আদালত অবমাননা, সিট-রিপোর্ট: জোড়া রায়ে অস্বস্তিতে মোদী
গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যাকাণ্ড নিয়ে `সিট`-এর রিপোর্ট প্রকাশ ঘিরে আইনি বিতর্কের মধ্যেই নতুন করে অস্বস্তিতে পড়লেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যাকাণ্ড নিয়ে `সিট`-এর রিপোর্ট প্রকাশ ঘিরে আইনি বিতর্কের মধ্যেই নতুন করে অস্বস্তিতে পড়লেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আদালত অবমাননার অভিযোগে এদিন রাজ্য সরকারকে নোটিস পাঠিয়েছে গুজরাট হাইকোর্ট। অন্য দিকে এদিন আমদাবাদের মেট্রোপলিটন আদালত সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-কে আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে গুলবার্গ গণহত্যাকাণ্ডের রিপোর্ট সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন। ২৯ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন আদালত সিদ্ধান্ত নেবে, আবেদনকারী জাকিয়া জাফরির আইনজীবী কবে সিট-রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখতে পারবেন।
২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী গুজরাট দাঙ্গার সময় আমদাবাদের বহু ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁরা। গত বছর হাইকোর্ট দাঙ্গার সময় জ্বালিয়ে দেওয়া ৫৬টি দোকানের মালিককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় রাজ্যকে। কিন্তু সেই আদেশ পালিত হয়নি। এদিন তাই একটি জনস্বার্থ মামলার জেরে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠিয়েছে হাইকোর্ট। কেন হাইকোর্টের নির্দেশ সত্বেও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, সে ব্যাপারে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্য সরকারের কৈফিয়ত তলব করেছ হাইকোর্ট।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০০২ সালের দাঙ্গায় নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে তার নিষ্ক্রিয়তার জন্য আজ সরাসরি ভর্ত্সনা করেছিল গুজরাত হাইকোর্ট। পাশাপাশি `ইসলামিক রিলিফ কমিটি অফ গুজরাত`(আইআরসিজি) নামে একটি সংগঠনের দায়ের করা আবেদনের প্রেক্ষিতে দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০০টি সংখ্যালঘু ধর্মস্থানের কাঠামো সারানোর জন্য গুজরাট সরকারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশও দেয় বিচারপতি ভাস্কর ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি জে বি পারডিওয়ালাকে নিয়ে গঠিত বেঞ্চ। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, এদিন দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে মোদী সরকার আদালত অবমাননার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় উত্তরপ্রদেশ ভোটের মাঝে রাজনৈতিক ভাবে যথেষ্ট বিপাকে পড়ল বিজেপি।
গত সোমবার গুলবার্গ গণহত্যার তদন্ত রিপোর্ট এবং আনুষঙ্গিক নথিপত্র কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়ার ব্যাপারে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে আপত্তি জানিয়েছিল সিট। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গার সময় আমদাবাদের গুলবার্গ সোসাইটি গণহত্যায় নিহত হন প্রাক্তন কংগ্রেস সাংসদ এহসান জাফরি। ওই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন এহসান জাফরির স্ত্রী জাকিয়া জাফরি। তাঁর আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নামে গুজরাত-দাঙ্গার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। কিন্তু তাত্পর্যপূর্ণ ভাবে `সিট`-এর রিপোর্টের ভিত্তিতে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাত দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও রায় দেয়নি শীর্ষ আদালত। `আদালত বান্ধব` রাজু রামচন্দ্রনকে দিয়ে সিট-এর রিপোর্ট পর্যালোচনা করানোর গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বিচারপতি ডি কে জৈনের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ এই মামলার বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার আমদাবাদের ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের উপর ছেড়ে দেয়।
৮ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত 'সিট'-এর তরফে আমদাবাদের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এস ভাটের কাছে সিল-বন্ধ খামে গুলবার্গ গণহত্যা মামলার 'ক্লোজার রিপোর্ট' জমা দেওয়া হয়। গুজরাতের সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় প্ররোচণা দেওয়া বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রাখার অভিযোগ উল্লিখিত হয়নি সিট-রিপোর্টে। অভিযুক্ত অন্য ৫৭ জন রাজনীতিক ও প্রশাসনিক কর্তার বিরুদ্ধেও প্রমাণ সংগ্রহে আপারগতার কথা স্বীকার করেছে সিট। সংবাদমাধ্যমে গুলবার্গ গণহত্যাকাণ্ডের দায় থেকে নরেন্দ্র মোদীকে রেহাই দেওয়ার কথা প্রচারিত হওয়ার পরই সমাজকর্মী তিস্তা শেতলবাদ এবং মুকুল সিনহা মেট্রোপলিটন আদালতে দু'টি পৃথক আবেদনপত্র পেশ করে সিট-রিপোর্টের কপি চেয়েছিলেন। কিন্তু মেট্রোপলিটন আদালত শুধুমাত্র জাকিয়া জাফরিকে রিপোর্টের কপি দেখতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় কিছুটা ধাক্কা খেলেন মোদী-বিরোধী সমাজকর্মীরা। যদিও নিহত কংগ্রেস নেতার স্ত্রী'কে রিপোর্টের প্রতিলিপি দেখার আদালতের নির্দেশ নিশ্চিতভাবেই চাপে রাখল মোদী সরকারকে।