FIFA World Cup 2022: কাতারে মাঠে নামার আগেই দুর্গত অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখা করবে ডাচ ফুটবল টিম...
FIFA World Cup 2022: বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন নিয়ে প্রত্যেকবারই কিছু না কিছু বিতর্ক তৈরি হয়। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপেও হয়েছিল। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপেও হয়েছে।
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজন নিয়ে প্রত্যেকবারই কিছু না কিছু বিতর্কের অবকাশ তৈরি হয়। ২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপেও হয়েছিল। দেশজোড়া নানা সংকেটের মধ্যেই বিশ্বকাপ পরিকাঠামো নির্মাণে সরকার সেখানে বিপুল অর্থব্যয় করায় দেশবাসী তৎকালীন ব্রাজিল প্রেসিডেন্টের বিপুল সমালোচনা করেছিল। বিতর্ক পিছু ছাড়েনি এ বছরও। বিশ্বকাপ আয়োজনে দারুণ সেজে উঠেছে কাতার। দেশটির পাঁচটি শহরে আটটি স্টেডিয়াম সাজানো হয়েছে। আর সেখানে পরিকাঠামো নির্মাণে যে ভাবে অভিবাসী শ্রমিকদের ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে বহু দিন থেকেই বিশ্বে সমালোচনা চলেছে। বহু শ্রমিক মারা গিয়েছেন এই কাজটি করতে গিয়ে। তাদের যে পরিকাঠামোর মধ্যে রাখা হয়েছিল সেটাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না। অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে পদে পদে এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়ে বার বার প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিশ্বকাপ ফুটবল এই গ্রহের ক্রীড়াদুনিয়ার ‘গ্রেট শো’গুলির অন্যতম। আগামী ২০ নভেম্বর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে শুরু হচ্ছে এই ইভেন্ট । কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসর বসার আগেই বিতর্কের গাঢ় অন্ধকার জমে উঠেছে সেখানে। কিন্তু সেই অন্ধকারেও আলো আছে। আলো এনেছে নেদারল্যান্ডস।
আরও পড়ুন: Lionel Messi | FIFA World Cup 2022 : 'আমরা মোটেই ফেভারিট নই'! মেসির সঙ্গে কথাও বলেন না এই সতীর্থ!
গতকাল, শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের কোচ লুই ফন গাল অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে দেখার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। জানা গিয়েছে, আগামী ১৭ নভেম্বর নেদারল্যান্ড ফুটবল দল ২০ জন অভিবাসী শ্রমিকের সঙ্গে দেখা করবে। তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নেবেন ফুটবলাররা। খেলোয়াড়দের একটি অনুশীলন-সেশনে উপস্থিত থাকার সুযোগও পাবেন শ্রমিকরা।
কেন কাতারের অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে এত হইচই?
কারণ, কাজ করতে গিয়ে তাদের মৃত্যু। গত বছরেই গার্ডিয়ানের মতো সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছিল, ভারত পাকিস্তান বাংলাদেশ নেপাল শ্রীলংকা থেকে কাতারে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় সাড়ে ছ'হাজার জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু ২০২১ সালেই মারা গিয়েছিলেন ৫০ জন বিদেশি শ্রমিক এবং গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ৫০০ জনের মতো। ইংল্যান্ড, জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিষয়টি নিয়ে তুমুল প্রতিবাদ হয়েছে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনগুলির পক্ষ থেকেও কাতারের অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ক্ষুণ্ণের বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। গতবছর মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে কাতারের অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছিল। যদিও কাতারের তরফে জানানো হয়েছিল, এই সব তথ্য বা খবর বিভ্রান্তিকর।
আরও পড়ুন: Pele, FIFA Qatar World Cup 2022: কার হাতে উঠবে সোনার বিশ্বকাপ? জানিয়ে দিলেন পেলে
রয়্যাল ডাচ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন প্রথম থেকেই বিশ্বের হাতেগোনা কয়েকটি ফুটবল দলের মধ্যে একটি, যারা কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ও কাজের পরিবেশ নিয়ে সমালোচনা করে এসেছে। দলটির কোচ লুই ফন গাল বলেছেন-- অভিবাসী শ্রমিকদের ভয়াবহ অবস্থার দিকে মনোযোগ দিতেই আমাদের এই কর্মসূচি। চলতি বছরের শুরুর দিকেও ফন গাল বলেছিলেন, ‘কাতারে বিশ্বকাপ খেলার আয়োজন হাস্যকর।’ সে সময়ে তিনি অভিযোগ করেছিলেন এই বলে যে, শুধু অর্থ ও বাণিজ্যিক কারণে ফিফা টুর্নামেন্টটি উপসাগরীয় দেশটিতে নিয়ে গিয়েছে।
এই প্রেক্ষিতে মাঠে নেমে বলে পা ছোঁয়ানোর আগে যাঁরা মাঠ বা স্টেডিয়াম গড়ে দিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত তাই এক দারুণ মানবিক ছবি হয়ে থেকে যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই। বিশ্ব ফুটবল কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় একটি দল হিসেবে নেদারল্যান্ডসের এই সাহসিক আচরণ এখনই প্রশংসা পেতে শুরু করেছে।