চলে গেলেন ময়দানের `মান্নাদা`
ময়দানে তাঁকে সবাই চিনতেন মান্নাদা বলে। শৈলেন মান্না, ফ্রি কিক স্পেশালিস্ট। ফুটবলে পা লাগালেই ম্যাজিক। ১৯২৪ সালের পয়লা সেপ্টেম্বরে জন্ম শৈলেন মান্নার। হাওড়ায় মামার বাড়িতে থাকার সময়, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্লাব ফুটবলে প্রবেশ করেন তিনি।
ময়দানে তাঁকে সবাই চিনতেন মান্নাদা বলে। শৈলেন মান্না, ফ্রি কিক স্পেশালিস্ট। ফুটবলে পা লাগালেই ম্যাজিক। ১৯২৪ সালের পয়লা সেপ্টেম্বরে জন্ম শৈলেন মান্নার। হাওড়ায় মামার বাড়িতে থাকার সময়, মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ক্লাব ফুটবলে প্রবেশ করেন তিনি। তখন কলকাতা ফুটবলে হাওড়া ইউনিয়ন সেকেন্ড ডিভিশন ক্লাব।
পরপর দুটি মরসুম হাওড়া ইউনিয়নে তাঁর দুরন্ত পারফরম্যান্স নজর এড়ায়নি তত্কালীন নির্বাচকদের। ১৯৪২ সালে তাঁর জায়গা হয় মোহনবাগান দলে। তারপর থেকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ভারতীয় ফুটবলের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ডিফেন্ডারকে। পায়ের শটে এতোটাই জোর ছিল যে বিপক্ষের গোলরক্ষক রীতিমতো শঙ্কিত থাকতেন। তাঁর শটের জোর এতোটাই ছিল যে শোনা যায়, একবার তাঁর শটের বল ধরতে গিয়ে বিপক্ষের গোলরক্ষকের হাত ভেঙে গিয়েছিল। এরপর টানা ১৯ বছর মাঠ কাঁপিয়েছেন মান্নাদা। তাঁর পায়ের মুন্সিয়ানার জোরে ভারতীয় ফুটবল দলেও অল্প দিনেই জায়গা করে নেন তিনি। ১৯৪৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে ভারতীয় ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।
একমাত্র ১৯৫০ সালে ফুটবল বিশ্বকাপে সুযোগ পায় ভারতীয় ফুটবল দল। সে সময় বিশ্বকাপ দলের সদস্য ছিলেন শৈলেন মান্না। কিন্তু মুম্বই থেকেই ফিরিয়ে আনা হয় ফুটবল দলকে। বিশ্বকাপে না যেতে পারার সেই আক্ষেপটার কথা জীবনভর ভুলতে পারেননি মান্নাদা। কথা প্রসঙ্গে চিরকালই সেই ঘটনার উল্লেখ করতেন। যেমন উল্লেখ করতেন ১৯৫১ সালে তাঁর অধিনায়কত্বে এশিয়ান গেমসে ভারতীয় ফুটবল দলের সোনা জয়, ১৯৫২ থেকে ৫৬ সাল, টানা ৪ বার কুয়ানড্রাগুলার টুর্নামেন্ট জেতার কথা। ১৯৫২-তে তাঁরই নেতৃত্বে অলিম্পিকে খেলে ভারতীয় ফুটবল দল। এর ঠিক একবছর পরই ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ইয়ারবুকে বিশ্বের সেরা ১০ ফুটবল অধিনায়কের মধ্যে জায়গা করে নেন মান্নাদা।
শৈলেন মান্নার ফুটবল জীবন ১৯৬০-এ শেষ হলেও ফুটবল মাঠের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল চিরকালের। ময়দানে তিনি সকলেরই মান্নাদা। অতি মিশুকে এবং নম্র স্বভাবের মানুষটি মোহনবাগান ক্লাবের প্রশাসনের দায়িত্বেও ছিলেন। ১৯৭১-এ ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান দেয়। গোষ্ট পালের পর তিনিই প্রথম ফুটবলার যাঁকে, পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হয়। ২০০০ সালে তাঁকে সহস্রাব্দের সেরা ফুটবলারের সম্মান দেয় অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন। ২০০১-এ মোহনবাগান রত্ন সম্মান দেওয়া হয় মোহনবাগান ক্লাবের পক্ষ থেকে। আজীবন ফুটবলকেই ভালসবেসে গেছেন অমায়িক স্বভাবের মানুষটি। দীর্ঘ রোগ ভোগের পর রবিবার গভীর রাতে জীবনাবসান হল তাঁর। বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ ক্রীড়া মহল।