Durga Puja 2022: কেন পিতৃপক্ষে পিতৃপুরুষের তর্পণের এই দিনটিকে 'মহালয়া' বলা হয়?
2022 Mahalaya Amavasya: দিনটিকে আমরা 'মহালয়া' নামেই বরাবর চিনে এসেছি। মহালয়া আমাদের পুরাণ, ধর্ম, কাব্য-- সব কিছুতেই জড়িয়ে রয়েছে। এই সময়-পর্বে পিতৃলোকস্থিত পিতৃপুরুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মর্ত্য থেকে তাঁদের উদ্দেশ্য়ে জল দান করা হয়।
সৌমিত্র সেন
আজ রবিবার ভোরে রেডিয়োতে সম্প্রচারিত হয়েছে মহালয়া, যা আদতে মহিষাসুরমর্দিনী গীতি-আলেখ্য। আর এদিনটিই পিতৃপুরুষের তর্পণের জন্য নির্দিষ্ট। আজ কলকাতার গঙ্গাঘাটে, কলকাতা-সন্নিহিত গঙ্গার ঘাটগুলিতেও তর্পণেচ্ছু মানুষের ভিড়। অন্যত্র যেখানে গঙ্গা নেই, সেখানে অন্য নদী, বা যেখানে কোনও নদীই নেই, সেখানে জলাশয় ইত্যাদিতে মানুষ ভিড় করেন তাঁদের পিতৃপুরুষকে জলদান করতে, স্মরণ করতে, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে। আজ সকাল থেকেই তেমনই চলছে। আর এই দিনটিকে আমরা 'মহালয়া' নামেই বরাবর চিনে এসেছি। মহালয়া আমাদের পুরাণ, ধর্ম, কাব্য-- সব কিছুতেই জড়িয়ে রয়েছে। এই সময়-পর্বে পিতৃলোকস্থিত পিতৃপুরুষের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য মর্ত্য থেকে তাঁদের উদ্দেশ্য়ে জল দান করা হয়।
কিন্তু কেন এই দিনটিকে 'মহালয়া' বলা হয়, এ নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে।
আরও পড়ুন: Durga Puja 2022: রবিবার মহালয়া! জেনে নিন কেন দিনটি এত বিশিষ্ট, কী এর তাৎপর্য...
সংক্ষেপে একটু ব্যাখ্যার চেষ্টা করা যাক। এদিনটিতে সারাদিন অমাবস্যা, সারাদিন পিতৃপক্ষ। এই পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, অমাবস্যা পেরিয়ে পরের দিন আসে বহু প্রতীক্ষিত দেবীপক্ষ। এ এক মহালগ্নের প্রারম্ভ বলে মনে করা হয়। দেবীপক্ষে দেবীর আরাধনা হয়, পূজা হয়। স্বয়ং দেবীই তখন সাধারণের কাছে এক মহান অবলম্বন, এক মহান আশ্রয় হিসেবে বিবেচিত হন। সেই মহান আশ্রয়ে এসে পৌঁছনোর বা সেই মহালগ্নে উত্তরণের সময়টির নাম তাই 'মহালয়া'।
'আলয়' মানে আবাস, আশ্রয়। একটি অর্থ অনুসারে এখানে আলয় তথা মহান আলয়টি হচ্ছে পিতৃলোক। অন্য মতে, তা নয়; মহান আলয় বলতে এখানে দেবীর আশ্রয় তথা দেবীর শরণ নেওয়ার বিষয়টিই বোঝানো হচ্ছে। আশ্বিন মাসে কৃষ্ণপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের সূচনায় যে অমাবস্যাকে তাকেই আমরা মহালয়া হিসেবে চিহ্নিত করে থাকি। দিনটি এক হিসেবে পিতৃপূজা ও মাতৃপূজার সন্ধিলগ্নও। একদিকে পিতৃপূজা, অন্যদিকে মাতৃপূজার মাধ্যমে এই লগ্নে আমরা আমাদের মানবজীবনকে মহান করে তুলতে চেষ্টা করি, তাই এই পূণ্যলগ্নটিকে 'মহালয়া' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পিতৃপক্ষ এবং পিতৃপক্ষের অবসানলগ্ন ভারতীয় জনজীবনে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তাৎপর্যপূর্ণ বঙ্গজীবনেও। কেননা, এই মহালয়া থেকেই মোটামুটি পুজোর আবহের শুরু বাংলায়। বাঙালির আবহমান সংস্কৃতিতে রেডিয়োতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের গলায় চণ্ডীপাঠ শোনার মধ্যে দিয়েই মনের ভিতরে পুজো-পুজো ভাবের শুরু। এ কথা এ লেখার শুরুতেই উল্লেখ করা হয়েছে। মহালয়া হল পিতৃপক্ষ ও দেবীপক্ষের সন্ধিদিন। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদ থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী অমাবস্যা র্পযন্ত (যা আশ্বিন মাসে পড়ে) সময় পিতৃপক্ষ। পুরাণমতে, ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ক'দিন মনুষ্যলোকের নিকটে আসেন। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করাই রীতি। লোকবিশ্বাস, এই সময়ে আত্মাদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাঁদের কাছে পৌঁছয়। এই বিশ্বাস থেকেই গোটা (পিতৃ)পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদের স্মরণ করা হয়, তর্পণ করা হয়। মর্ত্যে ১৫ দিন ধরে এই স্মরণ-তর্পণ করার জন্যই পাঠানো হয়েছিল কর্ণকে। যে-সময়কালের চূড়ান্ত দিন বা মহা লগ্ন হল মহালয়া। অনেকেই এই দিনটিকে দেবীপক্ষের সূচনা বলে থাকেন। মহালয়া পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা। সেই দিন থেকে কোজাগরী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিন হল দেবীপক্ষ। শাস্ত্রমতে, মহালয়া হল একটি অমাবস্যা তিথি, এ তিথিতে সাধারণত পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ-তর্পণ করা হয়। এ দিন তর্পণ করলে পিতৃপুরুষরা নরকযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পান বলে বিশ্বাস। তাঁরা এই প্রাপ্তিতে আমাদের আশীর্বাদও করেন। এছাড়া মহালয়ার দিনে অনেক জায়গায় দেবী দুর্গার বোধনও হয়। 'বোধন' অর্থে জাগরণ। মহালয়ার পরে দেবীপক্ষের তথা মাতৃপক্ষের তথা শুক্লপক্ষের প্রতিপদে ঘট বসিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার সুচনা করা হয়।