বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে মোদীর কণ্ঠে আবেগ, ক্ষমা চাইলেন ছাত্রছাত্রীদের কাছে
এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চে মোদীকে বারবারই আবেগ প্রবণ হতে দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কবি গুরুর ভূমিতে এত আচার্যের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে আমি ধন্য।’ তবে এরই ফাঁকে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন আচার্য মোদী।
নিজস্ব প্রতিবেদন: তিনি আচার্য। তিনি রবীন্দ্রানুরাগী। তাঁর কথায় এর আগেও বারবার উঠে এসেছে রবিঠাকুরের কথা এবং কবিতার পংক্তি। শুক্রবার সেই মোদীই বিশ্বভারতীর সমাবর্তনের মঞ্চে কবিগুরুকে নিয়ে তাঁর আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। পদাধিকার বলে প্রধানমন্ত্রী মোদী বিশ্বভারতীর আচার্য। এদিন আচার্যের ভাষণের শুরুতেই উচ্চারিত হল বাংলা ভাষা। বাংলাতেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ‘শুভসকাল’ও ‘প্রণাম’ জানিয়ে নিজের বক্তব্য শুরু করেন নমো। শান্তিনিকেতনে এসে তিনি কতটা উচ্ছ্বসিত, তাও ব্যক্ত করেছেন আধভাঙা বাংলাতেই। তিনি এদিন বলেন, ‘শান্তিনিকেতনে এসে অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করছি।’
এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চে মোদীকে বারবারই আবেগ প্রবণ হতে দেখা গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কবি গুরুর ভূমিতে এত আচার্যের সঙ্গে সময় কাটাতে পেরে আমি ধন্য।’ তবে এরই ফাঁকে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন আচার্য মোদী। তিনি বলেন, ‘আসার সময়েই ছাত্রছাত্রীদের ইশারা আমার চোখে পড়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছে এখানে পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। আচার্য হিসাবে আমি তাই ছাত্রছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।’ প্রসঙ্গত, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে জল নিয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি, পাউচ প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল, যা পর্যাপ্ত ছিল না বলে অভিযোগ।
আরও প়ডুন: এল সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত, বিশ্বভারতীর সমাবর্তন অনুষ্ঠান মঞ্চে মোদী-হাসিনা-মমতা
মোদী বলেন, ‘একজন আচার্য হিসাবে আজ আমি এখানে এসেছি। কেবলমাত্র গণতন্ত্রের কারণেই আমি এই সম্মান পেলাম। এরপর আবেগ জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘গাড়ি থেকে নেমে যখন হেঁটে আসছিলাম, তখন প্রতি পদক্ষেপেই মনে হচ্ছিল, কখনও এই ভূমিতে কবিগুরুর পদধূলি পড়েছে। এখানে বসেই কত কবিতা লিখেছেন ঠাকুর, কত গানের সুর ভেবেছেন!’ মোদী আরও বলেন, ‘শান্তিনিকেতন আমার কাছে মন্দিরের মতো। মন্দিরে যেমন মন্ত্রচ্চারণে মন প্রাণিত হয়, শান্তিনিকেতনে এসে আমার তেমন মনে হচ্ছে।’ কবিগুরুর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আজ দেশের সর্বত্র পূজিত। তাঁকে নিয়ে আজও বিশ্বের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে চর্চা হয়। তিনিই প্রথম বিশ্ব নাগরিক।’
PM Narendra Modi, Bangladesh PM Sheikh Hasina & West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee at Bangladesh Bhavan in #SantiNiketan. pic.twitter.com/2dpTfAN0BH
— ANI (@ANI) ২৫ মে, ২০১৮
আচার্য যখন নস্ট্যালজিক, তখন নিজেদের আবেগও ধরে রাখতে পারেননি ছাত্রছাত্রীরা। কখনও নির্বাক দৃষ্টিতে, তখন করতালিতে ছাত্রছাত্রীরাও উপভোগ করেছেন আচার্যের প্রতিটি কথা, প্রত্যেকটি শব্দ। মোদী বলেন, ‘আম্রকুঞ্জ অনেক বছর ধরে ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী। আজ যারা ডিগ্রি পেয়েছেন, তাঁদের অনেক শুভেচ্ছা।’ তবে এর সঙ্গেই বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের মোদীর পরামর্শ, ‘কেবল ডিগ্রি অর্জন করলেই হবে না। আপনাদের নিয়ে অনেক আশা রয়েছে। দেশের গ্রামের বিকাশে নিজেদের সৃষ্টিকে কাজে লাগান। আপনাদের হাত ধরেই গ্রামের উন্নয়ন হবে।’
বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের উজ্জীবিত করতে ফের কবিগুরুর গানের আশ্রয় নেন মোদী। তিনি বলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।।’ তিনি বলেন, ‘দেশের বিকাশে নিজেই এগিয়ে আসুন।’ এরপরই তিনি বলেন, ‘সবসময় রাখবেন, দেশের স্বার্থ যদি আপনি এক পা এগিয়ে যান, সরকার চার পা এগোবে।’ বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীদের মনে একরাশ উদ্দীপনা আর আশার আলো জুগিয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করেন আচার্য মোদী।