চুম্বকের বিপরীত মেরুতে আকর্ষণ, এটা বিজ্ঞান, প্রেমেও কি তাই?

Updated By: Mar 2, 2016, 09:19 PM IST
চুম্বকের বিপরীত মেরুতে আকর্ষণ, এটা বিজ্ঞান, প্রেমেও কি তাই?

সৌরভ পাল

সহে না যাতনা
দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে
নিশিদিন বসে আছি শুধু পথপানে চেয়ে-
সখা হে, এলে না।
সহে না যাতনা॥

যাতনা কীসের সখী? প্রেম হবে আর যাতনা হবে না? এ কেমন প্রেম? প্রেম না বলাই ভাল! কারণ দুই মেরুতে চুম্বকের মিল যেমন হয় তেমন উল্টে দিলেই দূরত্ব, ঠোকাঠুকি। কাছে আসতেই চায় না। চাইবেই বা কেন! এক একটা রাত, এক একটা দিন প্রেমের যাতনায় জ্বলেছে যে জন সে জন কাছে আসিবে কেমনে?

আসিবে কারণ-
দিন যায়, রাত যায়, সব যায়-
আমি বসে হায়!
দেহে বল নাই, চোখে ঘুম নাই-
শুকায়ে গিয়াছে আঁখিজল।
একে একে সব আশা ঝ'রে ঝ'রে প'ড়ে যায়-
সহে না যাতনা॥

সমস্ত অপেক্ষা তো তাঁর জন্যই। বেদনাকে ধন্যবাদ, বেদনা দায়ককে ধন্যবাদ,"বিরহ প্রেমের থেকেও প্রেমময়", এই অনুভব যারা করেন প্রেমটা তাঁদের জন্যই। আর গোটা সমাজ যে প্রেম শিখিয়ে দেয় সেটা আদপে 'সহাবস্থান'। আরও বিশদে বললে 'Adjustment'। প্রেমে Adjust! আসলে ভাল থাকার সংজ্ঞায় অনিমেষরা যে মাধবীলতাদের খোঁজে তাঁরা এখন খোঁজে অর্থ, নিরাপত্তা, বিলাস। এটা কোনও ভাবেই বোঝানো যায় না, "মায়ের গর্ভের থেকে নিরাপদ স্থান আর একটাও নেই"। উত্তরের হাওয়ার মত প্রেম আসে আবার ঋতু পরিবর্তনে কেটেও যায়। যারা স্রোতে ভাসেন তাঁরা এই হাওয়াতেই ভেসে যায়, মেঠো হাওয়া 'বসন্ত' আসে আবার বসন্ত চলেও যাও।

বিজ্ঞান তো যুক্তিবোধের কথা বলে। আবার প্রেমে প্রেম ছাড়া আর কোনও যুক্তিই খাটে না। এই কথাটা কেন লিখতে হল? কারণ, বিশ্বের ইতিহাসে প্রেম সবসময় অসাম্যের সাম্য ঘটিয়েছে।
"প্রেম করিলো লায়লি মজনু,
প্রেম করিলো রাধা কানু গো,
তাঁরা ছাই করিলো সোনার তনু,
পেয়ে কত লাঞ্ছনা,
প্রেম করা সকলে জানে না"
। লাঞ্ছনার কথা মনে রাখেনি রাধা, না রেখেছে কানু। প্রেম করেছিল "চণ্ডী দাস ব্রাহ্মণের ছেলে, রজকিনী ধোপার মেয়ে, এক প্রেমেতে দুই জন মরে, এমন মরে কয়জনা? ব্রাহ্মণ ছেলের সঙ্গে ধোপার মেয়ের প্রেম। এমনটা সবার জন্য নয়। গানে, ভাবনায় কথিত আছে, অসার বুনে বীজ বুনিলে অঙ্কুর হয়, ফল ফলে না! আবার ধর্মের বাণীতে এও কথিত আছে, "কর্ম কর, ফলের আসা কর না"। তাহলে কোনটা মানবেন আর কোনটা মানবেন না? উত্তর হ্যাঁ হোক বা না হোক, স্বাগত স্বতঃস্ফূর্ততাকে।

কিন্তু বিজ্ঞান! প্রেমের বিজ্ঞান বলছে, 'প্রেমে দুই বিপরীত মেরুর মিল' এমনটা সবসময় নাও হতে পারে। যখন দুটি মানুষের ভাবনা এক, চিন্তা এক, কর্ম এক এবং একে অপরে জড়িয়ে আছেন ওই অভ্যাসেই, তখন সমমেরুর মিল হয়। মৌলিক চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন এখানে এক। আগে বন্ধু, পরে প্রেম ভেঙে বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক। অন্য সম্পর্কে যাওয়াটা সহজ হয় কারণ, এক্ষেত্রে দু'জনের সামাজিক যোগাযোগ এক হয়। তবে বিজ্ঞান এও বলছে, প্রেমের প্রথম অধ্যায়, যৌনতা, ঝগড়া, বন্ধুত্ব যাই কিছু দিয়েই শুরু হোক, সম্পর্ক স্থির হয় সেই প্রথম পর্যায়ে। মানুষ সম্পর্কে যাওয়ার পর কখনও তাঁর মৌলিক ভাবনার পরিবর্তন হয় না। আর পরিবর্তিত হলেও তা একটা সময়ের ওপর নির্ভরশীল।

বিজ্ঞানের যুক্তির সঙ্গে প্রেমের যুক্তির ঠোকাঠুকি চিরকালীন। মন চাইলেই যেমন বলে দেওয়া যায় না,"যা গেছে তা যাক", তেমনি শুধু মুখেই বলা যায় "হৃদ মাঝারে রাখব, ছেড়ে দেব না", যে যাওয়ার সে চলে যায়, আর যে থাকার সে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত সঙ্গ দিয়ে যায়।

 

.