সুতপার গতিবিধি সুশান্তকে জানিয়েছিল কোনও বান্ধবী?
খুনের ঘটনার আগে বহরমপুরে ঠিক কতবার এসেছিল সে?
নিজস্ব প্রতিবেদন : সোমবার সন্ধ্যায় বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকার নারকীয় হত্যাকাণ্ড চমকে দিয়েছে সবাইকে। নৃশংস ওই খুনের ঘটনার আতঙ্কিত এলাকাবাসী। ভরসন্ধ্যায় কোপানো হয় বহরমপুর গার্লস কলেজের তৃতীয় বর্ষের পাঠরত ছাত্রীকে। মেসের সামনে ঘটা নৃশংস এই হত্যালীলায় স্থানীয়রা বাধা দিতে আসার পরই পালায় আততায়ী। এরপরই কলেজছাত্রীকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে মুর্শিদাবাদ পুলিস জেলার পুলিস।
জঙ্গিপুর পুলিস জেলার পুলিশ ও স্পেশ্যাল অপারেশন গ্রুপের সাহায্যে চারিদিকে চলে তল্লাশি অভিযান। শেষে খুনের ঘণ্টা চারেকের মধ্যেই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়। সোমবার রাতেই সাংবাদিক বৈঠক করেন মুর্শিদাবাদ পুলিস জেলার পুলিস সুপার কে শবরী রাজকুমার। তিনি জানান, অভিযুক্তকে ধরতে নাকা চেকিং শুরু হয়। তারপর রাত প্রায় ১০টা ১৫-র দিকে সুশান্ত চৌধুরী নামে ওই অভিযুক্ত যুবককে গ্রেফতার করা হয়। জঙ্গিপুর পুলিস জেলার সামসেরঞ্জ থানার পুলিস অভিযুক্তকে আটক করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি ধারালো অস্ত্র, রক্তের ছাপ লাগা জামা এবং নকল বন্দুক।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই যুবক মালদার পাকুড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। মঙ্গলবার ধৃতকে বহরমপুরের সিজেএম আদালতে তোলা হলে ১০ দিনের পুলিস হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। তদন্তে সামনে এসেছে, বহরমপুরে ওই এলাকায় একাধিকবার রেকি করেছিল ধৃত সুশান্ত। তাহলে কি একেবারে ছক কষে পরিকল্পনাফিক-ই প্রেমিকাকে খুন? এবার উঠছে সেই প্রশ্ন। প্রশ্ন উঠছে, নারকীয় এই ঘটনার পেছনে কি স্থানীয় কারও মদত পেয়েছিল সুশান্ত? খুনের ঘটনার আগে বহরমপুরে ঠিক কতবার এসেছিল সে? তরুণীর গতিপ্রকৃতির ওপর কি নজর রেখেছিল সে?
পুরো ঘটনার কিনারা পেতে সবদিক খতিয়ে দেখে তদন্ত করছে পুলিস। ইতিমধ্যেই ছাত্রীর বাবা জানিয়েছেন যে, বহুবার ফোনে তাঁর মেয়েকে হুমকি দিয়েছিল ওই যুবক, যা বাড়িতে জানিয়েছিল সুতপা। সুশান্তর ফেসবুক প্রোফাইলেও নাম না করে লেখা হুমকির পোস্টও ইতিমধ্যেই ভাইরাল। এখন নিহত তরুণী ও যুবকের ফোন হেফাজতে নিয়ে কললিস্ট খতিয়ে দেখছে পুলিস। কললিস্ট থেকে নতুন কোন তথ্য সামনে আসে কিনা, সেটাই জানতে মরিয়া পুলিস। সুতপার কোনও বান্ধবীর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সুশান্ত তাঁর খোঁজখবর নিত কিনা? তাও খতিয়ে দেখছে পুলিস।
ওদিকে মেয়ের খুনের খবর পেয়েই মালদা থেকে বহরমপুরে আসে নিহত তরুণীর শোকস্তব্ধ মা, বাবা। ময়নাতদন্তের পর ওই যুবতীর দেহ নিয়ে মালদার ফিরে যায় পরিবার। অন্যদিকে অভিজাত জনবহুল ওই এলাকায় প্রকাশ্যে খুনের ঘটনায় আতঙ্কিত স্থানীয়রা। ইতিমধ্যেই ওই মেসবাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন অন্যান্য আবাসিকরা।