দেশজুড়ে নিশ্চিহ্ন হওয়ার পর আঞ্চলিক হওয়ার মুখে সিপিএম, খোয়া যাবে সুযোগসুবিধা
সঙ্কট শব্দটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিপিএমের। ২০১১- য় বাংলায় হারের পর থেকে যেন গ্রহণ লেগেছে!
মৌমিতা চক্রবর্তী
বাংলা-ত্রিপুরায় খাতা খুলতে পারেনি। কেরলে মাত্র একটা। ভোটে ভরাডুবির জেরে জাতীয় দলের তকমাটাই প্রায় যেতে বসেছে সিপিএমের। সারা দেশে ২ শতাংশও ভোট পায়নি বামেরা। একমাত্র ভরসা ৪টি রাজ্যে রাজ্য পার্টির তকমা। সে ভরসাতেই এ যাত্রায় উদ্ধারের আশায় একে গোপালন ভবনের নেতারা।
সঙ্কট শব্দটা কিছুতেই পিছু ছাড়ছে না সিপিএমের। ২০১১- য় বাংলায় হারের পর থেকে যেন গ্রহণ লেগেছে! রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তা রোখা যাচ্ছিল না। কিন্তু ২০১৯ সালে বিজেপিকে রক্তদান করে পশ্চিমবঙ্গে কার্যত আইসিইউ-তে সিপিএম। বাম ভোট ধসে ২ থেকে ১৮টি আসন নিয়ে রাজ্যে এখন প্রধান বিরোধী দিলীপ-মুকুলরাই। ২০১৮ সালে আবার ত্রিপুরাতেই বিজেপির সামনে হারাতে হয়েছে ত্রিপুরা। শিব রাত্রির সলতের মতো টিঁকে ছিল কেরল। তবে লোকসভা ভোটে চরম ভরাডুবি সেখানেও। মাত্র একটা আসনেই আটকে গিয়েছে কাস্তে হাতুড়ি।
সারা দেশে ১.৭৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে সিপিএম। কেরলে ১টি ও তামিলনাড়ুতে ২টি। মোট ৩ আসন পেয়েছে সীতারাম ইয়েচুরির দল। আর এই শোচনীয় ফল দেখে সিপিএম নেতাদের মনে প্রশ্ন একটাই, জাতীয় দলের তকমা থাকবে তো সিপিএমের?
ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলগুলিকে জাতীয় বা রাজ্য দলের স্বীকৃতি দেয় নির্বাচন কমিশন। এর জন্য ৩টি মাপকাঠি রয়েছে, কমপক্ষে ৩টি রাজ্য থেকে লোকসভায় ১১টি আসন পেতে হবে। ৪ রাজ্যে ৬% ভোট এবং ৪ লোকসভা আসনে জয় অথবা ৪ রাজ্যে রাজ্য দলের মর্যাদা থাকতে হবে।
এবার ভোটের ফলে কোনও মাপকাঠিতেই নিজেদের মাপতে পারছে না সিপিএম। এহেন পরিস্থিতিতে সিপিএমের ভরসা তামিলনাড়ু। সেখানে ৩৯-এর মধ্যে ২টি আসন পেয়েছে সিপিএম। কোনও রাজ্যে ২৫টির মধ্যে একটি বা সেই অনুপাতে লোকসভা আসন পেলে রাজ্য দলের তকমা জোটে। পরিসংখ্যান বলছে, তামিলনাড়ুতে ২৫ লোকসভা আসনের হিসেবে ১.২৮ আসন পেয়েছে সিপিএম। আর এই পরিসংখ্যানের জোরেই আশায় বুক বাঁধছেন ইয়েচুরি, কারাটরা। কারণ জাতীয় দলের মর্যাদা মানে তো শুধু নামমাত্র নয়, বরং রয়েছে প্রচুর সুযোগ-সুবিধাও।
স্বীকৃত জাতীয় দলের প্রতীক অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে না। ল্যুটিয়েনস দিল্লিতে দলের অফিস করার জন্য সরকারি বাড়ি মেলে। জাতীয় দলগুলি ভোটে ৪০জন স্টার ক্যাম্পেনারকে ব্যবহারের সুযোগ পায়। রয়েছে দূরদর্শন, আকাশবাণীতে প্রচারের সুযোগ। তাই একবার জাতীয় দলের তকমা চলে যাওয়ার অর্থ বড় ক্ষতি। মার্চেই ৭টি স্বীকৃত জাতীয় দলের তালিকা ঘোষণা করে কমিশন। তালিকায় ছিল, বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, বিএসপি, সিপিআই, সিপিএম এবং এনসিপি।
এবার ভোটের ফলের পর বিজেপি, কংগ্রেস ছাড়া বাকি সব দলই চিন্তায়। কারণ, সিপিএমের মতোই হাল বাকি বসপা, তৃণমূল, এনসিপি ও সিপিআই-র। শোনা যাচ্ছে, পরিস্থিতি এমন যে কংগ্রেসে মিশে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা করছে শরদ পাওয়ারের দল এনসিপি।
আরও পড়ুন- লকেটের 'রাম নাম' রোখার পুরস্কার, মোক্তারকে মিষ্টি খেতে ১০ হাজার দিলেন মমতা