খোলনলচে পাল্টে তেরোর রাজনীতি
বছর শেষের সপ্তাহটা আসলেই সারা বছর কী হল, কী না হল তার হিসাবনিকাশ শুরু হয়ে যায়। পেশার তাগিদে বছরের ইতিহাস নিয়ে চলে চরম গবেষণা। এই যে আমাদের বিদায়ী ২০১৩, তাতে যে এত ঘটনার ঘনঘটা ঘটবে তা কি আর ছাই জানা ছিল? আর আমদেরও যে খড়ের গাদা থেকে এভাবে খুঁজে খুঁজে সূঁচ অন্বেষণ করতে হবে তাও তো বুঝতে পারিনি। কিন্তু কী আর করা...চাকরিটা যখন রাখতেই হবে তখন কাজটা করেই ফেলতে হল...
ঋত্বিক মণ্ডল
বছর শেষের সপ্তাহটা আসলেই সারা বছর কী হল, কী না হল তার হিসাবনিকাশ শুরু হয়ে যায়। পেশার তাগিদে বছরের ইতিহাস নিয়ে চলে চরম গবেষণা। এই যে আমাদের বিদায়ী ২০১৩, তাতে যে এত ঘটনার ঘনঘটা ঘটবে তা কি আর ছাই জানা ছিল? আর আমদেরও যে খড়ের গাদা থেকে এভাবে খুঁজে খুঁজে সূঁচ অন্বেষণ করতে হবে তাও তো বুঝতে পারিনি। কিন্তু কী আর করা...চাকরিটা যখন রাখতেই হবে তখন কাজটা করেই ফেলতে হল...
দেশের আমাচে-কানাচে কুড়িয়ে বাড়িয়ে যেখানে যা পেলাম তাই জমা করলাম।
দেশের ১৩ পার্বণ
২০১৩-র ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপট পরিবর্তন ঘটল শ্রীমতী গান্ধীর স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে। শুনতে অবাক লাগলেও, এমনটাই মত রাজনীতির প্রণেতাদের। কারণটাও খুব স্পষ্ট, দিন কতক সোনিয়া খুব একটা ভাল বোধ করছেন না। তা সত্ত্বেও ইঁদুরের কলে পড়া দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারকে অকাল ভোটে যেতেই হল। কিন্তু বিরোধীদের তুলোধনা করতে ভারতের `গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির` নির্বাচনী ব্যাটনটা ধরার জন্য সোনিয়ার স্বাস্থ্য সায় দিল না। কংগ্রেস সভানেত্রীর খারাপ স্বাস্থ্য সংসদের ভিতরেও বার কতক তাঁর দলকে বিপদে ফেলেছে। ক্রাইসিস ম্যানেজার প্রণব মুখার্জির রাজনৈতিক অবসরে চাপ বেড়েছে সোনিয়ার ওপরই। এককথায় রণকৌশল সাজাতে ব্যর্থ সোনিয়া, নিজেই কংগ্রেসের কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতলেন।
অকাল ভোট কালের কারণ হল বিজেপি-কংগ্রেস উভয়ের কাছেই। কংগ্রেসের পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির খাঁড়া কাটিয়ে উঠতে বাধ সাধল অন্তর্বর্তী নির্বাচন। আবার হুড়মুড়িয়ে সাধারণ নির্বাচন এসে পড়ায়, সেনাবাহিনী শক্ত করার সময় পেল না বিজেপিও। মমতা কংগ্রেসের সঙ্গ ত্যাগ করেন সেই ২০১২-র সেপ্টেম্বরে। বছর ঘুরতে না ঘুরতে হাত তুলে নেয় সপা, বসপাও। ফলে ভরাডুবি ঠেকানোর কোনও উপায় ছিল না কংগ্রেসের।
উত্তরপ্রদেশ হোক বা ১৩-র সাধারণ নির্বাচন, ডাহা ফেল রাহুল গান্ধী। নিজের সমান্তরাল সচিবালয় তৈরির লোভ রাহুলের শাঁখের করাত হয়ে দাঁড়াল। ফলে তিনি বিরাগ ভাজন হয়েছেন সোনিয়া গান্ধীরও।
অন্যদিকে বাংলার রাজনীতিতে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়ের। দলীয় কোন্দল, দুর্নীতি, নীতিহীন রাজনীতি, আর `ল্যাম্পপোস্টের` চাপে এক একে দলত্যাগী হলেন তৃণমূলের সকলে। গত দু`বছরে `সততা` আর পরিবর্তনের মুখগুলো সরে যাওয়ায়, মন্ত্রিত্বে একগাদা নতুন মুখ। রাজ্যের সর্বস্তরে সাধারণ মানুষকে জায়গা করে দিতে মুড়ি আর মিছরি ভেদ রাখলেন না মমতা। এ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন...
হঠাত্ মনে হল মুখ্যমন্ত্রীর কথা ছাপিয়ে যেন শুনতে পাচ্ছি অন্যকিছু। আসলে ঘুমটা ভেঙে গেল। স্বপ্নটাও শেষ। ২০১৩-র আগমনীর দিনেই টাইমমেশিনে চড়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম ২০১৩-র একেবারে শেষক্ষণে। বারোর বিভীষিকায় দেখে ফেললাম দেশ, রাজ্যের এক কঙ্কালসার দশা। ঘুম ভেঙে ভাবলাম, যাক। সত্যি নয়, স্বপ্ন। বাস্তব আসলে এরকমই। কখনও ঘুম ভেঙে আছাড় মেরে ফেলে মাটিতে, কখনও বা স্বস্তি জোগায় এই বলে, `যাক এতটাও দুরবস্থা আসেনি`। ২০১২ নিয়েও ছিল এরকম হাজারো স্বপ্ন। কিছুটা সত্যি হল, বেশিটাই হল না, আবার কিছুটা দুঃস্বপ্নের থেকেও কালো। কোনওটা আবার অপ্রত্যাশিত ভাল। কিন্তু সবটাই বাস্তব। সেই বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই স্বপ্ন দেখা শুরু ২০১৩-র।