ফাইভ স্টার জেল

  জেল মানেই অন্ধকার, স্যাঁতসেতে কুঠুরি। জেল মানেই যন্ত্রণা। জেল মানেই শাস্তি। কিন্তু এমন জেলও আছে, যেখানে একদম ফাইভ স্টার হোটেলের মতো এলাহি বন্দোবস্ত। যেখানে কোনও যন্ত্রণা নেই। আরামই আরাম।

Updated By: Mar 17, 2017, 11:28 PM IST
ফাইভ স্টার জেল

ওয়েব ডেস্ক:  জেল মানেই অন্ধকার, স্যাঁতসেতে কুঠুরি। জেল মানেই যন্ত্রণা। জেল মানেই শাস্তি। কিন্তু এমন জেলও আছে, যেখানে একদম ফাইভ স্টার হোটেলের মতো এলাহি বন্দোবস্ত। যেখানে কোনও যন্ত্রণা নেই। আরামই আরাম।

সম্পূর্ণ বিনা পয়সায় ফাইভ স্টার হোটেলের সুবিধা পেতে চান? বসে বসে একদম মুফতে খাওয়াদাওয়া। যতদিন খুশি। রিফ্রেশমেন্টের এলাহি বন্দোবস্ত।

কী করতে হবে? খুন করতে হবে। কিংবা ডাকাতি। ব্যস। সটান শ্রীঘরে। গরাদের পিছনে আরাম-ই-আরাম। বিলাসবহুল কোনও পাঁচতারা হোটেলকে হার মানাবে গরাদের ওপার।

জেল মানেই যে অন্ধকারাচ্ছন্ন কুঠুরির মতো ঘর, তা এখানে একেবারেই নয়। ছোট্ট ছোট্ট সুন্দর সাজানো ঘর। জানলা দিয়ে বাইরে তাকালেই চোখে পড়বে সবুজ লন, নানা রঙের ফুল। প্রকৃতির শোভায় সজ্জিত সংশোধনাগার। জেল মানেই শাস্তির জায়গা। জেল মানেই যন্ত্রণার জায়গা।

কিন্তু নাহ্, এই জেলের অন্দরমহল দেখলে তেমনটা মনে হওয়া তো দূর অস্ত্, পাঁচতারা হোটেল বলে ভুল হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। কয়েদিরা নিজেরাই এখানে ফল-সবজির চাষ করে। রান্নাও করে নিজেরাই। একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া, টেলিভিশন দেখা। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মধ্যে তাদের স্বাভাবিক পরিবেশের মধ্যে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ।

কোন জেলে এমন এলাহি বন্দোবস্ত?

নরওয়ের হ্যাল্ডেন জেল। সেদেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহত্‍ জেল। ২০১০ সালে তৈরি হয় এই সংশোধনাগার। ইনমেটসদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থেকে শুরু করে তাদের বিনোদনের বেশ কিছু আয়োজনও রয়েছে। খেলাধুলা, গান-বাজনার সময়ে কয়েদিদের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন জেলের কর্মীরাও।

ডেনমার্কের এরিক মোলার আর্কিটেক্ট ও ব্রিটিশ এইচএলএম আর্কিটেক্ট এই জেলটি গড়ে তোলে। জেলের বাইরের অংশ কংক্রিকেটের বদলে ইট, গ্যালভানাইজড স্টিল ও লার্চ কাঠে তৈরি। ইট, কাঠ, পাথরের ঘেরাটোপে গাছগাছালির সারি। বার্চ, ব্লুবেরি, পাইন গাছের সবুজালি ঘেরা সংশোধনের বন্দোবস্ত। স্টিল, মানে কঠোরতা। মানে আটকের প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত। লার্চ, মানে কোমলতা। মানে, সংশোধন এবং বৃদ্ধির প্রতীক।

জেলের দেওয়াল এবং টয়লেটের দরজায় গ্র্যাফিটি পেন্টিং করেছেন নরওয়ের আর্টিস্ট ডক। প্রত্যেকটি কুঠুরি ১১০ স্কোয়্যার ফুট। প্রত্যেকটিতে রয়েছে ফ্ল্যাট স্ক্রিন টিভি, ডেস্ক, মিনিফ্রিজ, অ্যাটাচড টয়লেট, শাওয়ার। বিশাল বিশাল জানলা। প্রত্যেকটি কুঠুরিতে খেলা করে প্রচুর আলো। প্রত্যেক ১০-১২টি কুঠুরির জন্য রয়েছে একটি ডাইনিং স্পেস, রান্নাঘর ও লিভিং রুম।

রান্নাঘরে স্টেনলেস স্টিলের বাসনপত্র, পোর্সেলিনের প্লেট এবং ডাইনিং টেবল। লিভিং রুমে রয়েছে মডিউলার কাউচ ও ভিডিও গেমের আয়োজন। মুদিখানা থেকে জিনিসপত্র কিনে বন্দিরা নিজেরাই রান্না করে খেতে পারে। দিনে ১২ ঘণ্টা কুঠুরির মধ্যে থাকতে হবে বন্দিদের। বাকিটা সময় কুঠুরির বাইরে। তাদের উত্সাহ দেওয়া হয় নানা গঠনমূলক কাজকর্মে। জগিং থেকে ফুটবল, জিম থেকে রক ক্লাইম্বিং, বন্দোবস্ত রয়েছে সবেরই। লাইব্রেরিতে রয়েছে প্রচুর বই, ম্যাগাজিন, সিডি ও ডিভিডি। মানে, প্রকৃত অর্থেই সংশোধনাগার।

নরওয়ের অন্যান্য জেলের তুলনায় হ্যাল্ডেন প্রিজনকে ম্যাক্সিমাম সিকিউরিটি প্রিজন তালিকার মধ্যে ধরা হয়। কিন্তু জেল কর্তৃপক্ষের মতে, আসামি যতই ভয়ঙ্কর হোক, তাকে মানুষ হিসাবে সম্মান দিলে, কিছুটা হলেও তার ব্যবহারে তা প্রতিফলিত হয়। (আরও পড়ুন- টিভি, মোবাইলের নেশায় ডায়াবেটিস, সমীক্ষায় উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য)

.