গুজরাটে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ কংগ্রেস, হাতছাড়া হিমাচল
গুজরাটে দেড়শো আসন ছুঁতে না পারার ক্ষত কিছুটা হলেও জুড়োল হিমাচলে। কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করে, পাহাড়ি রাজ্যে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেল বিজেপি। যদিও হেরে গিয়েছেন দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল। তাঁর পরিবর্তে জয়রাম ঠাকুরকে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী করতে করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
নিজস্ব প্রতিনিধি : গুজরাট নির্বাচনে কাজে এল না কংগ্রেসের রণকৌশল। প্যাটেলদের জন্য সংরক্ষণ, ওবিসি এবং দলিতদের বঞ্চনা এবারের ভোটে ছিল কংগ্রেসের বড় ইস্যু। নোটবন্দি এবং জিএসটি নিয়ে ব্যবসায়ীদের ক্ষোভও ছিল ভোটপ্রচারে কংগ্রেসের হাতিয়ার। তুলো-বাদাম চাষে ক্ষতি, কৃষিঋণ মকুবের দাবি, কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্যবৃদ্ধির মতো ইস্যুও ছিল কংগ্রেসের প্রচারে। দিনের শেষে কোনও হাতিয়ারই কাজে লাগল না। গুজরাটে পাশা পাল্টাতে পারল না কংগ্রেস। অবস্থা আরও শোচনীয় পাহাড়ি রাজ্য হিমাচল প্রদেশে। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ আসনই গেরুয়া শিবিরের ঝুলিতে।
জিএসটি নিয়ে যেখানে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হয়েছিল, সেই সুরাটের ৯টি বিধানসভা আসনই বিজেপি নিজেদের দখলে রাখল। আমেদাবাদের ১৭টির মধ্যে ১৩টিই গেল BJP-র দখলে। ভদোদরায় ৫টির মধ্যে ৪টি আসন জিতেছে বিজেপি।
আরও পড়ুন- গুজরাটের রাজধানীতেই বিজেপিকে পিছিয়ে দিল কংগ্রেস
অন্যদিকে, আবার প্যাটেল ফ্যাক্টরে সৌরাষ্ট্রে আসন খোয়াল বিজেপি। প্যাটেল ভোটেও বাজিমাতে ব্যর্থ কংগ্রেস। ৩৯টি 'প্যাটেল' আসনের ২২টিতে জয়ী বিজেপি। তবে, সেই প্যাটেলের খামতি পুষিয়ে নিল দলিত ভোটে। ১০টি দলিত সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনের মধ্যে ৫টিতেই জয়ী বিজেপি। ওবিসি ভোটেও বাজিমাত করতে ব্যর্থ কংগ্রেসের সহযোগী অল্পেশ ঠাকোর। ৭৫টি ওবিসি অধ্যুষিত আসনের মধ্যে ৪০টিতেই জয়ী বিজেপি।
এক নজরে দেখে নেওয়া যাক গুজরাটের ফল-
সুরাট : বিজেপি ৯/৯
আমেদাবাদ : ১৩/১৭
ভদোদরা : ৪/৫
যদিও, গুজরাটে দেড়শো আসন ছুঁতে না পারার ক্ষত কিছুটা হলেও জুড়োল হিমাচলে। কংগ্রেসকে গদিচ্যুত করে, পাহাড়ি রাজ্যে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পেল বিজেপি। যদিও হেরে গিয়েছেন দলের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল। তাঁর পরিবর্তে জয়রাম ঠাকুরকে হিমাচলের মুখ্যমন্ত্রী করতে করা হতে পারে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।
৬৮ আসনের হিমাচলপ্রদেশ বিধানসভায় ম্যাজিক ফিগার ৩৫। তার থেকে অনেক বেশি নম্বর পেয়ে উত্তরের পাহাড়ি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করল গেরুয়া শিবির। ৫ বছরের মেয়াদ ফুরোলেই উলটে যাবে সরকার। গাড়োয়াল হিমালয়ের রাজ্যে এটাই ট্র্যাডিশন। এবারও ব্যতিক্রম হল না।
আরও পড়ুন- ২-০ ফলে জয়, গুজরাট ব্যবধান কমল বিজেপির
হিমাচলপ্রদেশের ভোট মানেই পারিবারিক রাজনীতির লড়াই। একদিকে ৬ বার মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো কংগ্রেসের বীরভদ্র সিং। অন্যদিকে ২ বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়া প্রেমকুমার ধুমল। সিং আর ধুমলদের লড়াইয়ে চোখে পড়ার মতো বৈশিষ্ট্য বলতে ছিল, ছেলেদের রাজনৈতিক পথ প্রশস্ত করার জন্য দুই বাবার চেষ্টা। তাঁর বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি দুর্নীতির অভিযোগ। এই পরিস্থিতিতে ছেলে বিক্রমাদিত্যকে জেতাতে নিজের দুর্গ সিমলা গ্রামীণ আসন ছেড়ে দেন বীরভদ্র সিং। বিক্রমাদিত্য সিং সিমলা গ্রামীণ আসনে জিতে গিয়েছেন। কিন্তু আরকি আসনে লড়ে পরাস্ত বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র।
প্রেমকুমার ধুমলের দুই ছেলে অনুরাগ ঠাকুর ও অরুণ ঠাকুর। ৩ বারের সাংসদ অনুরাগ ইতিমধ্যেই হিমাচলে বিজেপির পরিচিত মুখ। প্রেমকুমার চেয়েছিলেন সুজানপুর আসন থেকে লড়ুক তাঁর ছেলে অরুণ ঠাকুর। কিন্তু সুজানপুর আসনে প্রেমকুমারকেই প্রার্থী করে দল। হিমাচলে বিজেপির নিরঙ্কুশ জয়ে অস্বস্তির কাঁটা বিঁধে দিয়েছেন সেই প্রেমকুমারই। সুজানপুর আসনে হেরে গিয়েছেন বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী প্রেমকুমার ধুমল।
মুখ বাঁচাতে এগিয়ে এসেছেন কাটলেহর আসনের জয়ী বিজেপি প্রার্থী বীরেন্দ্র কানওয়ার। সূত্রের খবর, নিজের জেতা আসন ধুমলকে ছেড়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। হেরে গিয়েছেন হিমাচল প্রদেশ বিজেপির প্রধান সতপাল সিং সত্তি। মোদী বনাম রাহুলের লড়াইয়ে ২-০ ফল। এদিকে, গেরুয়ার রমরমার মধ্যেও কিছুটা সুখবর বামেদের জন্য। পাহাড়ি রাজ্যে সিপিএমের ঝুলিতে এসেছে একটি আসন।