এই নাও সান্তা, গিফট

পড়বে কি পড়বে না করতে করতে ক্রিসমাসের আগেই মাস্টারস্ট্রোকটা দিয়ে দিল শীত। বেশ জাঁকিয়ে কলকাতায় আপাতত বাসা বেঁধেছেন তিনি। শীতের কামড়ে জুবুথুবু শহর বিকেল হলেই ক্রিসমাসের আঁচে চাঙ্গা। বছর শেষের সপ্তাহটা ছুটিতে ভরপুর। তাই আম জনতার মেজাজটাও এখন বেশ খাসা। এই বাড়ি-সেই বাড়ি, ওই ক্লাব-সেই ক্লাবে এখন চলছে ক্রিসমাস আর নতুন বছরের পিকনিক, পার্টি প্ল্যানিং। তার সঙ্গেই নিশ্চয়ই মন চাইছে কিছু হঠাৎ উপহারে কাছের মানুষজনদের বছরের শুরুটাকে আরও রঙিন করে তুলতে। এই কলিযুগে তো সান্তাক্লজ তাঁর বল্গা হরিণে টানা উড়ুক্কু স্লেজে চেপে উপহারের ঝুলি নিয়ে মোটেও আসবেন না।

Updated By: Dec 24, 2012, 09:39 PM IST

রায়া দেবনাথ
পড়বে কি পড়বে না করতে করতে ক্রিসমাসের আগেই মাস্টারস্ট্রোকটা দিয়ে দিল শীত। বেশ জাঁকিয়ে কলকাতায় আপাতত বাসা বেঁধেছেন তিনি। শীতের কামড়ে জুবুথুবু শহর বিকেল হলেই ক্রিসমাসের আঁচে চাঙ্গা। বছর শেষের সপ্তাহটা ছুটিতে ভরপুর। তাই আম জনতার মেজাজটাও এখন বেশ খাসা। এই বাড়ি-সেই বাড়ি, ওই ক্লাব-সেই ক্লাবে এখন চলছে ক্রিসমাস আর নতুন বছরের পিকনিক, পার্টি প্ল্যানিং। তার সঙ্গেই নিশ্চয়ই মন চাইছে কিছু হঠাৎ উপহারে কাছের মানুষজনদের বছরের শুরুটাকে আরও রঙিন করে তুলতে। এই কলিযুগে তো সান্তাক্লজ তাঁর বল্গা হরিণে টানা উড়ুক্কু স্লেজে চেপে উপহারের ঝুলি নিয়ে মোটেও আসবেন না। তাতে অবিশ্যি মনে মনে নিজেকে সান্তা ভাবতে কোনও অসুবিধা নেই। নাই বা থাকল সাদা দাড়ি, লাল জোব্বা, সঙ্গী এলফ। মন কি কারও পরোয়া করে? মাসের শেষের পকেট যদিও বেশ হালকা, কিন্তু মন যখন খুশ পকেটের সঙ্গেও সমঝোতাটা ঠিক হয়েই যাবে। তা সেই সমঝোতা চুক্তির পথে আমাদেরও কিছু অবদান না হয় থাক। ক্রিসমাসের নতুন পাতায় তাই রইল কিছু পকেট ফ্রেন্ডলি উপহারের সুলুক সন্ধান।

ক্রিসমাসে বাচ্চাদের ইচ্ছার ঝুলি পূর্ণ না করে সান্তাক্লস মোটেও হওয়া যায় না। চকলেট, পেন, পোশাক-আশাক, পুতুল তো অনেক হল, তার চেয়ে বরং এবার আপনার ছোট্ট ছেলে মেয়ে বা ভাই বোনদের জন্য ২৪ এর গভীর রাতে খুলে দিন বইয়ের জগতের সেই আশ্চর্য দরজাটা। পরিচয় করিয়ে দিন রোয়াল ডাল বা এনিড ব্লাইটন, রাউলিংয়ের সঙ্গে। মাটিল্ডা, চার্লি, ফেমাস ফাইভ, হ্যারি পটাররা আপনার আশেপাশের কচিকাঁচাদের জগতটা রঙিন করে তুলবেই। তার সঙ্গেই না হয় তাদের আলাপ করিয়ে দিন বাংলার শিশু সাহিত্যের সেই অগাধ ভাণ্ডারটার। একটা সুকুমার রচনাবলী বদলে দিতে পারে পুঁচকিদের গোটা দুনিয়াটাই। অবন ঠাকুরের বুড়ো আংলা, ক্ষীরের পুতুল বা গগনেন্দ্র নাথ ঠাকুরের ভোঁদড় বাহাদুরকে ভুল করেও ভুলে যাবেন না। আপনার পার্শ্ববর্তী ছোট জনগণ যদি তাদের পুঁচকিয়ানা কাটিয়ে কৈশোরের দোরগোড়ায় কড়া নাড়ায় তাহলে তাদের জন্য অবশ্যই মজুত রাখুন চাঁদের পাহাড়, ভোম্বল সর্দার, নালক বা রাজকাহিনী, টংলিং বা বাতাসবাড়ি। শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজকেও পিছিয়ে রাখবেন না। তার সঙ্গে `আইসিং অন দ্য টপ` হবে যদি দিতে জুড়ে দিতে পারেন টেনিদা বা ফেলুদাকে। গল্পের বইয়ের সঙ্গে সঙ্গে কমিকস কিন্তু উপহারের লাইনে বেশ উপরের দিকেই থাকবে। টিনটিন, অ্যাসটেরিক্সতো অলওয়েজ ইন। এর সঙ্গেই যোগ করুন নারায়ণ দেবনাথের নামটাও। একবার নিজের ছোটবেলার দিকে ফিরে তাকান। ভাবুন তো হাঁদা-ভোঁদা, বাঁটুল, কেল্টুদা, নন্টে-ফন্টে, সুপারিনটেনডেন্ট ছাড়া সত্যিই ঠিক কতটা অপূর্ণ থাকত আমাদের শৈশব। তাই পরের প্রজন্মকে সেই সোনালি দিনগুলোর স্বাদ দিতে এমন সুযোগ যেন মিস করবেন না।

ক্রিসমাস, কাঁপাকাঁপি ঠান্ডা, আর নতুন বছরের সঙ্গে প্রেম শব্দটাও কেমন যেন হেলতে দুলতে চলেই আসে। বচ্ছর ভর ঝগড়া ঝাটি, মান-অভিমান চুলোয় যাক। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে পার্ক স্ট্রিটের ফুটে, এখন শুধু হাত ধরে ঘোরাঘুরি। লাল গোলাপতো সবাই দেয়। এবারে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে উপহার দিন এক গোছা হলুদ গোলাপ। বাজি রাখছি প্রেম মিটার চড়চড় করে উর্দ্ধমুখী হবেই। একটা লাল স্কার্ফ বদলে দিতে পারে খামখেয়ালি মেজাজ। অথবা তার হাতে ধরিয়ে দিন এক ব্যাগ শ্রীজাত। কিঞ্চিত ন্যাকা প্রেমে যাঁদের অগাধ আস্থা তাদের কাছে সেসেলিয়া অ্যানহার্মের জবাব নেই। সারা বছর যদি আপনার প্রেমিক প্রবর-বা প্রেমিকা সুন্দরী নিজেকে দায়িত্ব নিয়ে লেট চূড়ামনি প্রমাণ করে থাকেন, তাহলে নতুন বছরের আগে তাকে অবশ্যই উপহার দিন একটা ঘড়ি। পরের বছর অন্তত আপনার দেওয়া টিকটিক মহাশয়ের উপস্থিতি তাকে একটু নিয়মানুবর্তিতা শেখালেও শেখাতে পারে। সাজুগুজুর সরঞ্জাম, পারফিউম, জামা-কাপড়তো দিতেই পারেন। শুধু মনে রাখবেন। এসব ক্ষেত্রে লাল রঙটার দিকে কিঞ্চিৎ পক্ষপাতিত্ব করবেন। তার সঙ্গেই আপনাদের সারা বছরের টুকরো মুহূর্তের যে ছবি এখনও আপনার মোবাইল বা ডিজি ক্যামে বন্দী হয়ে আছে তাদেরকে বাছাই করে ছাপিয়ে ফেলুন। তৈরি করুন ছোট্ট একটা অ্যালবাম। দেখবেন এই এক অ্যালবাম আপনার আসছে বছরকে স্পেশাল করে তুলবেই।
পরিবার বা বন্ধু বান্ধবদের জন্য উপহার দিন কোনও প্রিয় সিনেমা বা থিয়েটারের টিকিট। তাদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা মারুন। খেতে যান রেঁস্তোরাতে। সারা বছর আপনার চরম কর্মব্যাস্ততা আপনার খুব কাছের মানুষদের মনে কিছু অবুঝ শূন্যতা তৈরি করে। তাদের সঙ্গে এই বারের ক্রিসমাসের ছুটির বেশ কিছুটা সময় কাটান। মনে রাখবেন আপনার উপস্থিতি, সময়, মনযোগ বড় আহ্লাদের উপহার হতে পারে বেশ কিছু মানুষের কাছে।

.