Durga Puja 2022: জানেন, দেবীর আশীর্বাদ পেতে ঠিক কীভাবে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া উচিত?
মঙ্গলকাব্যে এবং আগমনীগানে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর কথা আছে। রয়েছে তাঁর বিবাহিত জীবনের বর্ণনা। রয়েছে সপরিবার পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলির কথাও।
সৌমিত্র সেন
দেবী দুর্গাকে পরমা প্রকৃতি ও সৃষ্টির আদি কারণ বলে মনে করা হয়। তিনি শিবের স্ত্রী পার্বতী, কার্তিক ও গণেশের জননী, কালীর অন্যরূপ। বাংলা মঙ্গলকাব্যে এবং আগমনীগানে শিবজায়া হিমালয়দুহিতা পার্বতীর কথা আছে। রয়েছে তাঁর বিবাহিত জীবনের বর্ণনা। রয়েছে সপরিবার পিতৃগৃহে অবস্থানের আনন্দময় দিনগুলির কথাও। হিমালয়গৃহে বা বাপের বাড়িতে দুর্গার এই দিনগুলিই হল আমাদের এই সাধের দুর্গাপূজা। এহেন দুর্গাপুজোর পুষ্পাঞ্জলি নিয়ে বাঙালির গভীর আবেগ।
সেই আবেগর আগে পুষ্পাঞ্জলির নিয়ম নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার প্রস্তুতির ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম আছে।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: কন্যাসন্তানের নাম রাখুন দুর্গার নামে, জীবনে আনুন মায়ের বিশেষ আশীর্বাদ...
১) স্নান করতে হবে
২) উপবাসে থাকতে পারলে ভালো
৩) আসনে পূর্ব মুখে বা দেবীর সম্মুখে বসতে হয়
৪) ব্রাহ্মণ মাথায় মন্ত্রপূত (গঙ্গা) জল ছিটিয়ে দেবেন, কখনও-সখনও সিঁদুরের তিলক পরিয়ে দেওয়ার রীতিও আছে
৫) এরপর আচমন করার রীতি। আচমন হল, বাঁ হাতে জল নিয়ে ডান হাতের সমস্ত আঙুলের অগ্রভাগ (কিংবা শুধু মধ্যমা) বাঁ হাতের জলে ডুবিয়ে মুখে তিন বার ছিটোতে হয়, সঙ্গে বলতে হয়-- নমঃ বিষ্ণুঃ, নমঃ বিষ্ণু, নমঃ বিষ্ণু!
৬) এরপর বিষ্ণুস্মরণ। হাত জোড় করে বলতে হয়-- নমঃ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোহপি বা। যঃ স্মরেত্ পুন্ডরীকাক্ষং সর্বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
নমঃ সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যং বরেণ্যং বরদং শুভম্। নারায়ণং নমস্কৃত্য সর্বকর্ম্মাণি কারয়েত।।
৭) এরপর যথাক্রমে পুষ্পাঞ্জলির মন্ত্রোচ্চারণ। চন্দনচর্চিত ফুল ও বিল্বপত্র হাতে নিয়ে এই মন্ত্র উচ্চারণের রীতি।
প্রত্যেকবার পুষ্পাঞ্জলির সময়ে তিন বার মন্ত্র উচ্চারণ করতে হয়। এবং সব শেষে প্রণাম মন্ত্র উচ্চারণই রীতি।
দুর্গা অযোনিসম্ভবা। তিনি জন্ম নেন না, আবির্ভূত হন। বিভিন্ন পুরাণে দুর্গার উৎস, তাঁর নাম ও তাঁর অসুরসংগ্রাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন কাহিনি ও ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা। আমরা মহিষাসুর সংক্রান্ত কাহিনিটির সঙ্গেই বেশি পরিচিত, সেটি মূলত মার্কেণ্ডয় পুরাণের। 'দুর্গা সপ্তশতী'তে রয়েছে, ব্রহ্মার ব্রহ্মত্ব, শিবের শিবত্ব, বিষ্ণুর বিষ্ণুত্ব এবং বিভিন্ন দেবতার সমষ্টিভূত তেজঃপুঞ্জ থেকে স্বরূপ ধারণ করেন দেবী দুর্গা। যেসব পুরাণ ও উপপুরাণে দুর্গা সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে সেগুলি হল-- 'মৎস্যপুরাণ', 'মার্কণ্ডেয় পুরাণ', 'দেবীপুরাণ', 'কালিকাপুরাণ', 'দেবী ভাগবত'। দেবী জয়দুর্গা, জগদ্ধাত্রী, গন্ধেশ্বরী, বনদুর্গা, চণ্ডী, নারায়ণী, শিবানী, কালী, গৌরী, উমা প্রভৃতি নানা নামে ও রূপে পূজিতা হন।
পুরাকালে মহিষাসুর নামে এক অসুর ব্রহ্মার বরে বলীয়ান হয়ে সমগ্র স্বর্গ, মর্ত্য ও পাতাল অধিকার করলেন। মুনি-ঋষিরাও রেহাই পেলেন না তাঁর অত্যাচার থেকে। দেবতারা ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বরের শরণাপন্ন হলেন। জানা গেল, ব্রহ্মার বরে বলীয়ান মহিষাসুরকে ত্রিলোকের কোনও পুরুষই পরাভূত করতে পারবেন না। তাই তিনি অপরাজেয়। দেবতাদের মুখে মহিষাসুরের অত্যাচারের কাহিনি শুনে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর ক্রোধান্বিত হলেন। তাঁদের মুখমণ্ডল ভীষণাকার ধারণ করল। তাঁদের ক্রোধাগ্নি এবং অন্য দেবতাদের তেজ সম্মিলিত হয়ে তৈরি হয়ে উঠলেন এক নারী। ত্রিভুবনের দুর্গতি নাশের জন্য তাঁর আবির্ভাব। তিনি দুর্গা। ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে দুর্গা আবির্ভূত হয়েছিলেন বলে দুর্গার আর এক নাম 'কাত্যায়নী'। আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী তিথিতে মহর্ষি কাত্যায়নের আশ্রমে আবির্ভূতা হলেন তিনি। অমাবস্যা-পরবর্তী শুক্লপক্ষের সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী তিথিতে ঋষি কাত্যায়ন এই দেবীর আরাধনা করেছিলেন। সমস্ত দেবতারা এই সময়ে তাঁদের শক্তি ও অস্ত্র দিলেন নবোদ্ভাবিত সেই দেবীকে। ব্রহ্মা দিলেন কমণ্ডলু, ইন্দ্র দিলেন বজ্র, কুবের দিলেন গদা, বিষ্ণু চক্র, মহেশ্বর ত্রিশূল। এই ভাবে দেবী ক্রমে পেলেন শঙ্খ, তীর-ধনুক, তরবারি, বর্শা, ঢাল, পদ্ম ইত্যাদি। এবং এই ভাবে দেবী ক্রমে হলেন দশভুজা। দেবীকে হিমালয় দিলেন সিংহ। দেবী হলেন সিংহবাহিনী। আর সেই সিংহবাহিনী দেবী বাংলার জলহাওয়ায় হলেন ঘরের মেয়েটি যেন। যাঁকে ঘিরে দিন চার-পাঁচ (ইদানীং হয়তো কিছু বেশি) বাঙালি আনন্দে আবেগে ভাসে। তাঁকে ভয় করে, ভক্তি করে, ভালোবাসে, পুজো করে আরতি করে, পুষ্পাঞ্জলি দেয়। মেতে ওঠে এক সর্বাঙ্গীণ আয়োজনে। সার্থক হয়ে ওঠে উৎসব।