সাঙ্গার শেষ বক্তৃতা,'জেতার পথে কখনও হেরে যাওয়ার ভয় পেয়ো না'
শেষবার ২২ গজে কুমার সাঙ্গাকারা। ব্যাট কিংবা আর উইকেট কিপিং গ্লাভস হাতে নয়। মাইক হাতে সাঙ্গা। নিজের সঙ্গে ২২ গজের সম্পর্কের ইতি। জীবিত অবস্থায় নিজের মৃত্যুর শোকপ্রস্তাব পাঠ করতে বলা হলে যেমনটা হয়, ঠিক ততটাই বেদনা এদিন সাঙ্গার সুরে। কথা বলতে বলতে থামলেন, আবার কিছুটা বললেন, আবার থামলেন, শেষ হল গুড বাই দিয়ে। শেষ বক্তৃতায় নিজের ছোট বেলা থেকে ২২ গজে ক্রিকেট প্রেমের কথা জানিয়ে গেলেন সাঙ্গা। আজ আর চার ছক্কার কথা নয়, শুধুই স্মৃতিচারণায় ঋণগ্রস্ত সাঙ্গার মুখে শোনা গেল, "আমি অনেক মানুষের কাছে ঋণী। আমার সতীর্থরা, আমার স্কুলের বন্ধুরা, আমার সব কোচ, আমার সব প্রাক্তন অধিনায়ক সবাইয়ের কাছে আমি ঋনী। প্রতিজনের প্রতিই আমার সমান শ্রদ্ধা রইল"।
ওয়েব ডেস্ক: শেষবার ২২ গজে কুমার সাঙ্গাকারা। ব্যাট কিংবা আর উইকেট কিপিং গ্লাভস হাতে নয়। মাইক হাতে সাঙ্গা। নিজের সঙ্গে ২২ গজের সম্পর্কের ইতি। জীবিত অবস্থায় নিজের মৃত্যুর শোকপ্রস্তাব পাঠ করতে বলা হলে যেমনটা হয়, ঠিক ততটাই বেদনা এদিন সাঙ্গার সুরে। কথা বলতে বলতে থামলেন, আবার কিছুটা বললেন, আবার থামলেন, শেষ হল গুড বাই দিয়ে। শেষ বক্তৃতায় নিজের ছোট বেলা থেকে ২২ গজে ক্রিকেট প্রেমের কথা জানিয়ে গেলেন সাঙ্গা। আজ আর চার ছক্কার কথা নয়, শুধুই স্মৃতিচারণায় ঋণগ্রস্ত সাঙ্গার মুখে শোনা গেল, "আমি অনেক মানুষের কাছে ঋণী। আমার সতীর্থরা, আমার স্কুলের বন্ধুরা, আমার সব কোচ, আমার সব প্রাক্তন অধিনায়ক সবাইয়ের কাছে আমি ঋনী। প্রতিজনের প্রতিই আমার সমান শ্রদ্ধা রইল"।
২২ গজে সাঙ্গার সাফল্যের তালিকাটা লম্বা। টেস্টে সবথেকে দ্রুত ১০ হাজার রান করার শীর্ষ তালিকায় যাদের নাম রয়েছে, সেই সকল কিংবদন্তীর মধ্যে সাঙ্গা অন্যতম। এই মাইলস্টোন পেরোনোর অনুপ্রেরণা কে? সাঙ্গা কৃতিত্ব দিলেন নিজের বাবা মাকেই। "আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেন, আমার অনুপ্রেরণা কে? আমাকে কখনই বাবা মা ছাড়া কারো কথা ভাবতেই হয়নি"। কথা বলতে বলতে একটু থেমে সাঙ্গা বললেন মা আর বাবাই আমার অনুপ্রেরণা। (কিছুটা থেমে) আমি দুঃখিত। আমি তোমাদের অপ্রস্তুত করতে চাই না, কিন্তু তোমরাই আমার প্রেরণা। আমি তোমার গর্ভে জন্মগ্রহন করে গর্বিত," নিজের মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন কুমার সাঙ্গাকারা। "আমাকে যখন আমার সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, অনেকেই বলেন বিশ্বকাপে পরপর ৪টি সেঞ্চুরিই নাকি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সাফল্য। কিন্তু আমি যখন আজ বক্স থেকে পি সারা ওভাল দেখছিলাম, দেখলাম শেষ ৩০ বছরে আমার সমস্ত বন্ধুরা আমার খেলা দেখতে মাঠে উপস্থিত হয়েছেন, এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় সাফল্য বলে আমি মনে করি"।
মাহেলা আউটের পরই ব্যাট করতে নেমেছিলেন সাঙ্গা। ১৫ বছর আগে শুরুটা ছিল এমনই। দেড় দশক পর শেষটা, কাকতালীয় হলেও একই রকম। ক্রিকেটের জীবন থেকে আগেই 'আউট' হয়েছিলেন সাঙ্গা সতীর্থ মাহেলা। প্রাক্তন অধিনায়কের অবসর ঘোষণার পরই নিজের অবসর।
ভারতের বিরুদ্ধে দেশের মাটিতে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক। "ভারতকে হারাতে আমরা যথেষ্ট প্ল্যান করেছিলাম। তোমরা অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। আমার বিদায় বেলায় এই চ্যালেঞ্জিং ক্রিকেটের থেকে বেশি আমার আর কিছু পাওয়ার ছিল না। তোমাদের ধন্যবাদ", শ্রীলঙ্কা সফরে ভারতীয় দলকে নিজের শেষ বক্তৃতায় এই ভাবেই স্মরণীয় করে রাখলেন কুমার সাঙ্গাকারা। সাঙ্গাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপনে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কার বললেন,"সাঙ্গা তুমি, ক্রিকেটের চিরকুমার"।
বিদায় বেলায় নিজের দল ও শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের বর্তমান অধিনায়ক ম্যাথিউসকে সাঙ্গার 'সঞ্জীবনী' বার্তা, " ভয়ডরহীন হও। তোমার কাছে একটা দুর্দান্ত দল রয়েছে। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য এগিয়ে যাও"।
১৫ বছরের সম্পর্ক। অবশেষে বিদায়। মন বলে এখনও ভালবাসা বাকি আছে তোমারও আমার কাছে, কিন্তু বাস্তব বলে 'বিদায় বন্ধু'। ২২ গজের সঙ্গ ছাড়লেন সাঙ্গা। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রথম মাঠে নামা। আর ভারতের বিরুদ্ধে খেলে বিদায়। ২০০০ সাল থেকে ২০১৫। মাহেলা জয়াবর্ধনে আউট, ব্যাট করতে নামলেন ছোট শরীরের এক ক্রিকেটার। তখনও বিশ্ব জানত না, সাঙ্গাই হবেন রণতুঙ্গা, জয়সূর্য, আতাপাতু, চামিন্ডা ভাস, মুরলীদের লঙ্কাদলের নায়ক। কিন্তু ইতিহাসকে খণ্ডায়, এমন সাধ্যি আছে, কার? পরিণত থেকে আরও পরিণত সাঙ্গাই হয়ে উঠলেন কিংবদন্তী সাঙ্গাকারা। পি সারা ওভালে শেষবার শ্রীলঙ্কার জার্সি গায়ে মাঠে নামলেন তিনি। প্রত্যাশা ছিল, ডবল সেঞ্চুরি করে ডন ব্র্যাডম্যানকে ছুয়ে ইতিহাস তৈরি গড়ে যাবেন তিনি। ব্যাটে প্রত্যাশা পূর্ণ না হলেও বিদায় বেলায় নিজের শেষ বক্তৃতায় মন জিতে নিলেন সবার। চোখের কোণায় মুক্ত ঝরিয়ে হৃদয়ে তুফান তুলে, সাঙ্গা বললেন, "'জেতার পথে কখনও হেরে যাওয়ার ভয় পেয়ো না"।