বদলার স্লোগান বিসর্জন আরব সাগরে, এবার ইডেনের লড়াই ৫০-৫০
কথা ছিল বদলার, ছিল অনুচ্চারিত হোয়াইট ওয়াশের প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু আরব সাগরের জলে এই সব কিছুই বিসর্জন দিয়ে এলেন ধোনি বাহিনী। সঙ্গে দেশের মাঠে স্পিনিং ট্র্যাকে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্ধী ভাবার টিম ইন্ডিয়ার সমস্ত গরিমারও সলিল সমাধি হল ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে। ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে কুক বাহিনীর কাছে ১০ উইকেটে পরাজিত হল ভারত।
কথা ছিল বদলার, ছিল অনুচ্চারিত হোয়াইট ওয়াশের প্রতিশ্রুতিও। কিন্তু আরব সাগরের জলে এই সব কিছুই বিসর্জন দিয়ে এলেন ধোনি বাহিনী। সঙ্গে দেশের মাঠে স্পিনিং ট্র্যাকে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্ধী ভাবার টিম ইন্ডিয়ার সমস্ত গরিমারও সলিল সমাধি হল ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে। ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টে কুক বাহিনীর কাছে ১০ উইকেটে পরাজিত হল ভারত। এবং বোধহয় শোচনীয়তার শেষ সীমার নিক্তিতেই শুধুমাত্র মাপা যায় এই পরাজয়কে। ভারতীয়দের সমস্ত খেল খতম হয়ে গেল চারদিনেই। মোতেরাতে ৯ উইকেটে পরাজয়ের বড় নির্মম শোধ তুলল বিশ্বের অধুনা এক নম্বর টেস্ট দল। সব হিসাবনিকাশ একেবারে `উল্টে দেখুন পাল্টে দিলাম` করলেন কুক এন্ড কোং। ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস গুটিয়ে গেল মাত্র ১৪২ রানে। গৌতম গম্ভীর (৫৬) ছাড়া আর বাকি সবাই মোটামুটি `শুধু যাওয়া আসা`-র ফর্মুলা বেশ মন দিয়ে পালন করে গেলেন। জিততে হলে ৫৮ রান করতে হবে। এমন একটা শর্তে ব্যাট করতে নেমে ঠিক যা যা করা দরকার সেটাই করলেন ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার। দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ৯.৪ ওভারের মধ্যেই জয় পেল ইংরেজরা। কুক (১৮) আর কম্পটন(৩০) হাসতে হাসতে দলকে লক্ষ্যে পৌঁছে দিলেন। সঙ্গে ইডেন টেস্টের জন্য প্রয়জোনীয় আত্মবিশ্বাসটুকুও দলের ড্রেসিংরুমে বন্দি করলেন।
ধোনির মন পসন্দ ঘূর্ণি পিচ যে মন্টি পনেসরের মনের দোসর হয়ে উঠবে তার হদিস কে বা রেখেছিল। প্রথম ইনিংসে ৫ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর শিকার আরও ৬। ব্রিটিশ এই অফস্পিনার কার্যত ওয়াংখেড়ের পিচে ঘূর্ণি নাচন নাচালেন ভারতের সব মহারথীদেরই। এবার বোধহয় ইংল্যান্ডে খেলতে গেল ভারতীয়দের জন্য এরকম স্পিন পিচই বানাবেন ইংরেজরা। কিন্তু যে পিচে পনেসররা এই পরিমাণে সফল সেখানে ভারতীয় স্পিনারদের এই দুর্দশার কারণ বড়ই রহস্যের। অথচ মনে করা হয়েছিল তিন স্পিনারের ত্রিফলা আক্রমণে চোখে সর্ষেফুল দেখবে ব্রিটিশরা। কিন্তু কোথায় কী? ওঝা, অশ্বিন আর অভিজ্ঞ হরভজন, তিন জনই এখন বোধহয় চোখের সামনে সর্ষের ক্ষেত দেখছেন। স্পিন ভেলকি তো দূরে থাক, লাইনলেংথ বলে যে একটা শব্দের অস্তিত্ব আছে সেটুকুও তাঁরা বোধ হয় ভুলে গিয়ে ছিলেন। ইস্! ধোনির দলে তো একটাও অনিল কুম্বলে নেই। ফলে যা হওয়ার তা হল। তিন স্পিনারের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের ভরপুর ফায়দা লুটলেন পিটারসেনরা। তাও ওঝাতো ৫টা উইকেট পেয়েছেন (যদিও তাতে কাজের কাজ কিছুই হল না), বাকি দুজনের কথা বিশেষ না বলাই ভাল। শুধু দর্শক হিসাবে আফসোস একটাই, ভাজ্জি ম্যাজিক বোধহয় সত্যিই এখন শুধুই ইতিহাস।
এত গেল বোলারদের কথা? কী করলেন ভারতের ব্যাটিং মহারথীরা? ঘূর্ণি পিচে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভাল খেলার দীর্ঘদিনের যে সুনাম ছিল সেটা ঘোচাতেই বোধহয় তাঁরা ওয়াংখেড়েতে খেলতে নেমে ছিলেন। একা পূজারা ছাড়া পনেসরদের সামনে বাকি সবাইকে কলেজ স্তরের ব্যাটসম্যান মনে হয়েছে। পূজারা বিক্রমে প্রথম ইনিংসে কোনরকমে ৩২৭ রান করতে পেরেছিল টিম ইন্ডিয়া। দ্বিতীয় ইনিংসে পূজারা ব্যর্থ, দলের সব জারিজুরিও শেষ। অন্যদিকে পিটারসেন এবং কুকের লড়াইকে সত্যিই কুর্ণিশ করতে হয়। সব বিতর্কের জবাব যে তাঁর ব্যাটেই লুকিয়ে আছে সেটাই প্রমাণ করলেন কেপি। যে ভাবে, যে দাপটের সঙ্গে তিনি ভারতীয় বোলারদের শাসন করলেন তা এককথায় অনবদ্য। আর ক্যাপ্টেন কুক? প্রত্যেকদিনই যেন তিনি নিজেকে ছাপিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নামেন। অধিনায়ক হিসাবে পরপর চার টেস্টে চার সেঞ্চুরি। এই বিশ্বরেকর্ডই তাঁর বর্তমান ফর্ম ব্যাখা করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু যে পিচে কেপি-কুক এতটা সফল সে পিচে কেন ব্যর্থ ভারতের ব্যাটিং মহারথিরা? প্রশ্নগুলো সহজ হলেও উত্তর সত্যিই অজানা।
এবং তিনি, সচিন তেন্ডুলকর। গত ১০ ইনিংসে যাঁর গড় রান ১৫.৩! যে লোকটার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরি সংখ্যা ১০০, যাঁর তুলনা শুধুই তিনি, তাঁর কাছ থেকে সত্যিই কী এটা অভিপ্রেত? সচিন যে রানের পাহাড় তৈরি করে দিয়েছেন সুদূর ভবিষ্যতেও কারোর তা অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। কিন্তু কোথায় গেল সেই রিফলেক্স? ক্রিজ থেকে বেরিয়ে এসে স্ট্রেট ডাইভে সেই স্বপ্নের ওভার বাউন্ডারি? সচিনের অবসরের সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক ফর্ম যে তাঁর অবসর বিতর্ককে বড় বেশি চাঙ্গা করে দিচ্ছে। সামনেই ইডেন টেস্ট। কলকাতার দর্শক চিরকালই সচিনকে বিশেষ সম্মান দিয়েছেন। ইডেনে সচিনের অতীত প্যারফরমেন্স আহামরি না হলেও খারাপ কিন্তু নয়। এখানে তাঁর ব্যাটের জাদু একবার চললেই সব সমালোচনা পাশেই গঙ্গায় তৎক্ষণাত ডুবে যাবে। কিন্তু তা না হলে? বয়স কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না, এই চিরন্তন সত্যিটা বোধহয় সবাইকেই মেনে নিতে হবে।