পিয়ালি মিত্র: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করল পুলিস। শুক্রবার ম্যারাথন জেরার পর তাদের গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে রয়েছে এক বর্তমান পড়ুয়া ও ২ জন প্রাক্তণী। ধৃতরা হল নাসিম আখতার, হিমাংশু কর্মকার ও সত্যব্রত রাই। সবেমিলিয়ে এখনওপর্যন্ত ওই ঘটনায় মোট ১২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিস। এদিকে, পুলিস সূত্রে খবর, ঘটনার পুনর্নির্মাণে চরম অসহযোগিতা করছে ধৃতরা। বিভ্রান্তিকর বর্ণনা দিয়ে পুলিসকে বিপথে চালিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন-স্বরূপনগর ও পেট্রাপোল থেকে উদ্ধার ১৩ সিমবক্স, বিপুল সংখ্যাক সিমকার্ড-রাউটার
গতকাল ধৃত ৫ জনকে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্ণির্মাণ করার চেষ্টা হয়। কিন্তু তাতে বিপাকে পড়তে হয় পুলিসকে। অভিযোগ, বিভ্রান্তিকর বয়ান দিচ্ছে ধৃতরা। কারণ ধৃতরা যে বয়ান দিয়েছিল তার সঙ্গে ঘটনাস্থলে দেওয়া তাদের বয়ানের কোনও মিল নেই। এক জনের সঙ্গে অন্যজনের বয়ানের কোনও মিল নেই। তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, অত্যন্ত সুচতুরভাবে ওই কাজটি করছে অভিযুক্তরা যাতে তদন্তের অভিমুখ ঘুরিয়ে দেওয়া যায়।
পুলিস সূত্রে খবর, ঘটনার পুনর্নির্মাণে শুধু অসহযোগিতাই নয় জেরাতেও অসহযোগিতার করছে ধৃতরা। গ্রেফতার করার আগে ধৃতরা যে বয়ান দিচ্ছিল সেই একই বয়ান তারা এখন দিচ্ছে। মনে করা হচ্ছে জিবি মিটিয়ে যা ঠিক হয়েছিল সেটাই তারা এখন বলছে। উল্লেখ্য়, যে রাতে মেইন হোস্টেলের তিনতলা থেকে ওই ছাত্র পড়ে যায় সেই রাতেই জিবি মিটিংয়ে বসেছিল পড়ুয়ারা। মনে করা হচ্ছে সেই মিটিংয়ে তৈরি করা বয়ানই এখন বলছে ধৃতরা।
এদিকে ওই ছাত্রের মৃত্যুর তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। শুধু মানসিক নির্যাতনের “টার্গেট” নয়, স্বপ্নদীপকে রাজনৈতিক লড়াইয়ের 'বোড়ে' করতে চেয়েছিল অভিযুক্তরা! হস্টেলের ঘর থেকে উদ্ধার ডায়েরির মধ্যে থাকা চিঠি থেকে মিলেছে তেমনই ইঙ্গিত। বাংলা বিভাগের এক ছাত্র নেতার বিরুদ্ধে ডিনকে লেখা হয় সেই চিঠি। বাংলা বিভাগে অন্য রাজনৈতিক সংগঠনের প্রভাব রয়েছে। সেই প্রভাবই ভাঙতে মরিয়া ছিল সৌরভ চৌধুরী-সহ অভিযুক্তরা।
বাংলা বিভাগের পডুয়া ওই ছাত্রকে গেস্ট হিসাবে হস্টেলের থাকার ব্যবস্থা করার পরই ছক কষা হয়। ঘটনার দিন ওই ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে ডিনকে চিঠি লেখার জন্য চাপ দিতে শুরু করে অভিযুক্তরা। কিন্তু কিছুতেই সেই চিঠি লিখতে রাজি ছিল না ওই ছাত্র। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে সে চিঠি লিখতে রাজি না হলে, পরে দীপশেখর সেই চিঠি লেখে। যে চিঠির নীচে ওই ছাত্রের নামে সই রয়েছে। তাঁকে দিয়ে জোর করে সেই সই করানো হয়। এমনটাই অনুমান তদন্তকারীদের। যদিও সইটা সত্যি-ই মৃত ছাত্র-ই করেছিল নাকি অন্য কেউ তার সইটাও নকল করে, সেটাও দেখা হচ্ছে।
যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যু ঘটনায় তোলপাড় একাধিক মহল। কড়া পদক্ষেপ করেছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। সুপ্রিম কোর্ট এবং ইউজিসি-র নিয়ম মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে শিশু সুরক্ষা কমিশন। প্রথম বর্ষের পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে শোকজ করেছিল শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন। সেই শোকজের উত্তরও দিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই জবাবে অখুশি শিশু সুরক্ষা কমিশন। ফের উত্তর দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। ওদিকে এই ঘটনায় রিপোর্ট তলব করে ইউজিসি-ও। প্রথম দফার রিপোর্ট সন্তোষজনক নয় বলে মত ইউজিসি-র। ইউজিসি-র তরফে ফের চিঠি পাঠানো হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। র্যাগিং ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, ১২টি পয়েন্টে তার তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে ইউজিসি।
যাদবপুরের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনার পুনর্নির্মাণে চরম অসহযোগিতা, পুলিসকে বিপথে চালানোর চেষ্টা করছে ধৃতরা!