অভিশপ্ত শৈশব, দেশের অধিকাংশ শিশু ন্যূনতম অধিকার থেকে বঞ্চিত, অবাধে চলছে যৌন নির্যাতন, শিশু শ্রম, বাল্যবিবাহ, শারীরিক অত্যাচার, নেই পর্যাস্ত শিক্ষার সুযোগ

যৌন নির্যাতন, পরিবারের অবহেলা বা শৈশবেই শ্রমিক বনে যাওয়া। বড় হওয়ার আগেই আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনে নেমে আসছে অন্ধকার। শিশুদের নিরাপত্তা, তাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে আইন-কানুন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবই আছে। যদিও, বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দিনদিন বাড়ছে শিশু নিগ্রহ। আর, এইসব অপরাধের অধিকাংশই ঘটে চলেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বহুক্ষেত্রে শিশুদের বাড়িতেই।    

Updated By: Oct 18, 2013, 09:12 AM IST

যৌন নির্যাতন, পরিবারের অবহেলা বা শৈশবেই শ্রমিক বনে যাওয়া। বড় হওয়ার আগেই আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনে নেমে আসছে অন্ধকার। শিশুদের নিরাপত্তা, তাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে আইন-কানুন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা সবই আছে। যদিও, বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে তাতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। দিনদিন বাড়ছে শিশু নিগ্রহ। আর, এইসব অপরাধের অধিকাংশই ঘটে চলেছে লোকচক্ষুর আড়ালে। বহুক্ষেত্রে শিশুদের বাড়িতেই।    
হাওড়ার বাকসাড়ায় বাড়িতে কাজ করত বছর আটেকের মেয়েটি। রোজই চলত মারধর। চৌঠা অক্টোবর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাকে খুন করার চেষ্টা করেন গৃহকর্ত্রী ও তাঁর ছেলে। পাড়ার লোকেদের ততপরতায় মেয়েটি বেঁচে যায়। সারা দেশে
প্রতিদিন ঘটে চলা এমন অগুন্তি ঘটনার মধ্যে এটা একটা উদাহরণ মাত্র। নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের সমীক্ষা বলছে, দেশের ৫০.২% শিশু সপ্তাহে সাত দিন কায়িক পরিশ্রমের কাজ করতে বাধ্য হয়।
শিশুশ্রম, কম বয়সে বিয়ে, এ সব চোখের সামনেই ঘটে। আর চোখের আড়ালে ? নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের সমীক্ষা বলছে, ১৮ বছরের নিচে দেশের ১৫ কোটি মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার। ছেলেদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৭ কোটি ৩০ লক্ষ। নির্যাতিত ছেলেদের মধ্যে ৫২.৯১% পরিবারের মধ্যেই যৌন নির্যাতনের শিকার।
মেয়েদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা ৪৭.০৯ %।
 
বাড়িতে, অনাথ আশ্রমে, স্কুলে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনার অতি সামান্যই প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের আকারে নথিবদ্ধ হয়। ন্যাশনাল কমিশন ফর চাইল্ড রাইটস প্রোটেকশনের তথ্য বলছে,
সারা দেশে,  ২০০৯-১০-এ ২৩৪, ২০১০-১১-এ ২৭৭, ২০১১-১২-এ ৩৭১ এবং ২০১২-১৩-র ১৫ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০৯টি শিশুদের ওপর যৌন নিগ্রহের লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
 
কেন শিশুরা এত বেশি সংখ্যায় যৌন নিগ্রহের শিকার হচ্ছে ? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদেরকে সহজ টার্গেট হিসাবে বেছে নেওয়া হচ্ছে।
 
গ্রাম থেকে শহর। শিশু নিগ্রহের ঘটনা স্থান-কাল ভেদ না করে বেড়েই চলেছে।
 
গত আর্থিক বছরে এই ধরনের ঘটনায় দেশের মধ্যে এক নম্বরে ছিল উত্তরপ্রদেশ। তারপরেই রাজধানী দিল্লি। তথ্য বলছে, দিল্লিতে প্রতিদিন ১৪ জন শিশু নিখোঁজ হয়ে যায়।
 
শুধু যৌন নিগ্রহ নয়। পরিবারের মধ্যে কন্যা সন্তানকে অবহেলা, স্কুলে শারীরিক শাস্তি, জোর করে আটকে রাখা, অভিভাবকদের চাপিয়ে দেওয়া মানসিক চাপ - নানা রূপে, নানা ভাবে শিশুদের ওপর অত্যাচার চলছেই। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, আইন থাকলেও তা কার্যকর না হওয়া, প্রশাসনে সংবেদশীলতার অভাবের মতো নানা কারণে, এ দেশে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে শৈশব। যারা আমাদের ভবিষ্যত, তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সঠিকভাবে বড় হয়ে ওঠা, আত্মমর্যাদা বোধ, সবকিছু হারিয়ে যাচ্ছে অঙ্কুরেই।
 
       
 
 
 
   

.