লালু-মুলায়মের উপস্থিতি উসকে দিল নতুন সমীকরণের জল্পনা

শরিকি সমস্যায় জেরবার ইউপিএ সরকার কি এবার নতুন শরিকের খোঁজে? দ্বিতীয় সরকারের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজের পর, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুথুভেল করুণানিধি অনুপস্থিত থাকলেও নৈশভোজে হাজির ছিলেন মুলায়ম ও লালুপ্রসাদ যাদব।

Updated By: May 23, 2012, 09:55 AM IST

শরিকি সমস্যায় জেরবার ইউপিএ সরকার কি এবার নতুন শরিকের খোঁজে? দ্বিতীয় সরকারের ৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নৈশভোজের পর, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণ সত্ত্বেও নৈশভোজে যাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং করুণানিধি। তৃণমূল এবং ডিএমকে সুপ্রিমো অনুপস্থিত থাকলেও নৈশভোজে হাজির ছিলেন সমাজবাদী পার্টির সভাপতি মুলায়ম সিং যাদব ও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব।
ইউপিএ সরকারের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রতিবারই আড়ম্বরের কোনও ত্রুটি থাকে না। থাকে উচ্ছ্বাসও। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত নৈশভোজে উচ্ছ্বাস তো নেইই, বরং ছিল এক গুমোট বিষণ্ণতা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এর পিছনে বেশ কয়েকটা ফ্যাক্টর কাজ করছে- লাগাতার মূল্যবৃদ্ধি আর একের পর এক দুর্নীতির ঘটনায় তলানিতে এসে ঠেকেছে সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা। উত্তরপ্রদেশ-সহ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে খারাপ ফল করেছে কংগ্রেস। সংস্কারের বিভিন্ন ইস্যুতে শরিকদলের সঙ্গে চলছে চরম সংঘাত। তৃতীয় বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে প্রকাশ্যে এসেছে কয়লা কেলেঙ্কারি। আর তা নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। যে আম-আদমির কথা বলে ক্ষমতায় এসেছিল ইউপিএ সরকার। অথচ এই মুহূর্তে সেই সরকারই কার্যত জনবিচ্ছিন্ন।
 
 রাজনৈতিকমহলের ধারণা, এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ইউপিএ-র শরিকরাও বুঝতে পারছে কংগ্রেসের সঙ্গে থাকা নিরাপদ নয়। বর্ষপূর্তির নৈশভোজে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডিএমকে প্রধান করুণানিধির অনুপস্থিতি হয়তো তারই ইঙ্গিত। সম্ভবত কংগ্রেসও বুঝতে পারছে, যে কোনও দিন জোট ছেড়ে যেতে পারে তৃণমূল এবং ডিএমকে। সঙ্কটের এই সময়ে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ানোর আভাস মিলেছে সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি এবং রাষ্ট্রীয় জনতা দলের তরফে। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে কংগ্রেস যখন অতিরিক্ত শরিক নির্ভর হয়ে পড়েছে এবং দাবি আদায়ের জন্য শরিকরাও চাপের রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময় এই দলগুলির কয়েকটি পদক্ষেপে সরকারের পাশে থাকার ইঙ্গিত মিলেছে। মঙ্গলবার ইউপিএ-র বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে তৃণমূল এবং ডিএমকে সুপ্রিমো না থাকলেও, উপস্থিত ছিলেন মুলায়ম সিং যাদব ও লালুপ্রসাদ যাদব। যে ভাবে বিহার ও উত্তরপ্রদেশের দুই যাদব কুপলতিকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তাঁর সরকারের 'সাফল্যের খতিয়ান' পেশ করেছেন তাতে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের পূর্বাভাস স্পষ্ট।

লোকপাল সহ একাধিক ইস্যুতে তৃণমূল বা ডিএমকে বিরোধিতা করলেও সরকারকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছে মুলায়মের দল।  অতীতে প্রথম ইউপিএ সরকারের জমানায় একইভাবে ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে সোনিয়া-মনমোহনের পরিত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। এবার লোকপাল বিল সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানো নিয়ে রাজ্যসভায় কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়েছে সপা।  দিল্লি বিমানবন্দরের ট্যাক্স ইস্যুতে বামেরা রাজ্যসভায় ভোটাভুটি চাইলেও, ওয়াক আউট করে সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে মায়াবতীর দল বিএসপি। মঙ্গলবার রাতে ৭ রেসকোর্স রোডের নৈশভোজে বহেনজি অনুপস্থিত থাকলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ধারণা, লখনউ-এর কুরসি হারানোর পর প্রবল চাপে থাকা বিএসপি নেতৃত্বের সামনে কেন্দ্রের পাশে থাকা ছাড়া অন্য কোনও বিকল্প খোলা নেই।
 
দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে একের পর এক দুর্নীতির জেরে যে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে কার্যত একথা স্বীকার করে নিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংও। তবে একাধিক ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্যের খতিয়ানও তুলে ধরেন তিনি। খাদ্যশস্য উত্‍পাদন থেকে শুরু করে অগ্নি পাঁচের উত্‍ক্ষেপণ! সব ক্ষেত্রেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলে ভাল কাজ হয়েছে হয়েছে বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে জন সমর্থন ফিরে পাওয়ার বিষয়ে আশাপ্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীও।
প্রথম ইউপিএ-র আমলে অসামরিক পরমাণু চুক্তি ছাড়া তেমন কোনও বড়সড় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয়নি প্রথম ইউপিএ সরকারকে। কিন্তু, দ্বিতীয় ইউপিএ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই প্রকাশ্যে আসতে থাকে একের পর এক দুর্নীতি। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে কমনওয়েলথ দুর্নীতি। সংসদের ভিতরে এবং বাইরে ক্রমশ কোণঠাসা হতে শুরু করে মনমোহন সিং সরকার। সেই সঙ্গে গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে আসে মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাত। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধির আঁচে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর একের পর এক আশ্বাসের পরও লাগাম পরানো যায়নি মূল্যবৃদ্ধিতে।

তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে অবশ্য সেই বিষয়টি তেমনভাবে উঠে এল না প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। লালু-মুলায়মকে সঙ্গে নিয়ে সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে গিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান ব্যাখ্যা করতেই বেশি ব্যস্ত ছিলেন তিনি। তুলে ধরলেন গ্রামীণক্ষেত্রে মজুরি বৃদ্ধি, পোলিও নির্মূল করার মতো সাফল্যের দিকগুলিই। তবে, প্রতিকূলতার বন্ধুর পথের কথা বিশেষভাবে জায়গা করে নিয়েছে কংগ্রেস সভানেত্রীর গলায়। একই সঙ্গে আসন্ন লোকসভা ভোটে ভালো ফলের আশাও করেছেন তিনি।
প্রত্যাশিত ভাবেই এই রিপোর্ট কার্ডের কড়া সমালোচনা করেছে বিরোধীরা। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি থেকে একের পর এক দুর্নীতি, কোনও কিছুই সঠিকভাবে জায়গা করে নেয়নি দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের রিপোর্ট কার্ডে। শুধুমাত্র নিজেদের প্রশ্বস্তিপত্র প্রচারেই ব্যস্ত মনমোহন সিং সরকার- ইউপিএ-র রিপোর্ট কার্ড নিয়ে এমনই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিজেপি। সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির অভিযোগ, সাধারণ মানুষের দুর্দশার দিকে কোনও নজরই দেয়নি ইউপিএ সরকার। সিপিআইয়ের বক্তব্য, গত তিনবছরে দেশের জন্য উল্লেখযোগ্য কিছুই করে উঠতে পারেনি বর্তমান সরকার।

.