কৌশলে এড়ালেন তিস্তা-প্রসঙ্গ, ভারতের প্রতি কেবলই কৃতজ্ঞতার সুর হাসিনার গলায়
অনুষ্ঠানের সূচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রত্যেকটি কথায় উঠে এসেছে ভারতের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসার কথা।
নিজস্ব প্রতিবেদন: শান্তিনিকেতনে বহু প্রতিক্ষীত বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করলেন নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বক্তব্য রাখতে গিয়ে ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
এদিন হাসিনার বক্তব্যজুড়ে ছিল দু'দেশের যৌথ ঐতিহ্য ও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের প্রতি ভারতের নানা অবদানের জন্য কৃতজ্ঞতা। মুজিবকন্যা এদিন বলেন, ২০১০ সালে ভারত সফরে এসে শান্তিনিকেতনে বাংলাদেশ ভবন নির্মাণ ব্যাপারে কথা বলেছিলেন তিনি। ভবন নির্মাণের ব্লু প্রিন্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। প্রায় ৮ বছরের মাথায় আজ বাস্তবায়িত হল দুই বাংলার স্বপ্ন। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন হল গুরুদেবের আশ্রমে।
PM Narendra Modi, Bangladesh PM Sheikh Hasina & West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee at Bangladesh Bhavan in #SantiNiketan. pic.twitter.com/2dpTfAN0BH
— ANI (@ANI) ২৫ মে, ২০১৮
অনুষ্ঠানের সূচনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রত্যেকটি কথায় উঠে এসেছে ভারতের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসার কথা।
ছিটমহল বিনিময়, সীমান্ত চুক্তির প্রসঙ্গ উত্থাপন করে হাসিনা বলেন, ‘‘মুজিব-ইন্দিরার চুক্তির পর বাংলাদেশে আগেই স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে আইন পাশ হয়ে গেলেও ভারতে সেটা হয়নি। ভারতে দীর্ঘদিন পরে ভারতের সংসদে ‘৭১ সালের মতো দলমত নির্বিশেষে সকলে মিলে সব সংসদ সদস্য মিলে এক হয়ে বিলটি পাশ করে দিল। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়িত হল।’’
Rohingyas have taken shelter in Bangladesh. We've given them a place on humanitarian grounds. We want them to return to their country as early as possible. I request you to help us to interact with Myanmar so that they take Rohingyas back: Bangladeshi PM Sheikh Hasina pic.twitter.com/tpV5SDuTvC
— ANI (@ANI) ২৫ মে, ২০১৮
তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছিটমহল নিয়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। সেখানে ভারত ও বাংলাদেশ যেভাবে ছিটমহল বিনিময় করেছে, তার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান হাসিনা। হাসিনা বলেন, ‘‘ভারত আমাদের প্রতিবেশী, আমাদের বড় বন্ধু। ভারতের অবদান আমরা ভুলব না। যে কোনও সমস্যা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে সমাধান করতে পারব। আমাদের উন্নয়নে ভারত সহযোগিতা করে যাচ্ছে।’’
PM Narendra Modi and Bangladesh PM Sheikh Hasina inaugurate Bangladesh Bhavan in #SantiNiketan. #WestBengal Chief Minister Mamata Banerjee also present pic.twitter.com/bqFO3XpHnI — ANI (@ANI) ২৫ মে, ২০১৮ বক্তব্য রাখার মাঝেই ১৯৭৫ সালের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। কীভাবে সেসময় তাঁদের পরিবারের ওপর হামলা চলেছিল, কীভাবে তাঁর আত্মীয়রা প্রাণ হাতে নিয়ে ভারতে এসেছিলেন, সেসময় কীভাবে ভারত পাশে দাঁড়িয়েছিল, তারই স্মৃতিচারণা করেন তিনি। হাসিনা বলেন, ‘সেইসময় ভারত যদি আমাদের পাশে না দাঁড়াত, তবে জানি না আমাদের কী হত। সেসময় ভারতের স্নেহছায়া যদি না পেতাম, যদি আমাদের জীবন অন্যদিকে মোড় নিত।’
এদিন রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও উঠে আসে হাসিনার কথায়। তিনি বলেন, ‘প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। আমরা তাদের তাড়াতে পারিনি। এক্ষেত্রেও আমরা ভারতকে পাশে পেয়েছি।’
বাংলাদেশ ভবনে যে দুই দেশের ভাষা, বাংলা ভাষার চর্চা হবে, তা নিয়ে গবেষণা হবে, এদিনের বক্তৃতায় সেকথাই বারবার বলেছেন শেখ হাসিনা। ‘ভারত বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক-এ কথায় বলে নিজের বক্তব্য শেষ করেন হাসিনা।
প্রসঙ্গত, এদিনের অনুষ্ঠানে কথার বলার মাঝে, একবার তিস্তা প্রসঙ্গ উত্থাপন করেননি শেখ হাসিনা। তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি এখনও রূপায়িত হয়নি। এই নিয়ে কি অনুষ্ঠানের বাইরে মোদী-হাসিনা আলোচনা হবে না, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
এরপরই বক্তৃতা রাখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তির লক্ষ্যে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হন তিনিও। সব পরিস্থিতিতেই বাংলাদেশের পাশে থাকার আরও একবার আশ্বাস দেন মোদী।