ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন, বাবা-ঠাকুমার দলে জ্যোতিরাদিত্য, জেনে নিন ইতিহাস

কমল নাথের সরকারকে চরম সঙ্কটে ফেলে কংগ্রেস ছাড়লেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। 

Updated By: Mar 10, 2020, 05:35 PM IST
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন, বাবা-ঠাকুমার দলে জ্যোতিরাদিত্য, জেনে নিন ইতিহাস
রাজমাতার সঙ্গে একমঞ্চে নরেন্দ্র মোদী, অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী।

নিজস্ব প্রতিবেদন: এটা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার 'ঘর ওয়াপসি'। ভাইপোর কংগ্রেস ছাড়ার খবরে উচ্ছ্বসিত পিসি, বিজেপি নেত্রী যশোধরা সিন্ধিয়া। বস্তুত ভুল কিছু বলেননি যশোধরা। জ্যোতিরাদিত্যর বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়ার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়েছিল জনসঙ্ঘে। তার আগে ঠাকুমা, রাজমাতা বিজয়ারাজে সিন্ধিয়াও অটলবিহারী বাজপেয়ীর হাত ধরে যোগ দিয়েছিলেন গেরুয়া শিবিরে।                       

মারাঠা সাম্রাজ্যের অধীন গ্বলিয়রের শাসনভার ছিল সিন্ধিয়া পরিবারের হাতে। ব্রিটিশ শাসন শুরুর পর দেশীয় রাজ্য গ্বলিয়রের  মহারাজাও সেই সিন্ধিয়া পরিবারের সদস্যরা। রাজত্ব যাওয়ার পর স্বাধীন ভারতেও তাঁদের প্রভাব প্রতিপত্তি খুব একটা কমেনি। রাজনীতিতে জড়িয়ে ক্ষমতার বৃত্তে থাকে যান সিন্ধিয়ারা। গ্বলিয়রের রাজমাতা বলে পরিচিত, বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া, গেরুয়া শিবিরের হাত ধরেই সংসদে যান। তাঁর ছেলে মাধবরাও সিন্ধিয়া আবার কংগ্রেসে যোগ দিয়ে হয়ে ওঠেন দলের প্রথম সারির নেতা। বিজয়া রাজের দুই মেয়ে বসুন্ধরা এবং যশোধরা বরাবরই বিজেপিতে। বসুন্ধরার ছেলে দুষ্মন্ত বিজেপির টিকিটেই সাংসদ হন। মাধবরাও সিন্ধিয়ার ছেলে, এতদিন কংগ্রেসে থাকলেও এবার দল ছাড়লেন। বলা যায়, পারিবারিক ট্র্যাডিশনই বজায় রাখলেন জ্যোতিরাদিত্য। 

কংগ্রেসের টিকিটেই প্রথম লোকসভায় যান বিজয়ারাজে সিন্ধিয়া। ইন্দিরা গান্ধী রাজন্য ভাতা বিলোপের সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষুব্ধ হন। জরুরি অবস্থার সময় জেলও খেটেছেন। অটলবিহারী বাজপেয়ীর উদ্যোগে বিজয়রাজে সিন্ধিয়া কংগ্রেস ছেড়ে জনসঙ্ঘে যোগ দেন। জনসঙ্ঘ ও বিজেপি, দু'দলের টিকিটেই সংসদে গিয়েছিলেন গ্বলিয়রের রাজমাতা। বিজয়ারাজের ছেলে মাধবরাও আবার জনসঙ্ঘের টিকিটেই প্রথম লোকসভায় যান। কিন্তু জরুরি অবস্থার পর মায়ের উল্টো পথে হেঁটে যোগ দেন কংগ্রেসে।  ৯ বারের সাংসদ মাধবরাও সিন্ধিয়া রাজীব গান্ধীর মন্ত্রিসভায় ছিলেন রেলমন্ত্রী। নরসিমা রাও সরকারে তিনি বিমান, পর্যটন ও মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলান।

১৯৯৬ সালে কংগ্রেস ছেড়ে আলাদা দল তৈরি করলেও পরে কংগ্রেসেই ফিরে আসেন। বিজয়ারাজের বড় মেয়ে বসুন্ধরা রাজে বিয়ের পর হন ঢোলপুরের মহারানি। রাজস্থানের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রীও হয়েছেন। রাজমাতার ছোট মেয়ে, যশোধরাও বিজেপি-র টিকিটেই সাংসদ-বিধায়ক হন। বসুন্ধরা-র ছেলে দুষ্মন্তও তাই। ফলে, সিন্ধিয়া পরিবারের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের যোগ বরাবরই নিবিড়।  

২০০১ সালে বিমান দুর্ঘটনায়, মাধবরাও সিন্ধিয়ার মৃত্যুর পর, তাঁর ছেলে জ্যোতিরাদিত্য আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন। উপনির্বাচনে বাবার লোকসভা আসন গুনায় জয়লাভ করে সংসদে যান তিনি।  মনমোহন সিংয়ের মন্ত্রিসভায় তথ্য-প্রযুক্তি ও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীও হন। 

ইদানীং নিজের দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েন জ্যোতিরাদিত্য। লোকসভা ভোটে হারের পর, কমল নাথ-দ্বিগ্বিজয় সিংদের সামনে নিজের রাজ্যেই কিছুটা হলেও ব্রাত্য হয়ে পড়েন তিনি। বছরখানেক অপেক্ষার পর অবশেষে শোধ নিলেন। কমল নাথের সরকারকে চরম সঙ্কটে ফেলে কংগ্রেস ছাড়লেন জ্যোতি। যোগ দিলেন গেরুয়া শিবিরে। রাজ পরিবারের, ঐতিহ্য মেনেই! সে কথা স্মরণ পিসি যশোধরা সিন্ধিয়া এদিন বলেন,''আমি খুব খুশি। ওকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।  এটা ঘর ওয়াপসি। মাধবরাও সিন্ধিয়া নিজের রাজনৈতিক জীবন জনসঙ্ঘে শুরু করেছিলেন। কংগ্রেসে জ্যোতিরাদিত্যকে অবহেলা করা হয়েছে।''

শোনা যাচ্ছে, বিজেপিতে যোগ দিয়ে রাজ্যসভার সদস্য হতে চলেছেন জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও করা হতে পারে।  

আরও পড়ুন- সিন্ধিয়ার পর পাইলট? রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীকে তড়িঘড়ি দিল্লিতে সমন সনিয়ার

.