'হ্যালো! আমি মেডিসিন বাবা, আপনার অব্যবহৃত ওষুধ আমাকে দিন, আমি গরিবদের দেব'

Updated By: Jul 25, 2015, 04:13 PM IST
 'হ্যালো! আমি মেডিসিন বাবা, আপনার অব্যবহৃত ওষুধ আমাকে দিন, আমি গরিবদের দেব'

সৌরভ পাল 

তোমরা আমাকে ওষুধ দাও, তা আমি গরীবদের দেব-এই মিশনের জন্যই দিল্লিতে সুপরিচিত ওঙ্কারনাথ।  দিল্লির প্রতিটি কমপ্লেক্সে ঘুরে ঘুরে অব্যবহৃত ওষুধ সংগ্রহ করেন ৭৯ বছরের এই বৃদ্ধ। সংগৃহীত ওষুধ  গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন তিনি। ওঙ্কারনাথ কীভাবে ওষুধ সংগ্রহ করেন? উত্তরে তিনি বলেন, "দিল্লির প্রতিটি বাংলো থেকে আমি ওষুধ সংগ্রহ করি। দিল্লিতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা তাদের অব্যবহৃত ওষুধ ডাস্টবিনে ফেলে দেন। তাদের কাছে গিয়ে আমি অনুরোধ করি, অব্যবহৃত ওষুধ গুলি যেন ডাস্টবিনে না ফেলে দিয়ে, আমাকে দেন। ' তাঁর কথা অনুযায়ী , প্রত্যেক মাসে তিনি অন্ততপক্ষে ৫ লক্ষ টাকার ওষুধ সংগ্রহ করেন এবং তা গরিবদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। কিন্তু হঠাৎ এই ওষুধ সংগ্রহ মিশন কেন? তাঁর কথায়, "নয়া দিল্লিতে একটি দুর্ঘটনায় কিছু শ্রমিক আহত হন, ওষুধের অভাবে তাঁদের সঠিক চিকিৎসা হয়নি, সেই থেকেই এই পথ বেছে নিয়েছি"। 

ভারতের প্রায় ৪০% মানুষ আধুনিক ওষুধে চিকিৎসা করতে পারেন না, কারণ তাদের সেই আর্থিক সামর্থ্যই নেই। এমনকি সরকারি হাসপাতালেও অমিল এই দামী ওষুধ। যেখানে প্রতি বছর ভারত থেকে বাইরের দেশ গুলিতে প্রায় ১.৬ লক্ষ কোটি টাকার ওষুধ রফতানি করা হয়। অথচ ওষুধ পান না দেশেরই মানুষ। উল্লেখ্য, ভারতের সরকার  জিডিপির মাত্র ১% খরচ করে স্বাস্থ্য খাতে, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে কম।    

গায়ে গেরুয়া রঙের পোশাক। বুকে সাঁটানো রয়েছে ফোন নম্বর। নিজের পরিচয় দেন, 'মেডিসিন বাবা'। একটা দুর্ঘটনায় পায়ে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। দুই পায়ের হাড়ই  সরে যায়। এতদসত্বেও ৭ কিমি পথ পায়ে হেঁটেই দরজায় দরজায় কড়া নেড়ে ওষুধ সংগ্রহ করেন তিনি। বিভিন্ন জায়গা থেকে ওষুধ সংগ্রহ করার পর নয়া দিল্লির মঙ্গলপুরির একটি বস্তির ছোট্ট ঘরে সেগুলি জড়ো করেন । ঘর ভর্তি  অক্সিজেন সিলিন্ডার, নেবুলাইজার, হুইলচেয়ার। এমনকি  রয়েছে হাসপাতালের বেডও। 

ভারতে এমন অনেক সংস্থাই রয়েছে যারা এইভাবেওষুধ সংগ্রহ করে কাজ করে। কিন্তু ওঙ্কারনাথ তাঁর মিশনে, 'ওয়ান ম্যান আর্মি'। ওঙ্কারনাথের থেকে ওষুধ নিয়ে তা গরিব রোগীদের দেন ডঃ লালিমা রঙ্গানি। ওঙ্কারনাথের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত বিনামূল্যে ওষুধ সংগ্রহ করেন ৫২ বছর বয়সী ধুলিচাঁদ। এমফ্যাসিমা রোগে ভুগছেন ধুলিচাঁদ, চিকিৎসার জন্য  প্রয়োজনীয় ওষুধ কেনার সামর্থ নেই । ভরসা একমাত্র ওঙ্কারনাথ। ধুলিচাঁদকে ৬,৩০০ টাকা দামের অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন ওঙ্কারনাথই। 

ওঙ্কারনাথ চান, সারা ভারত জুড়ে  মেডিসিন ব্যাঙ্ক তৈরি করতে। তাঁর শেষ ইচ্ছা, "আমার আশা, আমার মৃত্যুর আগে এই মিশন একটা বৃহত্‍ আন্দোলনে পরিণত হোক'। 

.