বিধানসভায় বাম ও কংগ্রেস বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে প্রণব

তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় রাজ্য কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এই বার্তাই দিলেন কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল যেভাবে প্রতি পদে তাঁদেরকে অবজ্ঞা করছে, তাতে ওই দলের সঙ্গে থাকা চরম লজ্জার।

Updated By: Jul 9, 2012, 10:52 AM IST

তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায় রাজ্য কংগ্রেস। রাষ্ট্রপতির পদপ্রার্থী প্রণব মুখোপাধ্যায়কে এই বার্তাই দিলেন কংগ্রেসের সাংসদ-বিধায়করা। তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূল যেভাবে প্রতি পদে তাঁদেরকে অবজ্ঞা করছে, তাতে ওই দলের সঙ্গে থাকা চরম লজ্জার। বিধানসভায় প্রণব মুখোপাধ্যায় এসেছিলেন সমর্থনকারী বাম বিধায়ক এবং কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠক করতে। কংগ্রেসের সঙ্গে বৈঠকের নির্ধারিত বৈঠকের সময় ছিল মিনিট কুড়ি।  কিন্তু বৈঠক চলল এক ঘণ্টা পনেরো মিনিটেরও বেশি।
 
শুধু দুই সাংসদই নন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই অবস্থানে গলা মিলিয়েছেন সব বিধায়করাই। তৃণমূলের কাছ থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সমর্থনের আশা এখনও ছাড়েননি কংগ্রেসের কোনও কোনও মহল। কিন্তু তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে একলা চলার প্রস্তুতি যে তাঁরা নিয়েই ফেলেছেন তা গোপন করেননি তাঁরা। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজি থাকলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে রাজি বলেও বৈঠকের পর জানিয়েছেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, একটি শরিক বাদে ইউপিএ-র সমস্ত দল তাঁকে সমর্থন করেছে। এনডিএ-র বেশ কিছু দল ও বিভিন্ন প্রান্তিক দলের সমর্থনও পেয়েছেন। প্রণব মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস এখনও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের পরিস্থিতি তিনি বোঝেন। সোমবার বিকেলেই দিল্লি ফিরে যান প্রণববাবু। 
সোমবার বিধানসভা ভবনে দুই বাম দলের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে করেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ জোটের প্রার্থী প্রণব মুখার্জি। সিপিআইএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনা সেরে কংগ্রেস পরিষদীয় দলের সঙ্গে পৃথকভাবে বৈঠকে বসেন তিনি। সিপিআইএম এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের তরফে রাইসিনা হিলের লড়াইয়ে সদ্য-প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও বামফ্রন্টের অন্য দুই দল সিপিআই এবং আরএসপি ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইতিমধ্যেই। রাষ্ট্রপতি ভোটে অংশগ্রহমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি কংগ্রেসের জোটশরিক তৃণমূলও। বৈঠক শেষে প্রণববাবু জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তাঁকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে যে সমস্ত দল এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি তাদের কাছে ফের চিঠি দিয়ে নতুন করে আবেদন জানাবেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি ভোটের জন্য দেশজুড়ে প্রচারে বেরিয়ে রবিবার কলকাতায় আসেন প্রণববাবু। প্রোটোকল মেনে সকালে কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব প্রণববাবুর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে যান। প্রণববাবুকে সঙ্গে নিয়ে বিধানসভা পৌঁছন তিনি। সকাল ১০ টা নাগাদ বিধানসভা ভবনে সিপিআইএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন কীর্ণাহারের প্রবীণ নেতা। তবে বাম এবং কংগ্রেসের বিধায়কদের সঙ্গে বৈঠক করলেও প্রণব মুখার্জি সোমবার পশ্চিমবঙ্গ ছাড়ার আগে ইউপিএ জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিকদল তৃণমূলের নেতৃত্বের সঙ্গে সম্ভবত কথা বলবেন না।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পরই বোন সম্বোধনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন চেয়েছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। তারপর বহুবার নাম না করে তৃণমূলকে পাশে চেয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারাও প্রণববাবুর পক্ষে তৃণমূলের সমর্থনের বিষয়ে আশাপ্রকাশ করেছেন। তৃণমূল হয়ত সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারে, রাজনৈতিক মহলে যখন এই ধরণের জল্পনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছিল তখনই গোটা বিষয়টি অন্য দিকে মোড় নেয়।
গত বৃহস্পতিবার, প্রণববাবু হয়ে সমর্থন চাইতে মহাকরণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল। সেই দৌত্য ব্যর্থ হওয়ার পর কলকাতায় সাংবাদিক বৈঠকে সিব্বলকে পাশে নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, তৃণমূলকে ছাড়াই প্রণববাবুর পক্ষে ৬৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করে ফেলেছেন তাঁরা। এর পরই বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাল্টা জবাব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুরু হয়ে যায় কেন্দ্র-রাজ্য বাগযুদ্ধ। কংগ্রেস ও তৃণমূলের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটে।
এই পরিস্থিতিতেই রবিবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রচারে কলকাতায় সাংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূল সম্পর্কে কোনও কথা বলেননি ইউপিএ জোটের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী। প্রণববাবুর এই নীরবতাকে জোট শরিকের প্রতি উপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে দুই শরিকের মধ্যে সমীকরণে কোনও বদল হয় কিনা এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
 

.