কেন তিস্তার বাড়তি জল পেতে মরিয়া এরাজ্যের প্রতিবেশী দেশ?

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। সারা দেশের ধমনী বেয়ে অসংখ্য নদী স্রোত। তারপরেও কেন তিস্তার বাড়তি জল পেতে মরিয়া এরাজ্যের প্রতিবেশী দেশ? ইতিহাস বলছে, সেই দেশ ভাগের সময় থেকেই নজরে রয়েছে তিস্তা। বাংলাদেশ যত সাবালক হচ্ছে, ততই জোরাল হচ্ছে তিস্তার জলের দাবি।

Updated By: Apr 8, 2017, 08:01 PM IST
কেন তিস্তার বাড়তি জল পেতে মরিয়া এরাজ্যের প্রতিবেশী দেশ?

ওয়েব ডেস্ক: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। সারা দেশের ধমনী বেয়ে অসংখ্য নদী স্রোত। তারপরেও কেন তিস্তার বাড়তি জল পেতে মরিয়া এরাজ্যের প্রতিবেশী দেশ? ইতিহাস বলছে, সেই দেশ ভাগের সময় থেকেই নজরে রয়েছে তিস্তা। বাংলাদেশ যত সাবালক হচ্ছে, ততই জোরাল হচ্ছে তিস্তার জলের দাবি।

১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬১০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশ। সারা দেশ জুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে নদীনালা। তবু চাহিদা মিটছে না বাংলাদেশের। দিন দিন জোরাল হচ্ছে দাবি, আরও পানি চায় তিস্তা থেকে।

ভারত থেকে ৫৪টি নদী গিয়েছে বাংলাদেশে। তার মধ্যে প্রধান হল গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, জলঢাকা ও তিস্তা। তিস্তা আমাদের উত্তরবঙ্গের প্রাণধারা। বাংলাদেশের দাবি, তিস্তার বাড়তি জল পেলে তাদের উত্তরাঞ্চলের চেহারাও বদলে যাবে।

রংপুর, লালমণির হাট, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম আর নিলফামারি। উত্তর বাংলাদেশের এই ৫ জেলা কৃষি অর্থনীতির নিরিখে বাংলাদেশের কাছে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের মোট কৃষিযোগ্য এলাকার ১৫ শতাংশই রয়েছে এই ৫ জেলায়। ৭ লক্ষ হেক্টর জমির চাষ তিস্তার ওপর নির্ভরশীল। 

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ রুটিরুজির জন্য এই ৫ জেলায় থাকে। পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশে ঢোকার পর উত্তর অংশ দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী, যা দৈর্ঘে ১২১ কিলোমিটার। এই ৫ জেলার কৃষি তিস্তার জলের ওপর দারুণ ভাবে নির্ভরশীল। বাংলাদেশের অভিযোগ, এমন গুরুত্বপূর্ণ ভৌগোলিক অবস্থানে তিস্তার জল যতটা পাওয়া দরকার, তার চেয়ে অনেক কম পাচ্ছে তারা।

৩০৯ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার উত্পত্তি সিকিমে। সেই সিকিমেই তিস্তার ওপর গড়ে উঠেছে ৮টি বাঁধ, একাধিক জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প। তার জেরে দুর্বল হয়েছে স্রোত। শুখা মরসুমে উত্তরবঙ্গে তিস্তার জল এখন ১০০ কিউবিক মিটারে নেমে আসে। অথচ বাংলাদেশের দাবি, শুধু জলঢাকা আর তোর্সার জলে দেশের উত্তর অংশের কৃষিকাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিস্তার বাড়তি জল চেয়ে সরব হয়েছে তারা।

তিস্তার ওপর বাংলাদেশের নজর সেই দেশ ভাগের সময় থেকেই।  দুদেশের সীমানা নির্ধারণ নিয়ে RADCLIFFE চুক্তির সময় দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি দাবি করেছিল মুসলিম লিগ। দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ যখন ভাগ হয়, সেই সময় দার্জিলিং জেলায় মুসলিম ছিল মাত্র ২ শতাংশ। তা সত্ত্বেও কেন দার্জিলিংকে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিল মুসলিম লিগ? কারণ সেই তিস্তা। মুসলিম লিগে বুঝেছিল, তিস্তার গতিপথের বড় অংশ অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্রে ঢোকাতে পারলে, দেশের উত্তরাঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি নিয়ে আর ফিরে তাকাতে হবে না।

স্বাধীনতা লাভের পর গত তিন দশকে বাংলাদেশ অনেক বদলেছে। সার্কের সদস্য হয়ে নতুন দিশা পেয়েছে। অতীত থেকে বর্তমান, সময় যত গড়িয়েছে, প্রতিবেশী দেশে তিস্তার গুরুত্ব ততই বেড়েছে।  রাজনৈতিক ভাবে অস্থির বাংলাদেশে আওয়ামি লিগ সরকার জনতার মন জিততে তিস্তা চুক্তি সারতে মরিয়া। আর বিরোধী BNP-র স্লোগান, হয় তিস্তা চুক্তি, নয়তো কিছুই না।

.