Durga Puja 2022: পরব || ছোটগল্প ||

মৃত্তিকা মুখোপাধ্যায়

Updated By: Sep 30, 2022, 09:36 PM IST
Durga Puja 2022: পরব || ছোটগল্প ||

পরব

মৃত্তিকা মুখোপাধ্যায়

 

রাখু ছিনিকে যখন পেয়েছিল দুজনে ভাব হতে দেরি হয়নি।দুজনে সারাদিন হুটোপুটি,নদীর ধারে মাঠটায় ছুটে ছুটে খেলা। বুকের মধ্যে চেপে ধরতো রাখু ছিনির ছোট্ট শরীরটা, পেটের নীচের গরমে হাত দিয়ে হেসে উঠতো খিলখিল করে। স্নানের বেলা মা বলত,ইসস তোর গায়ে কেমন ছাগল ছাগল বাস ছাড়ে রে। রাখু রাগ করতো। ছিনি কে ছাগল বললে তার বেজায় রাগ হতো!

দুজনেই বড়ো হলো আরো একটু। যত্নে যত্নে ছিনির রূপ ঝিলিক দিচ্ছিল।নধর শরীরে কালো চকচকে চামড়া, পুঁতির মত সুন্দর চোখ।কপালের কাছটায় গোল করে কিছুটা সাদা। ছিনিকে দেখতে সুন্দর।আর সে রাখুর মতই বেটাছেলে। রাখু বড়ো আদরে তোয়াজে রাখে। কচি দেখে কাঁঠাল পাতা জোগাড় করে আনে। গা পরিষ্কার করে দেয়। গলায় পিঠে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আদর করে।রাতে এমনকি তক্তপোষের তলায় সেঁদিয়ে থাকে ছিনি। রাখুর মা নাক সিঁটকে বলে, ম্যাগো! ছাগল নাদির গন্ধে টেকা দায়! 

বৈশাখে গ্রামে বড়ো মেলা। পরব। গাঁ ভেঙে পড়েছে। হরেক মজার পসরা। লাল ধুলো উড়ছে, ভিড় ঠেলে এগোলে দাঁত কিচকিচ করে। রাখুর ঘাড়ের কাছে একটু ফাটা সবুজ জামা, ছিনির গলায় নরম কাপড়ের পাড়। পকেটে একবার হাত বুলিয়ে দেখে নেয়। ভাঁড়ের ভিতর থেকে কায়দা করে খুঁচিয়ে বের করে আনা একটা কোঁচকানো নোট।কয়েকটা কয়েন। ছিনির জন্য লাল একটা নরম ফিতে কিনবে। গলায় ফুল করে বেঁধে দেবে ফেরবার সময়। জিলিপি খাবে।সে চারটে। ছিনি দুটো। আর কি কিনবে? আর কি কুলোবে? বাদাম ভাজা হবে কি খানিকটা?

বটগাছের নীচটাতে বছিরের দোকান। মাছি ভনভন করছে।আজ খুব ভিড়।হবেই। পরব দিন।লোকে ভালো মন্দ খাবেই। রাখু পা চালিয়ে আসছিল পেরিয়ে। পিছু ডাকলো।সে না তাকিয়েও জানে, বছির। এমন ডাকে।সে উত্তর না দিয়ে চলে যায়। আজও ডাকলো।পার্থক্য বলতে সামনে এসে দাঁড়ালো। কপালে ঘাম,গায়ে কেমন পশু পশু বোঁটকা গন্ধ। সাদা ময়লা জাল গেঞ্জি,কালো লুঙ্গি।লোকটাকে বাজে দেখতে,ভাবলো রাখু! লোকটা লাল লাল পানের ছোপ লাগা দাঁত দেখিয়ে হাসলো। ছিনির দিকে একবার তাকিয়ে হাতের আঙ্গুলগুলো খুলে তাকে কিছু ইশারা করলো। কিছু সংখ্যা। বড়ো মাপের সংখ্যা।

রাখু বাড়ি এসে তক্তপোষে শুয়ে পড়লো মুখ গুঁজে। মা ডাকলো,বললো ছিনি কই।সে উত্তর দিলো না।অনেকক্ষণ পর মুখ না তুলেই বললো ভিড়ের ধাক্কায় হাত থেকে শাড়ির পাড়টা ছুটে গেলো,পেলাম না কোত্থাও...

মা কি বলবে ভেবে না পেয়ে মাথায় একবার হাত বুলিয়ে উঠে গেলো। পস্টাপিস বাবুদের বাড়ি কুটুম এসেছে, দুপুরের এঁটো বাসনের পাঁজা মেজে না দিয়ে এলেই নয়। যাবার আগে বলে গেলো,

আগলটা দিয়ে দে বাবা।মেলা খেলার দিন।কে কখন কি ধান্দায় ঢুকে পড়ে! ভাতে জল দে রেখেছি। দুটো গালে দে,পিত্তি পড়বে উপোস দিলে। গোলা ঘর থেকে ফেরার সময় একবার মেলাতলাটা খুঁজে আসবোখন! 

সদর দরজায় আগল দিয়ে ছোটো একটা নিঃশ্বাস ফেলে পকেটে হাত দেয় রাখু।খচমচ শব্দ ওঠে।তার খিদে নেই। মেলার অস্থায়ী দোকান থেকে মোগলাই পরোটা,কষা মাংস কিনে খেয়েছে।উফফ কি ঝাল,গলা টাকরা জ্বলে গেছে যেন! তবু কি স্বাদ! চোখটা দু একবার জ্বালা জ্বালা করছিল শুধু। ওরম হয়! ওসব কিছু নয়! বড়ো রাস্তার মোড়ের হাল ফ্যাশনের বড়ো দোকানটা থেকে একটা জিনের প্যান্ট নেবে সে,লাল কালো ডোরা একটা চাইনিস শার্ট।" লোডশেডিং" রং একজোড়া ফিতে বাঁধা জুতো। মনে মনে দ্রুত হিসাব কষে। বাকি যা থাকে,আরো গোটা দুয়েক ছোটো ছোটো ছিনি বা ছিনির মতই কেউ এই পয়সায় কুলিয়ে... তাহলে সামনের বছর পরবে... 

রাখু চোখ বুজে নেয়। চোখের পাতায় লাল লাল পানের ছোপ লাগা দাঁতগুলো একবারটি ফুটে উঠেই মিলিয়ে যায়,আরো দুটো কালো পুঁতির মত চোখ_

 তাড়াতাড়ি চোখ খুলে ফেলেই আবার চোখটা বুজে নেয়। পকেটে হাত দিয়ে অনুভব করে শব্দটা, আবারও, খচমচ...

 

পড়ুন, বাঙালির প্রাণের উৎসবে আমার 'e' উৎসব। Zee ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল শারদসংখ্যা

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 

.