আছি...
লেখনীর আঁচড়ে মধ্যবিত্ত জীবন আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। তাঁর লেখায় প্রতিমুহূর্তে যেন নিজেরই মুখোমুখি হত আটপৌরে বাঙালি। সমসাময়িক নাগরিক জীবনকে সাহিত্যে এমন সহজভাবে মেলে ধরেই আমজনতার মন কেড়েছিলেন তিনি। হঠাত্ই চলে গেলেন বাঙালির সেই কাছের মানুষ।
ওয়েব ডেস্ক: লেখনীর আঁচড়ে মধ্যবিত্ত জীবন আর সম্পর্কের টানাপোড়েনের নিখুঁত ছবি ফুটিয়ে তুলতেন তিনি। তাঁর লেখায় প্রতিমুহূর্তে যেন নিজেরই মুখোমুখি হত আটপৌরে বাঙালি। সমসাময়িক নাগরিক জীবনকে সাহিত্যে এমন সহজভাবে মেলে ধরেই আমজনতার মন কেড়েছিলেন তিনি। হঠাত্ই চলে গেলেন বাঙালির সেই কাছের মানুষ।
বাঙালির কাছের মানুষ হয়ে ওঠা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের জন্ম প্রবাসে। বিহারের ভাগলপুরে ১৯৫০ এর ১০ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাংলা সাহিত্যের আর এক মহান কথাশিল্পী বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুলের কর্মভূমি ভাগলপুরের মেয়ে সুচিত্রার ছোট থেকেই লেখালিখির ঝোঁক ছিল। কলকাতায় যোগমায়াদেবী দেবী কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার সময়েও লেখালিখি সমানে চালিয়ে গিয়েছেন। পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছেন। আর সেইসব বিচিত্র দিনের অভিজ্ঞতাই উজাড় করে দিয়েছেন ৭০ দশকে লেখা তাঁর বহু ছোটগল্পে। ৮০ দশকের মাঝামাঝি উপন্যাস লেখা শুরু করেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই প্রকাশিত হয় তাঁর অনবদ্য রচনা 'কাচের দেওয়াল'। এই উপন্যাসেই বাঙালির মন জয় করে নেন তিনি। এরপর সহজ ভাষায় লেখা একের পর এক কাহিনিতে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কলমে উঠে এসেছে বাঙালির একদিন প্রতিদিন। ছেঁড়া তার, নীল ঘূর্ণি, জলছবি, অন্য বসন্ত, কাছের মানুষের মতো একের পর এক উপন্যাসের হাত ধরে ক্রমেই তিনি হয়ে ওঠেন আমজনতার একান্ত আপন।
১৯৯৭-এ সুচিত্রা ভট্টাচার্যের কাহিনি অবলম্বনে ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবি দহন আজও বাংলা সিনেমার এক মাইলস্টোন। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। সহজ ভাষায় একেবারে জীবন থেকে নেওয়া ঘটনায় সাজানো সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাস বারবার চলচ্চিত্র পরিচালকদের নজর কেড়েছে। তৈরি হয়েছে ইচ্ছের মতো মনে দাগ কাটা ছায়াছবি। হেমন্তের পাখিতে সেলুলয়েডে ধরা পড়েছে সুচিত্রার আর এক মনন। আবার তাঁরই কাহিনি অবলম্বনে তৈরি হয়েছে টলি লাইটস বা অলীক সুখের মতো মনকে নাড়িয়ে দেওয়া ছায়াছবি।
তারাশঙ্কর পুরস্কার, শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন সুচিত্রা ভট্টাচার্য। ছোটদের জন্য তাঁর ভিন্ন স্বাদের লেখাও বিপুল জনপ্রিয় হয়েছে। কচিকাঁচাদের মন কেড়েছে তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি মিতিন মাসির ধারাহাহিক কাহিনি।লেখা পেয়েছেন পাঠকের উজাড় করা ভালবাসা। সমসাময়িক নানা ঘটনায় প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বারবার। আবার সমসাময়িক জটিল জীবনের আবর্তে সাধারণ মানুষের অসহায় আত্মসমর্পণের ছবিও পরম যত্নে ফুটিয়ে তুলেছেন নিজের লেখায়। আমজনতার রোজনামচা নিটোল কাহিনিতে বুনে কখন যেন বাঙালির একেবারে হেঁসেলে ঢুকে পড়েছিলেন একালের এই কথাশিল্পী। গুণমুগ্ধ সেই পাঠকদের ফাঁকি দিয়ে হঠাত্ই চিরবিদায় নিলেন তিনি।