বিশ্বের মাত্র ৪৩ জনের শরীরেই রয়েছে এই গ্রুপের রক্ত! রক্তদানের মাধ্যমেই বাঁচিয়ে রাখেন একে অপরকে
আজ বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। রক্তদানের গুরুত্ব, উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তা এই বিশেষ রক্তের গ্রুপের মানুষের চেয়ে ভাল হয়তো আর কেউ জানেন না!
নিজস্ব প্রতিবেদন: কথায় বলে, রক্তদান জীবন দান, এ দান মহৎ দান। আর আজ হল সেই মহৎ দানের ধারাকে এগিয়ে নিয়ে চলা মানুষগুলির দিন। অর্থাৎ, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। ২০০৪ সাল থেকে ১৪ জুন দিনটি বিশ্ব রক্তদাতা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে গোটা বিশ্বে।
রক্তদানের গুরুত্ব, উপকারিতা বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা কম-বেশি প্রায় সকলেই জানি। তাই সে সব বিষয়ে কিছু না বলে আজ বরং জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের ‘বিরলতম’ রক্তের গ্রুপের সম্পর্কে। কেন ‘বিরলতম’? বিশ্বে মাত্র ৪৩ জনের শরীরেই রয়েছে এই বিশেষ গ্রুপের রক্ত। তাই এই গ্রুপের রক্ত যাঁদের শরীরে রয়েছে, তাঁরা তাঁদের মতো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে নিয়মিত রক্তদান করে থাকেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের ‘বিরলতম’ রক্তের গ্রুপ বা গোল্ডেন ব্লাড সম্পর্কে...
যাঁদের শরীরে নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে (যেমন, ও নেগেটিভ (O-), এবি নেগেটিভ (AB-), বি নেগেটিভ (B-) ইত্যাদি), বিপদের সময় (Medical emergency) তাঁদের রক্তের প্রয়োজন পড়লে তা খুঁজে পেতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় আত্মীয়-পরিজনদের। ‘আমেরিকান রেড ক্রস’ জানাচ্ছে, যে সমস্ত গ্রুপের রক্ত প্রতি ১,০০০ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে থাকে, সেগুলিকে ‘বিরল’ বলে ব্যাখ্যা করা হয়। ও নেগেটিভ (O-) হল তেমনই একটি ‘বিরল’ রক্তের গ্রুপ। কিন্তু বিশ্বের সবচেয়ে ‘বিরলতম’ রক্তের গ্রুপ চিকিত্সকদের কাছে এটি ‘আরএইচ-নাল’ (Rh-Null) নামে পরিচিত। একে ‘গোল্ডেন ব্লাড’ও বলেন অনেকে। বিজ্ঞানীদের মতে, এটিই হল বিশ্বের ‘বিরলতম’ গ্রুপের রক্ত।
১৯৬১ সালে প্রথম ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্তের সন্ধান পাওয়া যায়। এই রক্তের আরএইচ সিস্টেমে ৬১ অ্যান্টিজেনের অস্তিত্ব ছিল না। সাধারণত, রক্তের কোষগুলোতে ৩৪২টি অ্যান্টিজেন থাকে। এই অ্যান্টিজেনগুলোর কম্বিনেশনই নির্ধারণ করে কোনও রক্তের গ্রুপ ঠিক কী হবে। এই অ্যান্টিজেনের ভিত্তিতে মানুষের রক্তকে চার ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলি হল, ‘এ’, ‘বি’, ‘এবি’ আর ‘ও’। প্রত্যেকটি রক্তের গ্রুপ আবার দু’ভাগে বিভক্ত, ‘পজেটিভ’ এবং ‘নেগেটিভ’। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে মানুষের শরীরে মোট আটটি আলাদা আলাদা গ্রুপের রক্ত পাওয়া যায়। সেগুলি হল, ‘এ পজেটিভ’, ‘এ নেগেটিভ’, ‘বি পজেটিভ’, ‘বি নেগেটিভ’, ‘ও পজেটিভ’, ‘ও নেগেটিভ’, ‘এবি পজেটিভ’ ও ‘এবি নেগেটিভ’।
আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট কমাতে করোনা রোগীকে উপুর করে শোয়ানোর পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রকের!
বিগত ৫৮ বছরে বিশ্বে মাত্র ৪৩ জন মানুষের মধ্যে এই ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত বা ‘গোল্ডেন ব্লাড’-এর অস্তিত্বের খোঁজ মিলেছে। অর্থাৎ, প্রতি প্রতি ৬০,০০,০০০ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে রয়েছে এই বিশেষ গ্রুপের রক্ত। এই ৪৩ জনের মধ্যে ৯ জন নিয়মিত রক্ত দান করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁদের শরীরে ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত রয়েছে, তাঁরা যে কোনও গ্রুপের মানুষকেই রক্ত দিতে পারেন, তবে সবার থেকে রক্ত নিতে পারেন না। তাই চিকিৎসকদের মতে, যাঁদের শরীরে ‘আরএইচ-নাল’ গ্রুপের রক্ত রয়েছে, তাঁদের খুব সাবধানে জীবনযাপন করা জরুরি।